মোবাইল ফোনের সিংহভাগই তৈরি হচ্ছে দেশে: টিপু মুনশি

দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 06:41 PM
Updated : 26 Jan 2023, 06:41 PM

মোবাইল ফোন তৈরিতে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ খাতে বিদেশ নির্ভরতা কমানোর পক্ষে তার মত দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “মোবাইল ফোন সেটের সিংহভাগ এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার মোবাইল সেক্টরকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করেছে। তারপরও বিদেশ থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে মোবাইল ফোন সেট প্রবেশ করছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”

বৃহস্পতিবার ঢাকার শেরে বাংলা নগরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’য় এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

টিপু মুনশি বলেন, “মোবাইল সেট উৎপাদনের ব্র্যান্ডিং ও সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়া দরকার। সরকার মোবাইল ফোনসেট সহজলভ্য করার জন্য দেশের ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফোন তৈরির লাইসেন্স দিয়েছে। অনেক দক্ষ জনবল এগুলোতে কাজ করছে।

“উন্নতমানের মোবাইল ফোন তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। আমাদের প্রযুক্তি আছে, সফটওয়্যার আছে, দক্ষ জনবল আছে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো প্রয়োজনে উদ্যোক্তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসলে সবসময় দ্বার উন্মুক্ত থাকবে।”

ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে দেশের সক্ষমতা তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশে ইলেক্ট্রনিকস পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে এগুলো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে আমাদের তৈরি পোশাক খাত বর্তমান অবস্থানে এসেছে। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আইসিটি সেক্টরও আমাদের খুবই সম্ভাবনাময় খাত।”

‘মোবাইল রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেও’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ফেয়ার গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে নিবন্ধিত ১৪টি কোম্পানি মোট তিন কোটি ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন করেছে বলে তুলে ধরেন। সরকারি নীতি সহায়তার কারণে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি হয়নি বললেই তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের চাহিদার শতভাগ পূরণ করে কিছু হ্যান্ডসেট বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ওয়ালটন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হ্যান্ডসেট রপ্তানি করেছে, সিম্ফোনি নেপালে হ্যান্ডসেট রপ্তানি করেছে।”

দেশে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন সুবিধা দিয়ে ২০১৭ সালে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নীতিমালা করে সরকার। এ নীতিমালায় আমদানি করা হ্যান্ডসেটের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পর দেশি-বিদেশি ১৪টি ব্র্যান্ড ও কোম্পানি কারখানা স্থাপনের লাইসেন্স নেয়।

এরপর স্যামস্যাং, ওয়ালটন, নকিয়া, সিম্ফোনি, শাওমি, অপো, ভিভোসহ অন্যান্য ব্র্যান্ড দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু করে।

মেসবাহ উদ্দিন জানান, দেশে এ খাতে এখন পর্যন্ত দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ হাজার মানুষের।

সেমিনারে জানানো হয়, ২০১৭-১৮ সালে স্যামস্যাং ব্র্যান্ডের জন্য ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স এবং ওয়ালটন ব্র্যান্ডের জন্য ওয়ালটন ডিজি-টেক বিটিআরসির সনদ পায়। পরের বছর ভিভো ব্র্যান্ডের জন্য বেস্টটাইকুন, সিম্ফোনির জন্য এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজ, উইনস্টার ও টাইটানিক এর জন্য আনিরা ইন্টারন্যাশনাল, আইটেল, টেকনো ও ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের জন্য কার্লকেয়ার টেকনোলজি বিটিআরসির সনদ নেয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে অপো ও রিয়েলমি ব্র্যান্ডের জন্য বেনলি ইলেক্ট্রনিক্স; লাভা ও ম্যাক্সিমাসের জন্য বিটিআরসির সনদ গ্রহণ করে গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন। পরের বছরে নোকিয়া ফোন উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স নেয় ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার।

সর্বশেষ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মাইসেল এর জন্য মাইসেল টেকনোলজি, শাওমি এর জন্য ডিবিজি টেকনোলজি; লিনেক্স, বেঙ্গল ও মারলাক্স এর জন্য লিনেক্স টেকনোলজি লাইসেন্স গ্রহণ করে।

এত সংখ্যক ব্র্যান্ড ও কোম্পানি মোবাইল উৎপাদনে হাত দেওয়ায় তা এ খাতের টেকসই উন্নতির জন্য হুমকি হতে পারে বলে সতর্ক করেন এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহিদ।

এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “সরকার বিষয়টি আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করবে। এরপর এই খাতের শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজনে কোনো নীতিমালা গ্রহণ করবে।”

সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের ৩৬ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। গত এক বছর ধরে চাহিদার ৯৭ শতাংশই দেশি কারখানা থেকে পূরণ হচ্ছে।

ফ্রিজের বাজারে দেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি স্যামস্যাং, এলজি, ইকো-বাটারফ্লাই, সিঙ্গার, ওয়ারপুলের মত বিদেশি ব্র্যান্ডও উৎপাদন বা সংযোজন শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক উপাচার্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারির সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন রিভ গ্রুপের সিইও এম রেজাউল হাসান ও ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক আজিজুল হাকিম।