সাত কিলোমিটার দূর থেকে গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে সিটি নির্বাচনের ভোট দিতে এসেছিলেন প্রবীণ রমজান আলী। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করে ভোটকক্ষেও ঢোকেন। কিন্তু ভোট দিতে পারছিলেন না। চারবার তিনি ছুটে আসেন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে।
কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টরা তাকে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিলেও বারবার ভুল করছিলেন। পঞ্চমবারের চেষ্টায় ঠিকমত বোতাম চেপে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পেরেছেন তিনি।
ইভিএমে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রমজান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার-পাঁচবার গেছি, বারবার হইয়া যায়। শেষ পর্যন্ত দিতে পারছি।”
তিনি ভোট দেন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ভালো দেখছি। দেখি সারাদিনে কী হয়।”
একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা আবেদ সরকারের অভিজ্ঞতা রমজান আলীর চেয়ে ভিন্ন। একবারের চেষ্টাতেই ভোট দিয়ে শেষ করেন তিনি।
৬৫ বছর বয়সী এই ভোটার বলেন, “নিয়মটা ঠিকমত জানলে ভোট দেওয়া একদমই সহজ।”
পাঁচ বছর আগে গাজীপুরে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছিল ইভিএমে। এবার সব কেন্দ্রে মেশিনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।
ভোটের আগেই নানাভাবে ভোটারদের জানানো হয়েছিল মেশিনে কীভাবে ভোট দিতে হবে। তবে কেন্দ্রে এসে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। এদের বেশিরভাগই প্রবীণ। তাদের কারও কাছে ইভিএম ‘যন্ত্রণার’, কারও কাছে অবশ্য ‘খুব সহজ’।
তবে তরুণরা সহজেই ভোট দিয়েছেন। কম বয়সীদের মধ্যে ভোট নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসেনি বললেই চলে।
নির্বাচনী কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, যেসব কেন্দ্রে প্রবীণ ভোটারের সংখ্যা বেশি, সেখানে ভোট দিতে দেরি হচ্ছিল। কারণ, কাউকে কাউকে বেশ কয়েকবার দেখিয়ে দিতে হয় ভোটদান প্রক্রিয়া।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারলেও ভোটকক্ষ খুঁজে পেতে কষ্ট হওয়ার কথা জানান ওবায়দুল হক। জীবনে অনেক ভোট দিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী এই মানুষটি। এবারই প্রথম দিলেন ইভিএমে।
মেশিনে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোট দেওয়াটা দেখিয়ে দিয়েছে ওরা। ঠিকঠাক মতই দিয়েছি।”
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ছিল দুটি ভোটকেন্দ্র। কেন্দ্রের বাইরে লাইন থাকলেও ভোট দিতে বেশ দেরি হচ্ছিল।
সেখানকার একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, “ইভিএম মেশিন নতুন তো অনেকের কাছে… আবার অনেকে বয়স্ক ভোটার। এ কারণে একটু সময় নিচ্ছে আরকি। সবাই পারদর্শী হলে আরও দ্রুত দিয়ে দিতে পারত।”
টঙ্গীর মাদরাসাতুল ইসলাহ ও শামসুন্নাহার মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটারদের মধ্যেও কঠিন ও সহজের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
ওই কেন্দ্রে রয়েছে ৬টি কক্ষ। সকাল ১০টার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যেসব ভোটকক্ষে বয়স্ক ভোটার বেশি, সেসব কক্ষের সামনে রয়েছে ভোটারদের সারি। তীব্র গরমের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
১৯ বছর বয়সী হালিমা আক্তার জীবনে প্রথমবারের মত ভোট দিয়েছেন। উত্তরা ইউনাইটেড কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, “আসলাম আর ভোট দিয়ে দিলাম। খুব সহজে ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।”
প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর অল্প সময়ের মধ্যে ভোট দিয়ে বের হয়ে ৬৪ বছর বয়সী মমতাজ বেগম বলছিলেন, “ভোট দেওয়া একদম সহজ। মার্কায় চাপ দেওন যাইব না, সাদা বুতামে চাপতে হবে, তারপর সবুজ বোতাম। খুব সহজে ভোট দিয়ে দিছি। জানলে আর খেয়াল রাখলে একদমই সহজ।
ওই কেন্দ্রের আরেক ভোটার সোনিয়া বেগমকে ভোট দিতে হয় তিনবারের চেষ্টায়। নির্বাচনী কর্মকর্তারা শিখিয়ে দিলেও দিলেও পারছিলেন না তিনি।
৩৯ বছর বয়সি এই নারী বলেন, “আমি বুঝি নাই, এ কারণে কয়েকবার ফিরে আসছি। পরে ঠিকমত বুঝতে পারার পর ভোট দিতে পেরেছি। এই এক যন্ত্রণা! কাগজেরটাই ভালো আছিল।”
সেখানে যে দুই ভোটকক্ষের ভোটাররা অপেক্ষাকৃত তরুণ, তাদের কক্ষের সামনে ভোটারের কোনো সারি ছিল না। এসেই ভোট দেওয়া যাচ্ছিল। বয়স্কদের একটি কক্ষে সকাল সোয়া ১০টা মাত্র ২৮টি ভোট পড়লেও এই দুটিতে ৭০ করে ভোট ছাড়িয়েছে।
লাইনে দাঁড়াতে ভোটাররা আসলে ভোট দেওয়ার নিয়ম শিখিয়ে দেন আনসার সদস্যরা। তবু বুঝতে না পারলে নিয়ম শিখিয়ে দিচ্ছিলেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা।
ভোটে ধীরগতির কারণ সম্পর্কে এক প্রশ্নে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইজিং কর্মকর্তা আমিন মোহাম্মদ কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবার কাছে নতুন হওয়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে একটু সময় লাগছে বেশি। সকাল ১১টা পর্যন্ত দুই হাজার ১০০ ভোটারের মধ্যে ২২০-২৩০ ভোট কাস্ট হয়েছে।”