প্রদর্শনীর দু্ই দিন পর ‘ইতিহাস বিকৃতি‘করায় জাতিসংঘ প্রদর্শনীটি বন্ধ করে দিয়েছিল বলে দাবি করে পাকিস্তান।
Published : 20 Apr 2023, 09:18 PM
প্রায় ২০ দিন আগে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে তিন দিনের চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন।
গত ২৯ মার্চ শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী শেষ হয় ৩১ মার্চ। এর দুই দিন পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ‘ইতিহাস বিকৃত‘ করায় জাতিসংঘ প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছে বলে দাবি করা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় জানাতে পাকিস্তানের ওই বক্তব্যকে ‘বানোয়াট’ হিসাবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় গণহত্যা দিবস ২০২৩ উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলদেশ মিশন কর্তৃক আয়োজিত চিত্রপ্রদর্শনীটি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের পূর্ণ সহযোগিতায় এবং প্রতিষ্ঠানটির সকল নিয়ম মেনেই আয়োজন করা হয়েছে।
“অতএব ‘নিয়ম না মেনে বা ইতিহাস বিকৃত করে প্রদর্শনী আয়োজন করায় জাতিসংঘ প্রদর্শনী বন্ধ করে এবং বিতর্কিত ছবিগুলো নামিয়ে ফেলে’ বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সত্য নয়, বরং নিতান্তই বানোয়াট।”
একাত্তর সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে সংঘটিত গণহত্যার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তিন দিনের এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির পর এটিই প্রথম কোনো চিত্রপ্রদর্শনী।
পরে ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে ‘একতরফা ও বিতর্কিত’ এই প্রদর্শনী ‘দ্রুত বন্ধ করে’ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘকে ধন্যবাদ দেন।
তার বক্তব্যের ভিত্তিতে পরদিন পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তানের স্থায়ী মিশন জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর ইতিহাসের ভিন্ন রকম উপস্থাপন ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায় প্রদর্শনীটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের দ্রুত পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
সেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের দিন ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হলেও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি।
একাত্তরে গণহত্যার প্রসঙ্গে না গিয়ে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ঘটনার সমাধান হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নিবিড় ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করছে পাকিস্তান।”
প্রদর্শনী বন্ধ করার বিষয়ে পাকিস্তান যে বক্তব্য দিয়েছে, এর বিরোধিতা করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, প্রবাসী বাংলাদেশি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ২৯ মার্চ প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন।
“তিন দিন চলা এই প্রদর্শনী ৭১- এর গণহত্যা বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।”
মন্ত্রণালয় আরও বলছে, “ঐতিহাসিক এই আয়োজন সফল করতে সকল সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মিশন ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
“একাত্তরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
পুরনো খবর