আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যেই তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় আরেক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ আলমের সাক্ষ্য নেন।
বেলা ৩টা ১০ মিনিট থেকে ৩টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। এসময়ও দুই পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান চলছিল।
এনিয়ে বাদীসহ আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হল। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী রয়েছেন ৫৭ জন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দেড় দশক আগের এই মামলায় এই বছরের এপ্রিলেই বিচার শুরু হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সাক্ষ্যগ্রহণের আগে বেলা আড়াইটা থেকে বিএনপির আইনজীবীরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে বিচার বন্ধের দাবিতে স্লোগান তোলে।
তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও আদালত কক্ষের ভেতরে অবস্থান নিয়ে মামলা চলার পক্ষে স্লোগান দেয়।
তুমুল হৈ চৈয়ের মধ্যে আদালত কক্ষের দরজার সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা ধাক্কাধাক্কিতেও জড়িয়ে পড়েন।
বেলা ৩টা ১০ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন এবং পরিবেশ শান্ত করে আদালতের কাজ চালিয়ে নিতে সবাইকে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা আদালত কক্ষের ভেতরে এবং দরজায় অবস্থান নিয়ে ছিল। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা অবস্থান নিয়ে ছিল আদালত কক্ষের বাইরে। পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্যেই বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
মঙ্গলবারও সাক্ষ্যগ্রহণের সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হৈ চৈ হয়েছিল। যে কারণে বিচারককে এজলাসও ছেড়ে যেতে হয়।
সেই ঘটনায় বিএনপি সমর্থক ২৮ আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন। তারপর বুধবার আবার একই ঘটনা ঘটে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক এবং তার স্ত্রী জোবায়দাকে পলাতক দেখিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের এই মামলার বিচার চলছে।
মামলা বিত্তান্ত
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তারেক গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করেন দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা। তিনি সম্প্রতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।
অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষেও। তখন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে।
এরপর গত ১৩ এপ্রিল তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।
তারেক ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোতে জামিন নিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসা নিতে। তারপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।