বিএনপির সালাহ উদ্দিন ও ড. ইউনূস বিষয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের কারাগারে আছেন বিএনপির এ নেতা; আর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাকে হয়রানি না করতে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন দিয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশ্বের ৪০ ব্যক্তি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 07:16 PM
Updated : 9 March 2023, 07:16 PM

বিদেশের কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের ফেরানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকেও ফিরতে হবে সেই প্রক্রিয়ায়।

দিল্লি ও দোহা সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বিএনপির এ নেতাকে দেশে ফেরানোর পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত খোলা চিঠির বিষয়েও কথা বলেন।

সালাহ উদ্দিনের ভারতের কারাগার থেকে দেশে আসার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সে যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয় আসুক, অসুবিধা কী?”

তখন ওই সাংবাদিক জানতে চান ভারত সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না?

এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলেন, “না, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয় নাই। এগুলো আপনারাই তোলেন। এটা নর্মাল প্রসিডিউর যেটা সেটাই হবে। ওগুলো নিয়ে অত চিন্তার কোনো কারণ আছে? বাঙালি যদি বাইরে থাকে, জেলে থাকে, জেল শেষ হলে আসুক…

“এটা কী কোনো ব্যাপার, আপনি এই নিয়ে চিন্তিত কেন? আমরা তো প্রতিদিন বহু কয়েদিকে যারা বিদেশে (জেল) খাটে তাদের নিয়ে আসতেছি।”

তখন ওই সাংবাদিক আবার তাকে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না সেটি জানতে চান।

এর উত্তরে আবারও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, “এটা আপনার ক্ষেত্রে যেটা, অন্য কেউ বা সালাহউদ্দিন আহমেদ, সবার জন্য সেটা। সুতরাং এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য নয় বছর ধরে বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে রয়েছেন।

ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি খালাস পেয়েছেন তিনি। কারাগার থেকে এখন দেশে ফিরতে চাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন। তখন তিনি যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ওই বছরের ১১ মে মেঘালয়ের শিলংয়ের পুলিশ উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় সালাহ উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ভারতে প্রবেশ করলেও তার কোনো বৈধ কাগজপত্র সেসময় মেঘালয় পুলিশ না পাওয়ায় ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। সেই মামলায় ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালতে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়।

ইউনুসের জন্য খোলা চিঠি ‘অলীক’

ড. ইউনূসকে ‘হয়রানি’ না করার আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে বিশ্বের ৪০ ব্যক্তির নামে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে লেখা খোলা চিঠিকে ‘অলীক ও বস্তুনিষ্ঠ নয়’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই খোলা চিঠি দেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৪০ জন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

এ চিঠির লেখকদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, চাথাম হাউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্যার রবিন নিবলেট রয়েছেন।

ওই চিঠির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে এবং পৃথিবী স্বীকার করেছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এতে অনেকে বাংলাদেশকে যারা দেখতে পারেন না বা শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না, তারা বিভিন্ন রকমের প্রচেষ্টা…

“উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, স্বীকার করেন, ভালো হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে দেশে। সুতরাং শেখ হাসিনা খারাপ। কারণ শেখ হাসিনা ইজ এ ডিটারমিনেট লিডার, অত্যন্ত সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতা। তার কারণে এই উন্নয়নগুলো তরতরে অগ্রসর হচ্ছে, তারে যদি বাদ দিতে পারি তাহলে এখানে একটা অস্থিতিশীলতা হবে, সেই তালেই তারা আছে।”

সেজন্য ওই সমস্ত লোক বিভিন্ন রকম ‘ফন্দিফিকির’ করছেন মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “যাতে শেখ হাসিনার অবস্থানটা কী করতে পারে... তবে আমি অবশ্যই বলব, এগুলো হচ্ছে আঙ্গুর ফল টক, ওই কারণে। এতে অত বেশি কিছু আসে যায় না। অভিযুক্ত যে করছেন, সেটা আমি বলব এগুলো একেবারে অলীক। মানে বস্তুনিষ্ঠ হয় নাই।”

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় এক পৃষ্ঠাজুড়ে বিজ্ঞাপন আকার দেওয়া ওই চিঠিতে ইউনূসের বিভিন্ন পুরস্কার ও কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, “গ্রামীণ টেলিকম বা গ্রামীণফোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হননি মুহাম্মদ ইউনূস। বরঞ্চ, নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে দারিদ্র-বিরোধী মিশনে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি এবং ঢাকায় সাদামাটা জীবনযাপন করেন।

“এ কারণে এটা দেখা কষ্টকর যে, অনবদ্য সততার একজন ব্যক্তি অধ্যাপক ইউনূস ও তার জীবনকর্মকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং অব্যাহতভাবে হয়রানি ও আপনার সরকার দ্বারা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।”

চিঠিতে আরও বলা হয়, “আমরা আশা করি, টেকসই অগ্রগতির জন্য কীভাবে একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে পরিচর্যা করা যায়, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তার রোলমডেল হিসাবে পুনরায় আবির্ভূত হবে।

“এক্ষেত্রে ভালো প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে অধ্যাপক ইউনূসের অর্জনের স্বীকৃতি এবং তিনি যেন কেবল নিজেকে রক্ষার জন্য না লড়ে আপনার দেশ ও বিশ্বের জন্য আরও ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে তার প্রাণশক্তি ব্যবহারের দিকে নজর দিতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়া।”

Also Read: সালাহ উদ্দিনকে ফেরাতে সরকারের উদ্যোগ চান ফখরুল

Also Read: ভারতের আদালতের রায়ে সালাহ উদ্দিন খালাস

Also Read: শিলংয়ে খালাস পেয়ে দেশে ফিরতে ‘উদগ্রীব’ সালাহ উদ্দিন