শনিবার মেলার টাস্ক ফোর্স পরিদর্শনে গিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে আইএসবিএন ছাড়া পাইরেটেড বই খুঁজে পায়।
Published : 06 Feb 2024, 09:24 PM
অমর একুশে বইমেলায় নীতিমালা লংঘন করায় পাঁচ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি।
মঙ্গলবার এ চিঠি দেওয়া হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
এর আগে গত শনিবার মেলার টাস্ক ফোর্স পরিদর্শনে গিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে আইএসবিএন ছাড়া পাইরেটেড বই খুঁজে পায়। পরে টাস্ক ফোর্স এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের পর্যবেক্ষণ জানায় মেলা কমিটিকে। তার ভিত্তিতেই মঙ্গলবার কমিটি শোকজ দেয়।
নিয়ম ভঙ্গ করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- গাজী প্রকাশন (স্টল ৩৭৪-৩৭৫), বঙ্গজ প্রকাশন, (স্টল ৪০৭), কুঁড়েঘর প্রকাশনী (স্টল ৪০৩-৪০৪), তৃপ্তি প্রকাশ কুঠির (স্টল ৩৭৬-৩৭৭), বাতিঘর প্রকাশনী (৪৫৫-৪৫৬)।
টাস্ক ফোর্স কমিটির আহ্বায়ক হাসান কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পরিদর্শনে গিয়ে কিছু প্রকাশনীর স্টলে নীতিমালা ভঙ্গ হয় এমন তথ্য নিশ্চিত হই। আইএসবিএন ছাড়া বই পেয়ে সেগুলো জব্দ করি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে আসি। আমরা সেই পর্যবেক্ষণ লিখিত আকারে মেলা কমিটিকে জানিয়েছি।”
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “টাস্ক ফোর্সের পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে আমরা ৫টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ জানাতে চিঠি দিয়েছি। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব যদি সন্তোষজনক না হয়, তবে মেলা কমিটি তাদের বিরুদ্ধে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
শোকজের বিষয়ে বাতিঘর প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো এখন মেলার মাঠে নাই। চিঠির বিষয়ে বলতে পারছি না। হয়তো আমার কর্মীদের হাতে এসেছে। আমি সেটি দেখে মন্তব্য করব।"
মৌখিকভাবে সতর্ক করার বিষয়টি অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের কয়েকটি বইয়ের আইএসবিএন নম্বর নিয়ে অভিযোগ করেছে। আমরা সে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হব। আর চিঠিটা দেখার পর আমাদের করণীয় বিষয়ে বলব। চিঠি পেলে আমরা অবশ্যই আমাদের ব্যাখ্যা জানাব।”
এদিকে মেট্রোরেল চালুর কারণে এবার বইমেলায় শুরু থেকেই লোক সমাগম হলেও বই বিক্রি এখনো জমেনি বলে জানান প্রকাশকরা।
আগারগাঁওয়ে অফিস শেষ করে প্রতিদিনই বিকালে মেলায় আসছেন তরুণ কবি অপু মেহেদী।
তিনি বলেন, “অফিস থেকে বের হয়ে হেঁটে মেট্রোতে চড়ি, তারপর মেলায়। এখানে এসে অনেকের সাথে আড্ডা হয়। এজন্যই আসা।”
বিকালে কলেজের পোশাক পরা ছয়জনের একটা দলকে দেখা যায়, মেলায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে। তারা জানান, মেট্রোতে চড়ে মেলায় এসেছেন।
কবি শাহেদ কায়েসের নতুন বই 'মুক্তিকামী মানুষের কবিতা' প্রকাশ করেছে বৈভব। মাহমুদ দারবিশের লেখা থেকে ভূমিকা ও ভাষান্তর করেছেন শাহেদ কায়েস।
মেলার মাঠে শাহেদ কায়েসের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, “এবার মেলা জমজমাট হবে বলেই মনে হচ্ছে। মেট্রো থাকায় অনেক বন্ধুদের দেখছি মেলায় প্রতিদিন আসছে, আড্ডা হচ্ছে। আগে তো যানজটের শঙ্কায় অনেকে আসতে চাইত না।”
মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৮টি। এদিন লেখক বলছি মঞ্চের অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক খান মাহবুব, শিশুসাহিত্যিক শেলী সেনগুপ্তা, গবেষক নিগার চৌধুরী ও কবি আহমেদ শিপলু।
মূল মঞ্চ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশ নেন শাহিদা খাতুন ও সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবদুল খালেক।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি সাজ্জাদ আরেফিন, ফারহান ইশরাক ও সৌম্য সালেক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝর্ণা সরকার ও মো. কামাল হোসেন।
দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠন’।
এছাড়াও ছিল কাঙাল মজিবরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কাঙাল হরিনাথ সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী নারায়ণ চন্দ্র শীল, বিমল বিশ্বাস, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, শান্তা সরকার, শ্যামল কুমার পাল, আজমা সুরাইয়া শিল্পী এবং শারমিন সুলতানা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন জয়সিংহ রায় (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি) এবং বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।
বুধবার যা থাকবে
বুধবার বইমেলার সপ্তম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: গোবিন্দ চন্দ্র দেব’ শীর্ষক আলোচনা।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়। আলোচনায় অংশ নেবেন জয়দুল হোসেন ও সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।