ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই ওই সাংবাদিকের লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Published : 04 Mar 2024, 09:36 PM
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে যে নারী সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, তার পরিচয় নিশ্চিত হতে মা পরিচয়দানকারী বিউটি বেগমের ডিএনএ এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে তার নমুনা নেওয়া হয় বলে জানান রমনা থানার এসআই হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, এর আগে রোববার বাবা পরিচয়দানকারী শাবরুল আলম সবুজের নমুনা নেওয়া হয়।
ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই ওই সাংবাদিকের লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওই সাংবাদিককে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে চিনতেন তার সহকর্মীরা; ফেইসবুকেও তার ওই নাম পাওয়া যায়। মন্দিরে গিয়ে নিয়মিত পূজা-অর্চনাও করতেন তিনি।
রিপোর্ট ডট লাইভ ছেড়ে সম্প্রতি কেস্টারটেক নামে একটি অনলাইন মাল্টিমিডিয়া কোম্পানিতে যোগ দেওয়া তুষার হাওলাদারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন অভিশ্রুতি। ওই ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেছে মোট ৪৬ জনের, অভিশ্রুতি আর তুষারও রয়েছেন তাদের মধ্যে।
ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৪৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। একজনের পরিচয় এখনও অজানা। আর ওই নারী সাংবাদিকের পরিচয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তার লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।
এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, “তার বাবা দাবিদার সাবরুল আলম সবুজ বলেছেন, তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার খুকশির বনগ্রামে।
“আবার রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি আমাদের কাছে আবেদন করে বলেছেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিন্দু পরিবারের সদস্য। জন্মস্থান ভারতের বেনারসে। তার বাবার নাম অভিরূপ শাস্ত্রী, মা অর্পণা শাস্ত্রী। বাবা পরিচয়ে মরদেহ নিতে আসা ব্যাক্তি তার বাবা নন বলে তার সন্দেহ।”
এ ধরনের জটিলতার কারণে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছুটে আসা তার বাবা পরিচয়দানকারী শাবরুল আলম সবুজ শুক্রবার বলেছিলেন, “অভিশ্রুতি আমার মেয়ে। ওর জন্ম ২৫ ডিসেম্বর মনে হয়। আমার মেয়ে।
“ওর ডাক নাম বৃষ্টি খাতুন। গ্রামে নাম বৃষ্টি, স্কুলে নাম বৃষ্টি, কুষ্টিয়া গভর্নমেন্ট মহিলা কলেজে যখন পড়েছে, তখনও বৃষ্টি, ঢাকাতে যখন ভর্তি হয়েছে ইডেন কলেজে, ঢাবি সাত কলেজের অধীনে, তখনও বৃষ্টি, দর্শনে পড়াশোনা করে রোল নম্বর ২৭৬, তখনও বৃষ্টি।”
আর রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা বলছিলেন, নিয়মিত মন্দিরে এসে হিন্দু ধর্ম চর্চা ও পূজা-অর্চনা করতেন ওই নারী সাংবাদিক।
“অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসাবে, সে ব্রাহ্মণ মেয়ে– সে হিসাবে এখানে পরিচয় দিত। ধর্মীয় কৃষ্টি কালচারগুলো আমাদের সাথে পালন করেছে।”
মন্দিরে যাওয়ার বিষয়ে বাবা দাবিদার সবুজ বলেন, “এতটুকু জানি, ও বন্ধুবান্ধবের সাথে মন্দিরে যায় মাঝেমাঝে, চলাফেরা করে। সেই এতটুকু আমাদের সাথে কথাবার্তা বলে। তাছাড়া অতিরিক্ত কিছু আমরা জানি না।”
অভিশ্রুতি বা বৃষ্টির জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ইডেন কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং চাকরির জন্মবৃত্তান্তে বাবা-মায়ের নামে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া গেছে। তবে স্থায়ী ঠিকানা সব জায়গায় একই।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ইস্যু করা জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বৃষ্টি খাতুন হিসাবেই রয়েছে। সেখানে পিতার নাম সবুজ শেখ এবং মাতার নাম বিউটি বেগম। কলেজের প্রবেশপত্রেও তার একই রকম তথ্য আছে।
২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধন সনদে নাম অভিশ্রুতি লেখা হলেও বাবার নাম লেখা হয়েছে মো. শাবুরুল আলম এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম।
অন্যদিকে, চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নিজের নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী লিখেছেন তিনি। তবে, বাবার নাম লেখা হয়েছে শাবুরুল আলম এবং মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী।
জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং জন্ম বৃত্তান্তে জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ৯ মার্চ ১৯৯৮।
অভিশ্রুতির ধর্ম পরিচয় নিয়ে আলোচনা চলছিল ফেইসবুকেও। নিজেকে অভিশ্রুতির ‘কাছের বন্ধু’ পরিচয় দেওয়া মাহফুজুর রহমান নামের একজন এক পোস্টে লিখেছেন, ধর্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্নের সমাধানে প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে তার কাছে।
কিন্তু পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ওই সাংবাদিকের লাশ হস্তান্তর করেনি পুলিশ।