‘বিদেশি বন্ধুর উপহারের’ প্রলোভন, প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

প্রতারণার শিকার মুন্সীগঞ্জের এক তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 12:26 PM
Updated : 25 May 2023, 12:26 PM

বিদেশ থেকে ‘অতি মূল্যবান’ পার্সেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুই বিদেশি নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন, নাইজেরিয়ার নাগরিক চালর্স ইফেন্দি উজিউ (২৭), ফ্রাঙ্ক কোকো ওবিয়ার্কস (৩৫), শফি মোল্লা (৩৬) এবং মোছাম্মত মৌসুমি খাতুন (২৭)।

প্রতারণার শিকার এক তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধারা আবাসিক এলাকা এবং কদমতলীর শামীমবাগ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-১০ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান।

বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান এলাকার ২৬ বছর বয়সী একজন তরুণীর সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে এক বিদেশি নাগরিকের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ওই বিদেশি ১৭ মে ওই নারীর ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠানোর কথা জানিয়ে বিমানবন্দর থেকে তা সংগ্রহ করতে বলেন।  

এরপর ১৮ মে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক নারী ফোন দেন মুন্সীগঞ্জের ওই তরুণীকে; বলেন, তার নামে একটি ‘অতি মূল্যবান’ পার্সেল বিমানবন্দরে এসেছে। পার্সেলটি নিতে কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে বলে জানান।

ওই নারীর কথা অনুযায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রথমে ৩৫ হাজার টাকা দেন মুন্সীগঞ্জের সেই তরুণী। পরে আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠান তাদের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তাকে জানানো হয়, পার্সেল তার বাসায় পৌঁছে যাবে।

কিন্তু পার্সেল না পেয়ে যোগাযোগ করলে আরও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠাতে বলা হয় তাকে। সন্দেহ হওয়ায় ওই তরুণী তখন র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। এরপর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, “তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেটে ঘেটে ব্যবসয়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে তারা বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

“এরপর সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য উপহার পাঠাতে চায়। উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের একজন সদস্য পরে কাস্টমস অফিসার সেজে ফোন করে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য করে।”

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই চক্রের বিদেশি দুজন ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করে। সেই পেশার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এ প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে।

র‌্যাব কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, চালর্স ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। তার নামে আগেও মামলা হয়েছে। মাদক মামলায় তার পাসপোর্ট কোর্ট জব্দ রয়েছে।

“পরে সে পলাতক থেকে কাপড়ের ব্যবসার শুরু করে। বাংলাদেশ থেকে কাপড় কিনে নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করত এবং বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিত।”

ফ্রাঙ্ক ২০২১ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। পরে তিনি চালর্সের সাথে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন এবং নিজেকে গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন বলে জানান ফরিদ।

চার্লসই এ প্রতারক চক্রের ‘হোতা’ জানিয়ে এ র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, মৌসুমি ও শফি এ আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশি সদস্য। তারা কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ এবং অর্থ সংগ্রহ করতেন।

শফি থাকতেন নারায়ণগঞ্জ জেলায়। রাজধানীর বঙ্গবাজারে কাপড়ের ব্যবসা করার সুবাদে চালর্স ও ফ্রাঙ্কের সাথে তার পরিচয় হয়।

আর মৌসুমি খাতুনের বাড়ি ময়মনসিংহে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কাজ করার সুবাদে তিনি ইংরেজি ও আরবি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে বিভিন্ন বায়িং হাউজে দোভাষী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওই সূত্রেই চালর্সের সাথে তার পরিচয় হয়।

গ্রেপ্তার এই চারজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।