কারদণ্ডের পাশাপাশি সাহেদকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে; এই টাকা আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
Published : 21 Aug 2023, 01:43 PM
প্রতারণায় আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমকে সম্পদের হিসাব না দেওয়ার মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
কারদণ্ডের পাশাপাশি সাহেদকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে; এই টাকা আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলেছেন বিচারক।
ঢাকার সপ্তম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে তিনি বলেন, আসামি সাহেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হল।
তবে একই আইনের ২৭ (১) ধারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় ওই অভিযোগ থেকে আদালত তাকে খালাস দিয়েছে বলে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত সাহেদকে নির্বিকার দেখা যায়। তিনি ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন।
রায় ঘোষণার জন্য সাহেদকে সকালে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়।
দুদকের এই মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১০ অগাস্ট বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন।
মামলার পূর্বাপর
এ মামলায় সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়া এবং ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় রিজেন্ট হাসপাতালের সাবেক চেয়ারম্যান সাহেদ (সাহেদ করিম) বিরুদ্ধে।
সাহেদের অবৈধ সম্পদের মামলায় রায় হবে ২১ অগাস্ট
দোষ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ৭ বছর সাজা হতে পারে রিজেন্টের সাহেদের
সাহেদের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ২০২০ সালের ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়েছিল।
তিন মাস না যেতেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
এরপর ওই বছর ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র্যাব।
১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনিয়মের নানা অভিযোগ সামনে আসতে থাকে।
সেগুলোর তদন্ত চলার মধ্যেই ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর সম্পদের হিসাব চেয়ে সাহেদকে নোটিস পাঠায় দুদক; ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে বলা হয়।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তিনি সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়ায় অতিরিক্ত আরও ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যের আজাদকে এখন ‘চেনেন না’ রিজেন্টের সাহেদ
জাল নোটের মামলায় সাহেদ অভিযুক্ত
সাহেদ এরপরও তা জমা না দেওয়ায় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। সেই মামলায় ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় সাহেদের বিরুদ্ধে।
তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুদক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ওই বছর ১৭ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে সাহেদের বিচার শুরুর আদেশ হয়। এ মামলার মোট ১০ জন বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দেন।
গ্রেপ্তারের পর সাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তিন ডজনের বেশি মামলা হয়। তার মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।