যেভাবে উল্টে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে ১০ চাকার ট্রাকটি

হাটখোলা সড়কের ওই স্পিডব্রেকারটি রঙ করা ছিল না, সে কারণে নতুন চালকরা রাতে বুঝতে পারেন না বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2023, 06:40 PM
Updated : 9 Nov 2023, 06:40 PM

পুরান ঢাকার ওয়ারীর হাটখোলা সড়কে যে ট্রাকটি উল্টে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে একজনের মৃত্যু ঘটিয়েছে, সেটি দুর্ঘটনায় পড়ে পূর্ণ গতিতে একটি স্পিডব্রেকার পার হতে গিয়ে।

বুধবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় টয়োটা প্রাইভেট কারের চালক মহিউদ্দীন মাল (৩২) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ধাতব প্লেইন শিট বোঝাই ট্রাকটি গতি না কমিয়ে স্পিডব্রেকার পার হচ্ছিল। তখন ওপরে থাকা প্লেইনশিটের রোল গড়িয়ে ট্রাকসহ প্রাইভেট কারের ওপর উল্টে পড়ে।

হাটখোলা সড়কের ওই স্পিডব্রেকারটি রঙ করা ছিল না, সে কারণে নতুন চালকরা সেটি বুঝতে পারেন না বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

ওয়ারি থানার এসআই নেছার উদ্দিন বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে ইউনিমার্টের বিপরীত পাশের রাস্তায় ট্রাকটি ওই দুর্ঘটনা ঘটায়। চালক মারা গেলেও গাড়ির দুই যাত্রীকে সামান্য আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ট্রাক চালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান।

ওই এলাকার দোকান কর্মী আসলাম উদ্দীন জানান, তিনি দোকান করে ফিরে যাওয়ার সময় হঠাৎ ‘দুম দুম’ শব্দ শোনেন। এরপর হইচই শব্দে এগিয়ে গিয়ে দেখেন, ১০ চাকার ট্রাকটি থেকে স্টিলের রোল গড়িয়ে ট্রাকসহ একটি গাড়ির ওপর উল্টে পড়েছে। লোকজন টানাটানি করে গাড়ির বাঁ পাশে বসা দুই ব্যক্তিকে বের করতে পারলেও চালক ভেতরে আটকা পড়ে ছিলেন।

ওই স্পিডব্রেকারটি দেখতে না পেয়ে প্রায়ই যানবাহন সজোরে উঠে পড়ে বলে জানান আসলাম।

Also Read: মাঝরাতে প্রাইভেটকারের ওপর উল্টে পড়ল ট্রাক, নিহত ১

স্থানীয় ব্যবসায়ী দুলাল কর্মকার বলেন, স্পিডব্রেকারটি যথেষ্ট উঁচু এবং রঙ করা নেই। ফলে রাতের বেলা চালকেরা প্রায়ই সেটা দেখতে না পেয়ে ধাক্কা খান।

ওয়ারি থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান জানান, ট্রাকে থাকা একেকটা স্টিলশিটের রোল ১২-১৩ টন ওজনের। এরকম তিনটি রোল ছিল ট্রাকের ওপরে, সেগুলো ঠিকমতো বাঁধাও ছিল না।

“হাটখোলা রোডের ওই স্পিডব্রেকারের কাছে এসে চালক সম্ভবত নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। এরপর একটা রোল গাড়িয়ে পড়তে গেলে ট্রাকটি ভারসাম্য হারায়। ট্রাকের ডালা ভেঙে ট্রাকসহ গাড়ির ওপর এসে পড়ে ভারী ধাতব রোল।”

ট্রাক চালক গতি না কমিয়ে স্পিডব্রেকার পার হয়েছিলেন– প্রত্যক্ষদর্শীদের এমন বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওসি বলেন, “হয়ত চালক সেটি (স্পিডব্রেকার) দেখতে পাননি। তাকে গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি জানা যাবে। তবে স্পিডব্রেকারটি মার্ক (সাদা রঙ) করা ছিল না।”

ভারী স্টিলরোল সরিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর প্রাইভেট কারের চালক মহিউদ্দীনের নিথর দেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। চালককে জীবিত উদ্ধার করতে না পারায় ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।

মহিউদ্দীনের পরিবারে আহাজারি

মহিউদ্দীনের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মগবাজার এলাকায় ভাড়া থাকতেন। দুই বছর আগে কিস্তিতে একটি পুরনো টয়োটা ফিল্ডার গাড়ি কিনে ভাড়ায় চালানো শুরু করেন।

তার স্ত্রী আরজু বেগম ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাত ১১টায় সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গে তার মোবাইলে কথা হয়। তখন তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন, “বাচ্চারা যা চায় তাই দাও, ওদের জন্যেই তো এতো কষ্ট করি।” 

কিছুক্ষণ পর পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে স্বামীর লাশ পান আরজু। আদরের সন্তানদের এখন কী হবে, আহাজারি করে তাই বলছিলেন আরজু।