অগ্নি দুর্ঘটনা: দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ কর্মকর্তার সর্বোচ্চ জরিমানা চায় মানবাধিকার কমিশন

কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, ভবন মালিকসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হলে অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2024, 03:30 PM
Updated : 3 March 2024, 03:30 PM

অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার অধীনে নিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ।

রোববার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে ‘অগ্নি দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি: প্রাণহানির শেষ কোথায়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে জোর দেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, “দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ জরিমানার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। দেশে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। তাই সমস্যা কমছে না।”

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে প্রাণঘাতি আগুনে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মীদের দায় নিয়ে জোর প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের করা মামলায় রাজউক কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ হওয়ার’ তথ্য মিলেছে। তবে সেই কর্মকর্তা কারা, সে বিষয়ে মামলায় কিছু বলা হয়নি, তাদের কাউকে আসামিও করা হয়নি।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যাদের দেখার দায়িত্ব ছিল, তারা কী করল? সদে প্রশ্ন উঠেছে, রাজউকের কর্মকর্তারা কোথায়?

এটি কেবল এবারের চিত্র না। প্রতিবারই এ ধরনের দুর্ঘটনার পর ভবনের ত্রুটির কথা শোনা যায়, সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধেও অবহেলার অভিযোগ ওঠে।

সংসদেই সাবেক একজন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, অর্ধযুগ আগে আলোড়ন তৈরি করা একটি ঘটনায় তারা যাদের দায় চিহ্নিত করেছিলেন, তাদের সবাইকে আসামিও করা যায়নি।

গ্রিন কোজি কটেজের প্রতিটি ফ্লোরে যেভাবে রেস্তোরাঁ বসানো হয়েছিল, তার কোনো অনুমোদন ছিল না। ভবনটির বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও তা ছিল অফিস হিসেবে ব্যবহারের। তারপরেও আট তলা ভবনটি ঠাসা ছিল রেস্তোরাঁয়। প্রতিটির ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সেই ভবনটি যে অগ্নি ঝুঁকিতে ছিল, তা জানত ফায়ার সার্ভিস। একবার নয়, তিনবার নোটিস করেছে সংস্থাটি। কিন্তু আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ, তাদের মামলা করার ক্ষমতা নেই। অনুমোদন ছাড়াই ভবনটিতে চুলা ও গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার হলেও ব্যবস্থা নেয়নি বিস্ফোরক অধিদপ্তর।

গত বছরের মার্চে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ২৩ জনের মৃত্যুর পর জানা যায় ভবনটি পাঁচ তলা করার অনুমোদন ছিল রাজউকের।

বিস্ফোরণের পর রাজউক কর্মকর্তারা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সাত তলা ওই মালিকের বাসায় গেলে ১০ তলা পর্যন্ত করার আরেকটি নকশা দেখানো হয়। তবে ওই নকশায় রাজউকের কোনো সিল বা স্বাক্ষর ছিল না।

একই বছরের নভেম্বরে মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুনের পর জানা যায়, সেই ভবনটি দেশের ইন্টারনেট সেবার ‘মেরুদণ্ড।’

সেখানে রয়েছে বড় কয়েকটি কোম্পানির ডেটা সেন্টার, যারা অনেকগুলো আইআইজি ও আইএসপি কোম্পানিকে সেবা দেয়। আইসিএক্স সেবার কোম্পানিও সেখানে রয়েছে, যে কারণে বিভ্রাট হচ্ছে মোবাইল যোগাযোগে। বলা হচ্ছে, দেশের মোট ব্যান্ডউইথের অর্ধেকই যাচ্ছে ওই ভবনের আইআইজিগুলোর মাধ্যমে।

এরকম একটি ভবনে সামগ্রিক এবং স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। অনেকে জানতেনই না যে ভবনে একটি ‘জরুরি নির্গমন পথ’ বা ফায়ার এক্সিট আছে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা হয় না, নেই শাস্তির নজির। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে দেশে মোট ২২টি আইন এবং হাই কোর্টের একটি রায় আছে।

“অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, ভবন মালিকসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হলে অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।”

Also Read: খাজা টাওয়ার কত ‘বড়’, জানা গেল আগুন লাগার পর

Also Read: আগুন-বিস্ফোরণ: ‘সরকারি কর্মকর্তারা কোথায়?’

Also Read: ছাড়পত্রের পর ভবনে নজরদারি না থাকা নিয়ে প্রশ্ন চুন্নুর

যথাযথ মনিটরিং করে লাইসেন্স দেওয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন কামাল উদ্দিন আহমেদ।

সম্মেলনে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কিছু পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও সুপারিশ দিয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক কাজী আরফান আশিক, সদস্য সেলিম রেজা, তানিয়া হক ও আমিনুল ইসলাম।