বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরির কারণ উৎসুক জনতা: ফায়ার সার্ভিস

“জনগণের জানমাল উদ্ধারে যারা জীবন দিচ্ছে- তাদের উপরই আজকে হামলা হয়েছে। কেন, কারা করেছে?,” প্রশ্ন ডিজি মাইনের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2023, 06:45 PM
Updated : 4 April 2023, 06:45 PM

বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পরপরই সড়কের বিপরীত পাশের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে জনতার হামলা, উৎসুক জনতার ভিড় আর দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

সংস্থাটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেছেন, “আগুন নির্বাপণে প্রথম বাধা হল উৎসুক জনতা, দ্বিতীয় বাধা হল আমাদের পানি স্বল্পতা। পানির জন্য আমরা সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এবং অনান্য বাহিনীর সহায়তা নিয়েছি।

“ওয়াসা পানির ভাউজার দিয়ে সহায়তা করেছে। পুলিশের ইউএন মিশনে যাওয়ার জন্য যে ভাউজারগুলো ছিল, সেগুলো আমরা এনেছি…আরেকটা কারণ ছিল এখানে অনেক বাতাস ছিল। আমরা এক জায়গায় আগুন নিভাচ্ছি, বাতাসে আরেক জায়গায় আগুনটা চলে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের সময় একটু বেশি লেগেছে।”

মঙ্গলবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে নারী কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাইন উদ্দিন বলেন, “সেই প্রশ্নই আমি করেছি যে- আমার হেড কোয়ার্টার এবং এই মার্কেটটা (বঙ্গবাজার) রাস্তার এপাশ-ওপাশ। আমি ফায়ার সার্ভিসের ডিজি হিসেবে- আমাদের সকল কর্মীরা আপনাদের জনগণের জানমাল উদ্ধারে জীবন দিচ্ছি, সেই জানমাল উদ্ধারে যারা জীবন দিচ্ছে- তাদের উপরই আজকে হামলা হয়েছে। কেন, কারা করেছে?

“এই উচ্ছৃঙ্খল লোকজন কারা? কেন তারা এমন আচরণ করল? আমাদের যেসব গাড়ি জাতীয় সম্পদ ও মূল্যবান জীবন রক্ষা করে, সেইসব গাড়ি কি উদ্দেশ্যে ভাঙচুর করা হল?

Also Read: বঙ্গবাজারে আগুন লাগল কীভাবে, তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের কমিটি

Also Read: বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ডিএসসিসির কমিটি

Also Read: বঙ্গবাজারে আগুন নেভাতে গলদঘর্ম ফায়ার সার্ভিস

হামলার ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা আগে তদন্ত করব। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ রাত ১০টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হামলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মার্কেট থেকে যেসব মালামাল উদ্ধার করে রাস্তায় রাখা আছে, সেগুলোর নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের তরফে জানানো হয়েছে, সংস্থাটির প্রায় সাড়ে ছয়শত কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজে অংশ নেন। মঙ্গলবারের ঘটনায় তাদের ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। 

“উচ্ছৃঙ্খল জনতা ফায়ার সার্ভিসের ১১টি গাড়ি এবং অধিদপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করে ইআরসিসি ভবন ও রিসিপশন ভবন ভাঙচুর করে এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মারধর করে। বাইরে থেকেও উচ্ছৃঙ্খল লোকজন অধিদপ্তরের ভেতরে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। অগ্নিনির্বাপণের সময়ও আমাদের অনেক কর্মী মারধরের শিকার হন। পরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যগণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন,” বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।

ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি জানান, বঙ্গবাজার আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যসহ ১২ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে।

এদের মধ্যে রবিউল ইসলাম অন্তর (৩০), আতিকুর রহমান রাজন (৩৫), দিদারুল (৩২), বাবুল চক্রবর্তী (৫৮) ও মেহেদী হাসান (২৮) দমকল কর্মী। আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন নিলয় (৩৫), শাহিন (৪০), রিপন (৪০) রুবেল (৩২), দুলাল মিয়া (৬০), সুমন মিজি (৪৮) সোহেল (৪৮)।

এদের মধ্যে মেহেদী হাসানকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আংশকাজনক বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক।

অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বঙ্গবাজার মার্কেটকে ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিল। গণমাধ্যমে তার সংবাদও প্রচারিত হয়েছিল। এছাড়া তাদের বিভিন্ন সময়ে নোটিস প্রদান করা হয়েছে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে।”

মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস মিনিট দুইয়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও বাতাসের মধ্যে ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিসের ৪৮ ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুড়ে ছাই। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের আরও কিছু ভবন। রাত পর্যন্তও দুটি ভবনের ভেতরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

ফায়ার সার্ভিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ডিএসসিসি আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”