সালাহ উদ্দিনকে ফেরাতে সরকারের উদ্যোগ চান ফখরুল

২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন। ৬৩ দিন পর মেঘালয়ের শিলংয়ের পুলিশ উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মামলা হয়। সম্প্রতি ওই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 01:10 PM
Updated : 9 March 2023, 01:10 PM

ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগ চেয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাকে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ৮ বছর ভারতের কারাগারে এবং নজরবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের।

“আমরা বাংলাদেশ সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে মুক্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।”

সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন। তখন তিনি যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ওই বছরের ১১ মে মেঘালয়ের শিলংয়ের পুলিশ উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় সালাহ উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ভারতে প্রবেশ করলেও তার কোনো বৈধ কাগজপত্র সেসময় মেঘালয় পুলিশ না পাওয়ায় ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখায়।

সেই মামলায় ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালতে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়।

সালাহ জানান, ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর বিচারিক আদালত তাকে খালাস দিয়েছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভারত সরকার আপিল করে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজ কোর্ট তাকে আবার বেকসুর খালাস দেয়।

তাকে যেন দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়, সেই নির্দেশনাও আদালত দিয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা।

ভারত সরকারকে উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে সসম্মানে বাংলাদেশে ফের পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। আহ্বান জানাচ্ছি তার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য ও সন্মানিত করার জন্য।”

সালাহ উদ্দিন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে তার সহকারী একান্ত সচিব হন। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে নামেন।

২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, পরে চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও সংসদ সদস্য ছিলেন।

ভারতে আটকের সময়ে সালাহ উদ্দিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

Also Read: শিলংয়ে খালাস পেয়ে দেশে ফিরতে ‘উদগ্রীব’ সালাহ উদ্দিন

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সালাহউদ্দিন স্বেচ্ছায় ভারত যাননি, তাকে ‘ধরে নিয়ে’ সীমান্তে পার করে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে সরকারের হাত রয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা-মামলার অন্যতম শিকার সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও কেন্দ্রীয় সংসদের এককালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

“তিনি আইনজীবী ছিলেন, এক সময়ের বিচারক ছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য জীবনে কোনো কালিমা লাগেনি।

“তার বেকসুর খালাসের রায়ের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের এই অবৈধ সরকার চক্রান্ত করে সীমাহীন নির্যাতন ও হয়রানি করেছে। আমরা তাকে এখন নিঃশর্তভাবে মুক্ত অবস্থায় ফেরত চাই।”

বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ দলের নিখোঁজ নেতা-কর্মীদের বিষয়ে দলের বক্তব্য জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “আমরা বহু সংবাদ সম্মেলন, বহু রাজনৈতিক কর্মসূচি, হরতাল-অবেরাধ কর্মসূচি পালন করেছি। এখনও প্রতিনিয়ত উদ্যোগ নিচ্ছি, বিশ্বজনমত তৈরি করেছি।

“মার্কিন রাষ্ট্রদূত গুম হওয়া পরিবারের বাসায় ভিজিট করেছেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড আমরা সব সময় চাচ্ছি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, তাদেরকে ফিরে পাওয়ার জন্য-এটা আমাদের বহাল আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।