সি- সেকশন কমাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন আইসিডিডিআরবি,র এক বিজ্ঞানী।
Published : 11 Apr 2023, 11:16 PM
দেশে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের হার বাড়ছে; ২০২২ সালে এ প্রক্রিয়ায় ৪৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে, যেগুলোর ৮৪ শতাংশই হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২২ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) পরিচালিত এ সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরা হয়।
সমীক্ষার জন্য দেশের ৩০ হাজার ৩৫৮টি বাড়ি নির্বাচন করা হয় এবং ৩০ হাজার ৭৮ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পাঁচ বছরের ব্যবধানে সি- সেকশনের মাধ্যমে শিশু জন্মহার ২০১৭ সালের ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।
সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৩২৪টি শিশুর জন্ম হয়েছে বাড়িতে। সরকারি হাসপাতালে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৮টি, বেসরকারি হাসপাতালে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ২৫৫টি এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে ৬১ হাজার ৪৮৯টি শিশুর জন্ম হয়েছে।
এরমধ্যে ১৬ লাখ ৯ হাজার ১৫৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে; সবচেয়ে বেশি ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে (মোট সি-সেকশনের ৮৪ শতাংশ)।
এছাড়া ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি শিশু সরকারি হাসপাতালে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ২২ হাজার ১৩৬টি শিশু সি-সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতি বছরেই সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বাড়ছে। ২০১১ সালে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সালে ৩৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল কেন্দ্রিক প্রসব বাড়ার কারণে সি-সেকশনের সংখ্যা বেড়েছে। বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় দরিদ্র নারীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে।
২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, নারীদের ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় ধনীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গ্রহণের মাত্রা ছয় গুণ বেশি ছিল। ২০২২ সালে এ অনুপাত কমে দরিদ্রদের তুলনায় ধনীদের সেবা গ্রহণ দ্বিগুণে নেমে এসেছে।
সবশেষ সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অন্তত একবার একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর থেকে গর্ভকালীন বা এএনসি সেবা গ্রহণ করেছেন, যা ২০১৭ সালে ছিল ৮২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ধরনের নিয়মনীতি না থাকায় সি-সেকশন অস্ত্রোপচার বাড়ছে। এতে নারীদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
জনস হপকিন্স প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইন গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্ট্যাট্রিকস এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সেতারা রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিজারিয়ান সেকশনের কারণে নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সিজারিয়ান পরবর্তী জটিলতা, হার্নিয়া, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হারও বেশি হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি সংক্রমণ প্রতিরোধে যেসব পদ্ধতি মেনে চলা উচিত বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় তা করা হচ্ছে না বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, “মানুষ ভালো সেবা পেতে বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেখানেও সিজার করে দিচ্ছে। সিজারিয়ান অপারেশনের পর ইনফেকশন হচ্ছে, পুঁজ হচ্ছে। আর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের মধ্যে তাদেরকে সঠিকভাবে কাউন্সেলিং না করায় তারা ভারি জিনিসপত্র তুলছে, ফলে প্রোলাপস হচ্ছে। এছাড়া ঠিকমত খাওয়াদাওয়া না করায় আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যামিনিয়া, ক্যালসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি হচ্ছে।”
সি-সেকশন বেশি হওয়ার কারণ কী, প্রশ্ন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন বন্ধ হবে কবে?
আইসিডিডিআরবি,র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিজারিয়ান সেকশন কেন হচ্ছে তার কোনো যথার্থতা এবং যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হয় না- এ কারণে বাড়ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে এটা আরও বাড়বে।
“আরেকটা জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে- মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া সিজারিয়ান সেকশন করা যাবে না।”
সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, ইউএসএইডের পরিচালক (পপুলেশন, হেল্থ অ্যান্ড নিউট্রিশন) ক্যারি রাসমুসেন, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।