প্রাথমিকভাবে এটি শনাক্ত হয়েছিল ইকুয়েডরের এমন এক গোষ্ঠীর বংশধরদের মধ্যে, যাদের পূর্বপুরুষরা তিন শতাব্দী আগে ইনকুইজিশন বা সরকারি তদন্তের সময় স্পেন ছেড়ে সেখানে পাড়ি জমান।
Published : 06 May 2024, 05:03 PM
মানবদেহে হৃদরোগের প্রবণতা ঠেকাতে পারে সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন নতুন এক উপায়ের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন এই গবেষণার তথ্য অনুসারে, ‘গ্রোথ হরমোন রিসেপ্টর ডেফিসিয়েন্সি (জিএইচআরডি)’ নামের বিরল জেনেটিক অবস্থা থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট কার্ডিওভাসকিউলার স্বাস্থ্যবিষয়ক সুবিধা পেতে পারেন আক্রান্ত রোগীরা। এটি ‘ল্যারন সিন্ড্রোম’ নামেও পরিচিত।
২৬ এপ্রিল গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘মেড’-এ, যেখানে জেনেটিক পরিবর্তন কীভাবে রোগীদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য, বিশেষ করে হার্টের ওপর প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে নতুন বোঝাপড়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছে।
‘জিএইচআরডি’ এমন এক মিউটেশনের ফলাফল, যা দেহের নিজস্ব হরমোন বৃদ্ধির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে, আক্রান্ত রোগীর দেহের অগ্রগতি আটকে যাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যাও দেখা যায়।
এ ঘটনা অত্যন্ত বিরল। গোটা বিশ্বে মাত্র চারশ থেকে পাঁচশ জন মানুষ এতে আক্রান্ত। প্রাথমিকভাবে এটি শনাক্ত হয়েছিল একুয়েডরের এমন এক গোষ্ঠীর বংশধরদের মধ্যে, যাদের পূর্বপুরুষরা তিন শতাব্দী আগে ইনকুইজিশন বা সরকারি তদন্তের সময় স্পেন ছেড়ে সেখানে পাড়ি জমান।
এটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কারণ– প্রাণীদের হরমোন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘাটতি থাকতে পারে, যা তাদের আয়ু বেড়ে যাওয়া ও বয়স-সম্পর্কিত রোগের প্রবণতা কমে আসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এখনও পর্যন্ত এইসব প্রভাব সম্পর্কে মানুষের তেমন ধারণা ছিল না, বিশেষ করে কার্ডিওভাসকিউলার রোগের ক্ষেত্রে।
প্রায় দুই দশক দীর্ঘ এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইউএসসি লিওনার্ড ডেভিস স্কুল অফ জেরোন্টোলজি’র অধ্যাপক ভ্যাল্টার লঙ্গো ও একুয়েডরের ‘ইউনিভার্সিডাড সান ফ্রান্সিসকো ডি কুইটো’র এন্ডোক্রিনোলজিস্ট জেইম গুয়েভারা-আগুয়েরে, যেখানে তারা ‘জিএইচআরডি’র বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও বার্ধক্যজনিত প্রভাবও খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন।
তাদের সর্বশেষ গবেষণায় বিশেষ পরীক্ষা চালানো হয় ‘জিএইচআরডি’ আক্রান্ত রোগীদের কার্ডিওভাসকিউলার ফাংশন নিয়ে। এতে অংশ নেন ৫১ জন, যার মধ্যে ‘জিএইচআরডি’ আক্রান্ত ছিলেন ২৪ জন ও বাকি ২৭ জন তাদের এমন আত্মীয়, যারা এ রোগে আক্রান্ত হননি, যেখানে তারা নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করেছেন।
এর মাধ্যমে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদেরকে দুটি আলাদা ভাগে বিভক্ত করে তাদের কার্ডিওভাসকিউলার প্রোফাইল ঘনিষ্ঠভাবে তুলনা করার সুযোগ পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে বেশ কিছু আকর্ষণীয় পার্থক্য উঠে এসেছে–
● ‘জিএইচআরডি’ আক্রান্ত রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম ও তাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ ছাড়া, নিয়ন্ত্রক দলের তুলনায় তাদের নিম্ন রক্তচাপের প্রবণতাও বেশি।
● এমন রোগীর হার্টের পরিধি ছোট হলেও তাদের ধমনীর দৃঢ়তা অন্যদের মতো একই রকম, যা পালসের তরঙ্গ বেগ পরিমাপ করার সময় বোঝা যায়। তবে, তাদের ঘাড়ের ধমনীর পুরুত্ব কম ছিল।
● এমন রোগীদের দেহে ‘এলডিএল কোলেস্টেরলের’ মাত্রা বেশি থাকলেও সেটি প্রায়শই ‘বাজে কোলেস্টেরল’ হিসাবে বিবেচিত। এমনকি নিয়ন্ত্রক দলের তুলনায় ‘জিএইচআরডি’ আক্রান্ত রোগীদের ‘ক্যারোটিড’ ধমনী ফলকের ব্যাপকতা অনেক কম ছিল (সাত শতাংশ বনাম ৩৬ শতাংশ)।
এ গবেষণার ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, ‘এলডিএল কোলেস্টেরল’-এর মাত্রা বেশি থাকলেও ‘জিএইচআরডি’ আক্রান্ত রোগীরা তাদের আত্মীয়দের তুলনায় কার্ডিওভাসকিউলার রোগের স্বাভাবিক বা এমনকি কম ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।