সরকারের চিঠি পেয়ে আদালতে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো। কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে। এখন অনুমোদন বাতিল হলে বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন হবে।
Published : 29 Nov 2024, 01:27 AM
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর আওতায় ৩৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার, যার ৩৪টিতে সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল, বাকি পাঁচটি ছিল গ্যাসভিত্তিক।
যে আইনের সুযোগে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেই আইনটিও বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। এ আইনের দুটি ধারা ইতোমধ্যে আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে।
৩৪টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৬৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার পরিকল্পনা ছিল; যার পেছনে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসবে বলে হিসাব করা হচ্ছিল। বাকি ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসভিত্তিক, সেগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা কত, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর সব ধরনের সরকারি প্রকল্প প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসাবে চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে প্রতিযোগিতামূলক দামের অধীনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে লেটার অব ইনটেন্ড বা এলওআই সনদ পাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রক্রিয়া বাতিলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তবে সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাচ্ছে এলওআই পাওয়া কোম্পানিগুলো। এরই মধ্যে ১১টি রিট আবেদন জমা পড়ার বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নিশ্চিত হতে পেরেছে।
রিট আবেদন করা একটি কোম্পানির আইনজীবী বলেছেন, তারা মনে করেন, এরই মধ্যে যেসব চুক্তি হয়ে গেছে, সেগুলো বাতিল করা উচিত হবে না। এর কারণ, কোম্পানিগুলো প্রাথমিক অনুমোদনপত্র পাওয়ার পর এরই মধ্যে বেশ কিছু খরচ করে ফেলেছে। আর এভাবে প্রকল্প বাতিল করলে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন হবে।
গত ১৮ নভেম্বর কোরিয়ার দিহান গ্রিন এনার্জি ও বাংলাদেশের পাবনা সোলার পাওয়ার লিমিটেডের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে পাঠানো একটি চিঠি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, কোম্পানির অনুকূলে ইস্যু করা এলওআই সশ্লিষ্ট কার্যক্রম উপরোক্ত [বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০] আইনের পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র পদ্ধতিতে পক্রিয়াকরণের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
এলওআই বাতিলের কথা জানিয়ে আরও অন্তত ১১টি কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে: জুলস পাওয়ারের কক্সবাজার ৫০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট, রিনিউয়েবল এনার্জি ইউকে, বাদল কনস্ট্রাকশন ও জি-টেক সলুশনের বাসাইল টাঙ্গাইল ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট, চায়না ডেটং ওভারসিজ ইনভেস্টমেন্ট ও এনগ্রিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গোয়ালন্দ, রাজবাড়ীর ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট, হংকংয়ের জেটি নিউ এনার্জি কোম্পানির চকরিয়া ২২০ মেগাওয়াট উইন্ড পাওয়ার প্রজেক্ট।
সাতক্ষীরায় সাসটেইনেবল এনার্জি ইন্টারন্যাশনালের ১০০ মেগাওয়াট উইন্ড প্রজেক্ট, ময়মনসিংহে ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশন, শিজি ক্লিন এনার্জি ইক্যুইপমেন্ট ও ক্যাসিওপিয়া এপারেলসের ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট, নীলফামারীতে এএসকে নিওএনার্জি, এজে পাওয়ার ও এটিএন সল্যুশনের যৌথ কনসোর্টিয়ামের ৫০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট, দিনাজপুরে গ্রিন প্রোগ্রেস রিনিওয়েবল ও আইআরবি অ্যাসোসিয়েটসের কনসোর্টিয়ামে ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্টও বাতিল হতে যাচ্ছে।
আরও আছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এনার্গন রিনিউয়েবলস ও পিডব্লিউআর অ্যাসোসিয়েটসের ২৪০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একই কোম্পানির ১৩০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট এবং খুলনার রূপসায় একই কোম্পানির ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আইপিপি ইউনিটের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম জিয়াউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিঠি দেওয়ার আগে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরাসারি কথা বলেছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টাসহ পিবিডির শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। চিঠিতে প্রকল্প বাতিলের কথা সরাসরি বলা হয়নি। তবে বর্তমান সরকার প্রতিযোগিতাহীন প্রক্রিয়ায় নেওয়া এসব উদ্যোগ থেকে সরে আসবে বলেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাকি কাজগুলো আলোচনা সাপেক্ষে এগোবে।”
আদালতে যাচ্ছে কোম্পানি
এলওআই বাতিলের বিষয়ে চিঠি পেয়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানি পিডিবিকে পাল্টা উকিল নোটিস পাঠিয়েছে। আদালতেও যাচ্ছে তারা।
এমনই একটি কোম্পানি হচ্ছে কক্সবাজারে ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এলওআই সনদ দেওয়া জুলস পাওয়ার লিমিটেড।
এই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ১৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছি। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছিল। এর মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত এল।”
কোম্পানির আইনজীবী আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মন বলেন, “সরকার মনে করলে ২০১০ সালের একটা আইন আর প্রয়োগ নাও করতে পারে। কিন্তু সেই আইনের অধীনে যে চুক্তিগুলো হয়ে গেছে, সেগুলো বাতিল করাটা সরকারের ক্ষমতার বাইরে।
“সরকার নীতি সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা ভবিষ্যতে প্রয়োগের পথে না হেঁটে অতীতে প্রয়োগের পথে হাঁটছে। ২০১০ সালের ওই আইনের দুটি ধারা বাতিল করে হাই কোর্টের একটা রায়ের আলোকে সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু রায়ের লিখিত কপি এখনও প্রকাশই হয়নি।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে এবং প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতি চালু করতে সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। যাদের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে তারা চাইলে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রকল্প সচল রাখতে পারেন। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এখন উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া এই ধরনের প্রকল্প আর হাতে নেওয়া হবে না।“
এলওআই কী
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে এলওআই হচ্ছে খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের চুক্তি। এরপরে আরও কয়েকটি সনদ গ্রহণ ও একাধিক বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণ হয়।
সবশেষ গত ২ জুন খুলনার রূপসায় ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এনার্গন রিনিউয়েবল ও পিডিব্লিউআর নামের একটি কনসোর্টিয়ামকে দেওয়া এলওআই সনদে দেখা যায়, এলওআই সনদ নেওয়ার পর নির্ধারিত তারিখে কোম্পানি সরকার, পিজিসিবি ও বিপিডিবির সঙ্গে ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট ও পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট নামে দুটি চুক্তি করতে হবে। অন্যথায় বিপিডিবি এলওআই চুক্তি বাতিল করতে পারবে।
পিডিবির নোটিস পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কোম্পানি পিএ বা প্রজেক্ট এগ্রিমেন্ট করতে ব্যর্থ হলেও এলওআই বাতিল করা যাবে।
চুক্তি বাতিলের ৮ নম্বর ধারায় বলা আছে, পিডিবি যদি কোনো শর্তভঙ্গে কারণে চুক্তিবাতিল করে সেক্ষেত্রে কোম্পানি বা এর কোনো শেয়ারহোল্ডার পিডিবি বা সরকারের কোনো সংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না।
বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে?
