শিশুদের বই প্রকাশ এখন ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে, বলছিলেন এক প্রকাশক।
Published : 08 Feb 2024, 11:10 PM
একুশে বইমেলার শিশু চত্বরে সিসিমপুর স্টলে এসে বই দেখছিল রুফাইদা। বই নেড়ে চেড়ে দেখার সময়ই সে বলছিল, তার বেশি ভালো লাগে গল্পের বই। মেলায় এসে তিনটা বইও কিনে ফেলেছে। এ স্টল থেকেই কিনেছে 'ইলিকাস মিলিকাস' নামের একটি বই।
রুফাইদার ভাষ্য, পড়ার চেয়ে বইয়ে আঁকা ছবিগুলো যেন তাকে আরও বেশি আকর্ষণ করে।
তার চেয়ে ছোট বড় অনেক শিশু, কিশোর-কিশোরীদের বইমেলার শিশুচত্বরের বিভিন্ন স্টলে ঘুরতে দেখা যায়। তাদেরই একজন সাউদা। বড় বোন ফারহানা এলাহীর সঙ্গে মেলায় এসেছে সে। দ্বিতীয়বারের মতো মেলায় এলেও এখনও কোনো বই কেনা হয়নি।
শিশুচত্বরে থাকা বিভিন্ন স্টলের প্রকাশকরা বলেন, বই রঙিন না হলে আগ্রহ দেখায় না শিশুরা। এজন্য বইয়ের উৎপাদন খরচও বেশি হয়।
বাবুই প্রকাশনী এবার মেলায় এনেছে ১৪টি নতুন বই। এটির স্বত্ত্বাধিকারী কাদের বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "শিশুদের বই প্রকাশ এখন অনেক ব্যয়বহুল। পুরো বইটাই রঙিন করে ছাপতে হয়, না হলে শিশুরা আকর্ষণ বোধ করে না। যার জন্য কাগজ এবং ছাপার খরচও বেশি হয়।"
বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে মন্দিরের গেইট দিয়ে প্রবেশ করলেই ডান দিকে শিশুচত্বর। এখানে রয়েছে ময়ূরপঙ্খী, ঘাশফড়িং, শিশুবেলা ঝিলমিল, প্রগতি পাবলিশার্স, ফুলঝুড়ি, বাবুই, শৈশব প্রকাশ, চিরন্তন, সাত ভাই চম্পা, ছোটদের বই, বাংলা একাডেমিসহ শিশুদের বই প্রকাশ করে এমন বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল।
ময়ূরপঙ্খী এবার মেলায় এনেছে ছয়টি নতুন বই। আরও কয়েকটা বই আসবে, বললেন স্টলের ব্যবস্থাপক চন্দনা বিশ্বাস।
তবে মেলায় এখনও সাড়া কম দাবি করে তিনি বলেন, "এবার লোক সমাগম ভালো হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বিক্রি বেশি হচ্ছে না।"
তাদের প্রকাশিত নতুন বইয়ের মধ্যে আছে-নাজিয়া জাবীনের লেখা 'পাখিদের পাঠশালা', বেয়াট্রিক্স পটারের লেখা থেকে বহ্নি বেপারী অনুদিত 'খরগোশছানা পিটার', ফারজানা তন্নীর গল্পগ্রন্থ 'একদিন সাগরপাড়ে', মারি-দেজ-এইল এর 'ডোডোকাহিনী'।
ঘাশফড়িং এর স্বত্ত্বাধিকারী রত্না দাশ এবার ৯টি নতুন বই মেলার আনার তথ্য দিলেন। আরও বেশ কয়েকটি বইয়ের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, "আমরা বয়স বিবেচনায় রেখে বই করার চেষ্টা করি। ৩-১২ বছরের বাচ্চাদের জন্য বেশ কিছু বই রয়েছে। তারা খেলতে খেলতে পড়বে। এমন বই এনেছি।"
নয়াপল্টন থেকে বোনকে নিয়ে মেলায় আসা ফারহানা এলাহী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বইমেলায় আসতে ভালো লাগে। আব্বু আমাদের বই কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন। এজন্য মেলায় এসেছি বই কিনতে এবং ঘুরতে।"
কমিক্সের বইয়ের প্রতি শিশুদের রয়েছে আলাদা আগ্রহ। সেই আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলতেই কমিক্সের প্রকাশনায় বিশেষ নজর ঢাকা কমিক্স এর। প্রকাশনীটির স্টলে গিয়ে দেখা যায় তারা এবার 'কমিক্স সংকলন' প্রকাশ করেছে।
বিক্রয়কর্মী আশিকুর রহমান বলেন, ঢাকা কমিক্স এনেছে 'কমিক্স সংকলন' এবং 'পিশাচ কাহিনী ত্রিলজি'। আরও ৩টা নতুন বই আসবে মেলায়।
বইমেলার শিশুচত্বরের আরেক আকর্ষণ সিসিমপুর মঞ্চ। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা, বিকেল সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ মঞ্চে শিশুদের আনন্দকে রাঙিয়ে দেয় সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র ইকরি, টুকটুকি, হালুম, শিকু।
মঞ্চের পাশেই রয়েছে সিসিমপুর স্টল। এ স্টলের বিক্রয়কর্মী সায়মা স্মৃতি বলেন, সিসিমপুর এবারের মেলায় এনেছে ১৭টি নতুন বই। যার মধ্যে রয়েছে- 'ওয়ানগালা উৎসবে ইকরি', 'অদ্ভূত সব বুদবুদ', 'সদয় হই', 'এসো গুনি, 'শিকুর গাড়ি', 'ইলিকাস মিলিকাস', 'সাহসী সামাল' প্রভৃতি।
