ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে।
মঙ্গলবার সাঈদীকে হাজির করার পাশাপাশি জামায়াতের আরো চার নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এম কামরুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত চারটি আবেদন নাকচ হয় ট্রাইব্যুনালে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রসিকউশনের আবেদনের শুনানি বুধবার আবার হবে।
সাঈদীকে এর আগে দুই দিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা থাকলেও নানা কারণে করা হয়নি।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে সাঈদীকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাাইব্যুনালে আনা হয়। প্রথমে তাকে হাজতখানায় রাখা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় আদালত বসলে সাঈদীকে কাঠগড়ায় আনা হয়। কাঠগড়ায় তাকে একটি কাঠের চেয়ারের বসতে দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নিজামুল হক, এটিএম ফজলে কবির ও একেএম জহির আহমেদ আসন গ্রহণের পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে সাঈদীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন।
তিনি বলেন, "একাত্তরে পিরোজপুরে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ নানা অভিযোগের তথ্য প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার রাখা প্রয়োজন। তিনি বাইরে থাকলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে।"
তব প্রসিকিউশনের আবেদনে গ্রেপ্তারের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি না থাকার কথা জানিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, এ আবেদন তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
"শুনানিতে যা বলছেন, তা আবেদনে নেই।"
পরে প্রসিকিউশন লিখিত আবেদনে আরো কিছু বিষয় সংযুক্ত করতে সময় চাইলে আদালত সাঈদীর উপস্থিতিতে বুধবার আবার শুনানির আদেশ দিয়ে জামায়াত নেতাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট এর ৩/২ ধারার অপরাধ তদন্তের স্বার্থে সাঈদীকে আটক দেখানোর জন্য ওই আবেদন জানানো হয়। এ ধারায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা আদালতের কাজ চলে। পুরোটা সময় কাঠগড়ায় ছিলেন সাঈদী।
সাঈদীর পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তরফ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য করা হয়েছিলো। সাঈদীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কারণ সম্পর্কে প্রসিকিউশনের আবেদনে যথাযথ কারণ উল্লেখ না থাকায় এ বিষয়টি বুধবার আবার আদালত আবার শুনবেন বলে জানিয়েছেন।"
এর আগে গত ১০ অগাস্ট সাঈদীকে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হলেও অসুস্থতার কারণে তাকে কারা কর্তৃপক্ষ হাজির করতে পারেনি। এর পর ২৪ আগস্ট তার হাজিরার দিন ধার্য হলেও ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজের জন্য তা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ৫ অগাস্ট ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক দেখানোর এক আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে সাঈদীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
জামায়াত আমির নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা তাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, তাদের মুক্তি দেওয়া, তাদের বিরুদ্ধে মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে যে চারটি আবেদন করেছিলেন, তা খারিজ করে ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার আদালতে প্রসিকিশন দলের পক্ষে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান, সৈয়দ হায়দার আলী, জেয়াদ আল মালুম, আবদুর রহমান হাওলাদার ও আলতাফ হোসেন।
জামায়াত নেতাদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তাজুল ইসলাম, গোলাম মো. চৌধুরী আলাল, ফখরুল ইসাম, মাসুদ আহমেদ সাঈদ প্রমুখ।
সাঈদীর আগে গত ২ অগাস্ট নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত এ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাদের কারাগারে রাখার নির্দেশ দেয়।
ট্রাইব্যুনাল এর আগে গত ২৬ জুলাই ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক দেখানোর এক আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাদেরকে ২ অগাস্ট হাজির করার আদেশ দেয়।
এর মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে এই আদালতের বিচার কাজ শুরু হয়।
নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান ও কাদেরকে গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন মামলায় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তাদেরর বিরুদ্ধে ঢাকার পল্লবী ও কেরানীগঞ্জ থানায় মুক্তিযোদ্ধা হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২৫ মার্চ তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিলে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এলএইচ/এসএম/এমআই/১৫৪৭ ঘ.