আদিবাসীদের সংবিধান ও আইন স্বীকৃত অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা।
Published : 12 Oct 2022, 10:43 PM
বান্দরবানের লামা উপজেলায় পানিতে বিষ ও ফসলে আগুন দিয়ে আদিবাসীদের ‘উচ্ছেদ চেষ্টার’ অভিযোগ এবং ৩০০ কলাগাছ কেটে ফেলাসহ তাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৩৬ জন নাগরিক।
বুধবার তাদের স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন বেসরকারি সংস্থা এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
গত ২৭ এপ্রিল বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম পাড়া, জয় চন্দ্র কারবারী পাড়া ও রেংয়েন কারবারী পাড়ার বাসিন্দাদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “এই আগুনে প্রায় একশ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ পুড়ে যায়।”
ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াগুলোর বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের লোকজন তাদের ফসলে ‘পরিকল্পিতভাবে’ আগুন লাগিয়েছে। তবে ওই রাবার কোম্পানির ম্যানেজার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ওই ঘটনায় স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ। সে প্রসঙ্গ ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “ওই কমিটি লিজ বাতিলসহ ৬ দফা সুপারিশ করলেও তা কার্যকর করা হয়নি। বরং গত ৬ সেপ্টেম্বর আদিবাসীদের পানির একমাত্র উৎস পাহাড়ি ঝিরির পানিতে বিষ মেশানো হয়।
লামায় এবার ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে
“কোম্পানির লোকেরা গত ১ সেপ্টেম্বর লাংকম ম্রোসহ চার জন আদিবাসীর ক্ষেত থেকে ২৫ মণের বেশি মিষ্টি কুমড়া লুট করে নিয়ে যায় এবং সর্বশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর, রেং ইয়ুং ম্রোর বাগানের ৩০০টি কলাগাছ কেটে দেয়।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীরা থানায় মামলা পর্যন্ত করতে ভয় পান, কারণ পুলিশ বা প্রশাসন এতোগুলো ঘটনার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।”
আদিবাসীদের সংবিধান ও আইন স্বীকৃত অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের লিজ বাতিল করার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী এবং এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহ সভাপতি তবারক হোসেইন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, রিবের নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা, লেখক রাহনুমা আহমেদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আছেন বিবৃতিদাতাদের মধ্যে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত, সুমাইয়া খায়ের, তানজিম উদ্দিন খান, শাহনাজ হুদা, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, জোবাইদা নাসরীন কণা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ইসলামী বিশ্বব্দ্যালয়ের শিক্ষক ফারাহ তানজীম তিতিল, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো স্বপন আদনান, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, পারভেজ হাসিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, আদিবাসী অধিকার কর্মী লেলুং খুমি ও হানা শামস আহমেদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও আলোকচিত্রী মাহমুদ রহমান স্বাক্ষর করেছেন বিবৃতিতে।