শুধু শিশুচত্বরে নয়, মেলার অন্যান্য স্টলেও শিশুকিশোরদের জন্য নানা রকম বই রয়েছে।
মাসুম আওয়ালের ছড়ায় ছড়ায় ‘আমার বর্ণমালা’ সিরিজ প্রকাশ করেছে দোলন। এ সিরিজের চারটি বইয়ের নাম-‘আমার বর্ণমালা’, ‘বর্ণমালা পাখি’, ‘বর্ণমালার ফুল’ ও ‘বর্ণমালার ফল’। মেলার লিটলম্যাগ চত্বরে ৪০ নম্বর দোলন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইগুলো।
বৃহস্পতিবার ছিল বইমেলার অষ্টম দিন। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বিকালের পর থেকেই মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে। স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যেমন বই দেখতে ভিড় করতে দেখা গেছে, তেমনি খোলা প্রাঙ্গণে ও লেকের কাছে আড্ডায় মেতেছিলেন অনেকেই।
এদিন মেলায় আসেন শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহুম্মদ জাফর ইকবাল, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী, সৌমিত্র শেখরসহ অনেকে।
প্রিয় লেখকদের কাছে পেয়ে তাদের সঙ্গে অনেকেই ছবি তুলেছেন। সেলফি তোলার আবদারও মেটাতে হয়েছে লেখকদের।
জাফর ইকবাল বলেন, বাংলা সাহিত্য আরও বেশি অনুবাদ হওয়া উচিত। তবেই বাংলা সাহিত্য বিশ্বময় ছড়িয়ে যাবে। বাংলাসাহিত্যে অনেক ভালো লেখক আছেন। অনুবাদ না হওয়ার কারণে রবীন্দ্রনাথের পর কেউ নোবেল পাননি।
বই পড়ায় এ প্রজন্মের আগ্রহ কমছে বলে হতাশাও ঝরে তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, বই পাঠ জরুরি। ভালো বই, মন্দ বই। সব রকম বই পড়তে হবে। না পড়লে তো বোঝা যাবে না ভালো-মন্দ।
এদিন লেখক বলছি মঞ্চের অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক দীপু মাহমুদ, গবেষক আলী আকবর টাবী, কবি সুমন সরদার ও কথাসাহিত্যিক শাহরিয়া দিনা।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, বৃহ্স্পতিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৮০টি। অষ্টম দিন পর্যন্ত মেলায় এসেছে ৪৯৮টি নতুন বই।
মূল মঞ্চ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আহমদ শরীফ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজীব সরকার। আলোচনায় অংশ নেন মোরশেদ শফিউল হাসান ও আফজালুল বাসার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আশরাফ আহমদ, নাসরীন জাহান, কামরুল হাসান ও আলফ্রেড খোকন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম, শাকিলা মতিন মৃদুলা ও অতনু করঞ্জাই।
পুঁথি পাঠ করেন মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া ছিল এ. কে. আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দন’ এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুর সুধা সংগীতায়ন’ এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী আকরামুল ইসলাম, আবুবকর সিদ্দিক, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি, আমজাদ দেওয়ান, লাভলী দেব ও আবদুল আউয়াল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তুলসী সাহা (তবলা), সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি) ও শাহরাজ চৌধুরী তপন (গীটার)।
শুক্রবার যা থাকবে
শুক্রবার নবম দিনে মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত; এর মধ্যে বেলা ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর।
এছাড়া অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এটির উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : এস. ওয়াজেদ আলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশ নেবেন ইকতিয়ার চৌধুরী ও কুদরত-ই-হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
মেলায় কত নতুন বই? সঠিক তথ্য নেই কমিটির কাছে