বেইলে রোডে অগ্নিকাণ্ডের ১১ দিন পর হস্তান্তর করা হয়েছে বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ, যিনি পরিচয় বদলে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।
Published : 11 Mar 2024, 05:21 PM
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে যে নারী সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, তার পরিচয় জটিলতা কাটার পর লাশ বুঝে পেয়েছেন বাবা শাবরুল আলম সবুজ।
সোমবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মেয়ের লাশ বুঝে নেওয়ার সময় সবুজ বলেছেন, “আজ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমিই তার বাবা; আল্লাহর কাছে হাজার হাজার লাখো কোটি শুকরিয়া।”
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ যায়। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও সেখানে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না।
কিন্তু আট তলা ওই ভবনে ব্যবসা করছিল ১৪টি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান। ভবনে ছিল না কোনো অগ্নিনির্গমন পথ। একমাত্র সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারসহ রেস্তোরাঁর মালামাল। কাচে ঘেরা ভবনের উপরের ফ্লোরগুলো থেকে নামতে না পেরে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় এ বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।
ওই সাংবাদিককে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে চিনতেন তার সহকর্মীরা; ফেইসবুকেও তার ওই নাম পাওয়া যায়। মন্দিরে গিয়ে নিয়মিত পূজা-অর্চনাও করতেন তিনি।
তুষার হাওলাদার নামের এক সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে সেদিন রাতে গ্রিন কোজি কটেজে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন অভিশ্রুতি। দুজনের কেউ বাঁচতে পারেননি।
পরদিন মর্গে লাশ নিতে আসেন সবুজ। কিন্তু তার বক্তব্যে তৈরি হয় সন্দেহ। তিনি দাবি করেন, মেয়েটির নাম বৃষ্টি খাতুন, যার বাবা তিনি।
সবুজ সেই তরুণীর যে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েছিলেন, তাতে বৃষ্টি খাতুন নাম দেখে ‘প্রতারক’ ভেবে পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে বন্ধু ও পরিচিতজনদের কথায় উঠে আসে নানা বক্তব্য। তাদের কেউ দাবি করেন, মেয়েটি মনে করতেন তিনি পালিত সন্তান। তার আসল বাবা-মা ছিলেন ভারতের, তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এর মধ্যে রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা দাবি করেন, নিয়মিত মন্দিরে এসে হিন্দু ধর্ম চর্চা ও পূজা-অর্চনা করতেন ওই নারী সাংবাদিক।
তিনি বলেছিলেন, “অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসাবে, সে ব্রাহ্মণ মেয়ে– সে হিসাবে এখানে পরিচয় দিত। ধর্মীয় কৃষ্টি কালচারগুলো আমাদের সাথে পালন করেছে।… যদি সে হিন্দু হয়ে থাকে, তবে তাকে সেই কালচারেই আমরা আমাদের যে মন্দির, আমাদের সাথে যেহেতু কানেকশন ছিল তার এবং পূজা-অর্চনা করত। সে হিসাবে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মকানুন বজায় রেখে, আমাদের হিন্দু ধর্মীয় মতে শেষকৃত্যটা করতে চাই।”
ওই তরুণীর এনআইডি, কলেজের পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জন্ম নিবন্ধনের আবেদনপত্র এবং এনআইডি সংশোধনের আবেদনপত্র দেখে ধীরে ধীরে বোঝা যায়, ‘বৃষ্টি খাতুন’ থেকে ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে সবুজ ও তার স্ত্রী বিউটি বেগমের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ, যার ফল প্রকাশ করা হয় রোববার রাতে।
সিআইডি জানায়, সবুজ ও তার স্ত্রী বিউটি বেগমের দেওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে ওই নারী সাংবাদিকের ডিএনএ নমুনা মিলেছে।
সোমবার বেলা ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেয়ের লাশ নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় সবুজ জানান, বৃষ্টিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বনগ্রাম পরিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এর মধ্য দিয়ে গ্রিন কোজি অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৪৫ জনের লাশ হস্তান্তর হল। বাকি একজনের পরিচয় জানতেও ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
কুষ্টিয়ার সবুজেরই মেয়ে ‘অভিশ্রুতি’, জানাল ডিএনএ
অভিশ্রুতি-বৃষ্টি: ‘বাবার’ পর ‘মায়ের’ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