বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ‘নাশকতার’ আগেই তা প্রতিরোধ বিষয়ে বলেন অতিরিক্ত আইজিপি দিদার আহমদ।
Published : 06 Jan 2024, 11:11 PM
ট্রেনে নাশকতার একাধিক ঘটনার রেশ শেষ না হতেই বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে পুড়ে চারজনের প্রাণহানির ঘটনাকে ‘নিজেদের ব্যর্থতা’ মানছে না রেলওয়ে পুলিশ।
তবে আগুনের পর এবার দ্রুত ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হওয়াকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে দেখছেন রেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এই বাহিনীর প্রধান অতিরিক্ত আইজি দিদার আহমদ।
রেলে নাশকতার আগেই তা ঠেকানো বিষয়ক এক প্রশ্নে শনিবার তিনি বলেন, এটা দুর্বলতা বা ব্যর্থতা নয়। আমি বলব এটা আমাদের জনগণের দুর্ভাগ্য।
গত দুই মাসে ট্রেনে একাধিকবার আগুন ধরিয়ে নাশকতার চেষ্টা হচ্ছে বলে রেল পুলিশ জানিয়ে এলেও শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসের নাশকতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি তারা। ঢাকার ঢোকার মুখে আগুনে পুড়ে যায় ট্রেনটির তিনটি বগি; সেখান থেকে চার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
যদিও ওই ট্রেনে অবস্থান করা রেল পুলিশের সদস্যরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দ্রুতই থামাতে সক্ষম হন। এতে আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার আগেই অন্য যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে যেতে পারেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরেই ঢাকার ঢোকার পথে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অনেকটা একই রকম আগুনে পোড়ে তিনটি বগি, প্রাণ যায় চারজনের। সেই ঘটনার ছয় দিন আগে একই ট্রেন নাশকতার মুখে পড়ে।
ভোরের দিকে গাজীপুরে রেলের পাত তুলে ফেলার ফলে এই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসেরই সাতটি বগি ছিটকে পড়ে, প্রাণ যায় একজনের।
এসব ঘটনার আগে ও পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে নাশকতা হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য থাকার কথা বলা হয়। তবুও এগুলো ঠেকাতে মজবুত কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারার প্রশ্নে রেলপুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দিদার বলেন, এরকম একটা ঘটনা তারা কীভাবে করে। এগুলো আমরা খতিয়ে দেখব।
তার ভাষ্য, রেল পুলিশের সদস্যদের কারণে ট্রেনটি দ্রুত থামানো গেছে। তাদের এক সদস্য প্রাণ বাজি রেখে যাত্রীদের সতর্ক করতে গিয়ে বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। ওই সদস্যের বুট কামরার মেঝেতে আটকে যায়। পরে বুট খুলেই সে ট্রেন থেকে লাফ দেয়।
বেনাপোল এক্সপ্রেস শুক্রবার দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে রাত ৯টার দিকে শেষ স্টেশন কমলাপুরে ঢোকার দুই কিলোমিটার আগে আগুনের কবলে পড়ে।
ঢাকায় ঢোকার আগে এই ট্রেনেরর সর্বশেষ স্টেশন ছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা। সন্ধ্যা ৭টা ৪১ মিনিটে সেখানে চার মিনিটের বিরতি দিয়েছিল ট্রেনটি। ঢাকার সায়েদাবাদ পার হওয়ার সময় ‘চ’ বগির যাত্রীরা ধোঁয়া দেখতে পান।
অতিরিক্ত আইজি দিদার বলেন, রেল পুলিশের একজন সদস্য চেইন টেনে ট্রেনটি থামান। পুলিশ সদস্যদের তৎপরতার কারণে ট্রেনটিকে দ্রুত থামানো গেছে। এতে অন্য লোকজন নামতে পেরেছেন।
পুলিশের ঢাকা রেলওয়ে জেলার এসপি আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চ বগিতে আগুন লাগার পরপর ট্রেনে থাকা রেল পুলিশের কনস্টেবল মোহাম্মদ আলী দ্রুত চেইন টেনে ট্রেনটি থামানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি শুধু চেইন টেনে ট্রেনটি থামাননি। তিনি কামরার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত আগুন আগুন চিৎকার করতে করতে দৌড় দেন। অন্য কামরাতেও যান।
“যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে বগির ভেতরে ধোঁয়া আর তাপ অনেক বেড়ে যায়। তাপে গলে গিয়ে মোহাম্মদ আলীর এক পায়ের বুট ট্রেনের বগির ধাতব মেঝেতে আটকে যায়। তখন বুট খুলে রেখে ট্রেন থেকে লাফিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষা করেন মোহাম্মদ আলী।”
ফ্লাইওভার থেকে রেলে পেট্রোল বোমা
এসপি আনোয়ার বলছেন, গত নভেম্বর থেকে কয়েকদফা রেলে নাশকতার চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ট্রেনে দুই দফা নাশকতার পর তারা হামলা ঠেকাতে রীতিমতো যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।
তার ভাষ্য, গত নভেম্বরে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর থেকে একটি ট্রেনের ওপর পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারা হয়। তবে সেটি ট্রেনের ভেতরে ঢোকেনি, বাইরেই পড়ে যায়। এরপর খিলগাঁও রেলগেইট এলাকায় একই রকমভাবে পেট্রোল ভরা বোতলের সলতেতে আগুন দিয়ে ট্রেনে ছুঁড়ে মারা হয়। সেটিও ট্রেনের গায়ে লেগে নিচে পড়ে যায়।
এরপর খিলগাঁও এলাকায় রেললাইনের দুই পাশের দেওয়ালের ওপর টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এমনটা করা হয় যাতে সহজে কেউ লাইনে ঢুকতে না পারে। এরপর দুই পাশের গাছ কেটে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, লাগানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।
ট্রেনের বগির ভেতরেও সিসি ক্যামেরা লাগাতে রেল পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও কার্যকর হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার আনোয়ার।
বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: ‘পরিকল্পনা-বাস্তবায়নে’ যুবদল
বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন সরকারের ‘পুরনো খেলার অংশ’: বিএনপি
ঢাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন, নিহত ৪
বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: বোনের খোঁজে বোন, স্ত্রীকে খুঁজছেন স্বামী, শিশুর খোঁজে মাইকিং
‘বাচ্চা-বউ পুইড়া গেছে, বের হয়ে কী করব’