দেশে ব্লগার লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর জঙ্গি হামলার ধারাবাহিকতায় সাত বছর আগে এই দিনে খুন হন নাজিমুদ্দিন সামাদ।
Published : 06 Apr 2023, 12:46 PM
তদন্ত শেষ হতেই লেগেছিল চার বছর, পরের তিন বছরে অভিযোগ গঠনের সাতটি তারিখ পড়েছে, কিন্তু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যা মামলার বিচার আর শুরু হয়নি।
অধিকাংশ তারিখে কারাগার থেকে আসামিদের না পাঠিয়ে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা থাকে, অন্য মামলায় আসামিদের অন্য কোনো জেলায় পাঠানো হয়েছে।
আসামিরা অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় এবং আসামিপক্ষের সময় আবেদনের কারণেও কয়েকবার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ এ মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। সেদিনও কারাগারে থাকা আসামিদের ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালে হাজির করা হয়নি। সে কারণে ২৩ মে নতুন তারিখ রেখেছে আদালত।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ সিলেট শাখা বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ফেইসবুকে ধর্মান্ধতা ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে সমালোচনামূলক লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
দেশে ব্লগার লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর জঙ্গি হামলার ধারাবাহিকতায় সাত বছর আগে এই দিনে খুন হন ওই তরুণ।
২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস থেকে গেণ্ডারিয়ার মেসে ফিরছিলেন নাজিম। পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে তাকে ছুরি মেরে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস এর বাংলাদেশ শাখা আনসার আল-ইসলাম ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে তখন খবর দিয়েছিল ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বরাবরের মতই বলেছিল, এটা দেশীয় উগ্রবাদীদের কাজ।
ওই ঘটনায় পরদিন সূত্রাপুর থানার এসআই মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। চার বছর পর ২০২০ সালের ২০ অগাস্ট নয় জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
সেখানে প্রধান আসামি করা হয় সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে চাকরি হারানা সৈয়দ জিয়াউল হককে। দেশের গোয়েন্দারা তাকে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে চিহ্নিত করলেও তার হদিস এখনও মেলেনি।
মামলার আসামিদের মধ্যে জিয়া ছাড়াও আকরাম হোসেন, মো. ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহের ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক এবং মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদ পলাতক রয়েছেন।
এছাড়া রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে রায়হান, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ আছেন কারাগারে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে জারি করেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ।
পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পলাতক পাঁচজনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত। সম্পত্তি ক্রোকের প্রতিবেদন দাখিল হলে ১০ মে আসামিদের আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ২০২২ সালের ২৫ জুলাই বিচারক অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। কিন্তু তারিখের পর তারিখ পার হলেও মামলার বিচার আর শুরু করা যায়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার খান জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মামলায় জিয়াসহ পাঁচজন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয় আদালত। তারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় সম্পত্তি ক্রোকসহ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। সব মিলিয়ে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হতে একটু সময় লেগেছে।”
আসামি পক্ষে প্রধান আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি ওকালতনামা জমার পর আর কোনদিন আসামিদের এজলাসে পাইনি।”
দফায় দফায় তারিখ গেলেও মামলার বিচর শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা, আইনজীবী পারভেজ হাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের মামলার বিচার তাড়াতাড়ি শুরু করে তাড়াতাড়ি শেষ হওয়া উচিত।”
নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার ৪ বছর পর অভিযোগপত্র
আসামিরা গরহাজির, পেছাল নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যামামলার অভিযোগ গঠন
ব্যস্ত স্থানে নাজিমকে মেরে হেঁটে চলে যায় খুনিরা: প্রত্যক্ষদর্শী