বিদ্যুৎখাতে প্রতিযোগিতাহীন প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের আওতায় যেই প্রকল্পে হয়ে গেছে সেটাও আমরা বাতিল করার পক্ষে। সেখানে যেসব ‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে বাতিল করতে হবে। যারা এতদিন ‘বাড়তি পয়সা’ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তবে বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জিটেক্স সোলারের স্বত্ত্বাধিকারি মোস্তফা মাহমুদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্তে বিদ্যুৎ খাতে সংকট তৈরি হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির চলমান প্রকল্পগুলো বাতিল করে ক্রাইসিস আরও বাড়ানো হয়েছে। আমরা আরও পাঁচ বছর পিছিয়ে গেলাম কি না এটা আমাদের প্রশ্ন।
“যেই প্রজেক্টগুলো ইতোমধ্যে ছিল সেগুলো বিবেচনা করা দরকার। গোয়ার্তুমির সুযোগ নেই। ন্যূনতম রিভিউ করে কীভাবে প্রকল্প আগানো যায় সেই পথ খুঁজে বের করা দরকার।”
এলওআই পেয়ে কোম্পানিগুলো ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এগুলো নিয়ে আবার দরপত্র আহ্বান তো হাস্যকর ব্যাপার। কেউ যদি দামের ক্ষেত্রে অন্যায় করে থাকে তার শাস্তি হোক। কিন্তু একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী শাস্তি পাবে, এটা কোন ধরনের কথা?
“জটিলতার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। উনারা কোনোভাবে যোগাযোগ করছেন না। তো পুরো ব্যাপারটা একটা জটিলতার মধ্যে পড়েছে।”
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকনোমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর লিড অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্পগুলো সরকার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে করবে; দাম কমানোটাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। তবে এখানে অনেক জটিলতা আছে।
“যারা বাস্তবায়ন শুরু করেছে সেগুলো এখন বাদ দিলেও ক্ষতি হবে। সেখানে যাদের বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তো আস্থা হারাবে। তাই যেগুলো অ্যাডভান্সড স্টেজে আছে সেখানে নেগোশিয়েশনে যেতে হতে পারে। যেখানে কাজ শুরু হয়নি সেখানে রিভিউ করা যেতে পারে। সর্বোপরি আলোচনার মাধ্যমে কেইস টু কেইস ভিত্তিতে সমাধান করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কাজগুলো তাড়াতাড়ি করতে হবে।”
আনসলিসিটেড প্রক্রিয়ায় দরপত্র এড়িয়ে গ্রহণ করা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনায় ইতোমধ্যে একটি কমিটি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সেই কমিটির একজন কর্মকর্তা জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেক্ষত্রে কিছু কর মওকুফের বিষয় রয়েছে যা অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম আবার সৌর বিদ্যুতের বড় প্রকল্পের বিরোধী। তিনি বলেন, “আমরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও রুফটপ সোলারের কথা বলছি। জমিও রক্ষা পাবে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীও পাওয়া যাবে।”
সেই আইনের দুই ধারা ‘অবৈধ’
২০০৯ সালে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে দায়িত্ব নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়। দরপত্র প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোকে কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ জন্য ২০১০ সালে একটি আইনও করা হয়, যে আইনের কারণে এই প্রকল্প অনুমোদনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার পথ রুদ্ধ ছিল। সেই সুযোগ বাতিলের ফলে এখন অনুমোদন পাওয়া যে কোনো প্রকল্পকেই আদালতে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব।
১৫ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক অগ্রগতি হলেও দরপত্রের বাইরে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে নানা মহলের সমালোচনা ছিল। সমালোচকদের অভিমত হচ্ছে, এভাবে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার কারণে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ নভেম্বর আদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এর দুটি ধারা (৬ এর ২ ও ৯) অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
সেই আইনের ৬ এর (২) উপধারায় বলা আছে, উপ-ধারা (১) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যে কোনো ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫ এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিত সংখ্যক অথবা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও দরকষাকষির মাধ্যমে সেই কাজের জন্য মনোনীত করে ধারা ৭ এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৯ ধারায় বলা হয়, এই আইনের অধীন করা হয়েছে, বা করা হয়েছে বলে বিবেচিত কোনো কাজ, কোনো ব্যবস্থা, কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।