ভারতের আদালতের রায়ে সালাহ উদ্দিন খালাস

ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ; তাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আদেশও দিয়েছে শিলংয়ের আদালত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2018, 10:30 AM
Updated : 26 Oct 2018, 12:49 PM

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে শিলংয়ের আদালতের দেওয়া রায়ে খালাস পাওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, তিনি এখন দেশে ফেরার জন্য উন্মুখ।

নাটকীয়ভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার পর গত তিন বছর ধরে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে রয়েছেন সালাহ উদ্দিন।

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢোকার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল। শুনানি শেষে চার বার দিন ঠিক হলেও রায় হয়নি।

চারবার পেছানোর পর রায়ের জন্য পঞ্চম নির্ধারিত দিন শুক্রবার শিলংয়ের বিচারিক হাকিম ডি জি খারশিং সালাহ উদ্দিনকে খালাসের আদেশ দেন বলে তার আইনজীবী এ পি মহন্তে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আদালত সালাহ উদ্দিন আহমদকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে দ্রুত তাকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন।”

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই আইনজীবী বলেন, “প্রমাণিত হল যে আমার মক্কেল নির্দোষ ছিলেন।”

রায়ের সময় সালাহ উদ্দিনের পরিবারের কেউ শিলংয়ে ছিলেন না। তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঢাকায় আছেন।

রায়ের পর সালাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখন প্রতীক্ষায় আছি দেশে ফেরার। এখানকার সরকার ও প্রশাসন যেন দ্রুত আদালতের আদেশ কার্যকর করেন, সেটাই  আমার সব চেয়ে বড় প্রত্যাশা এই মুহূর্তে।”

তিনি বলেন, “আমি ভীষণ ক্লান্ত ও অসুস্থ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে দ্রুত আমি ফিরতে পারি।”

শিলংয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সালাহ উদ্দিন আহমেদ (ফাইল ছবি)

শুরুতে কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিন নিয়ে শিলংয়ে একটি রেস্ট হাউজে থাকছেন সালাহ উদ্দিন। প্রতি সপ্তাহে হাজিরা দেওয়ার শর্তে অসুস্থ এই বাংলাদেশি রাজনীতিককে জামিন দিয়েছিল ভারতের আদালত।

হৃদযন্ত্রে ব্লক রয়েছে সালাহ উদ্দিনের; এছাড়া তার ঘাড়ে ও মেরুদণ্ডে ব্যথাজনিত নানা জটিলতা রয়েছে।

২০১৫ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির ঘিরে আন্দোলনের মধ্যে অন্তর্ধান হয়েছিলেন সালাহ উদ্দিন; একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তার দেশে ফেরার সুযোগ তৈরি হল।

বিএনপির এই নেতার দাবি, ঢাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে কোন পথে কীভাবে তিনি শিলংয়ে পৌঁছেছিলেন, সে তথ্য ভারতীয় পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। 

তখন সালাহ উদ্দিন ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, তার অনুপস্থিতিতে পরের কাউন্সিলে তাকে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে নেন খালেদা জিয়া।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও সংসদ সদস্য ছিলেন।

২০১৫ সালে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের বিবৃতি পাঠাচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে সালাহ উদ্দিনের অন্তর্ধান নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির নামে বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। এরই মধ্যে ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।

স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে সে সময় অভিযোগ করেন হাসিনা আহমেদ। সরকারের ‘নির্দেশে’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই সালাহ উদ্দিনকে ‘নিয়ে গেছে’ বলে সে সময় বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ তখন নাকচ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সালাহ উদ্দিনের অন্তর্ধানে তার দলের ‘হাত রয়েছে’ বলেও সে সময় ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে যান সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমেদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, তারাও এই বিএনপি নেতার কোনো খোঁজ জানে না।

৩ বছর আগে শিলংয়ে এই অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সালাহ উদ্দিনকে

ঢাকা থেকে উধাও হওয়ার দুই মাস পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে হদিস মেলে সালাহ উদ্দিনের। ভ্রমণের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।

কিছুদিন কারাগার ও হাসপাতালে কাটানোর পর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় জামিন পান সালাহ উদ্দিন। কিন্তু ভারত ছাড়ার অনুমতি না থাকায় স্ত্রী ও কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে শিলং শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন।

২০১৬ সালে অসুস্থতার কারণে দিল্লি গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন এই বিএনপি নেতা। পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে চাইলেও তাতে শিলংয়ের আদালতের সায় মেলেনি।

ফরেনার্স অ্যাক্টের এ মামলার তদন্ত শেষে মেঘালয় পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।

সেখানে বলা হয়, ভারতে এই বিএনপি নেতার আকস্মিক উপস্থিতি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিচার এড়াতে তিনি ভারতে এসেছেন।

ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালত সালাহ উদ্দিনের বিচার শুরু করে। 

শিলংয়ের আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আই সি ঝাকে উদ্ধৃত করে নাগাল্যান্ড পোস্টের খবরে বলা হয়, এ মামলার বিচার আদালত সালাহ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য রেকর্ড করে এবং তাকে পরীক্ষা করা দুই চিকিৎসকসহ ১০ জনের সাক্ষ্য শোনে।

পুরনো খবর