Published : 03 May 2025, 01:18 PM
পরিবর্তনের আহ্বানকে ছাপিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির শুল্ক নীতি নাগরিকদের মধ্যে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে তার জেরেই অস্ট্রেলিয়া ফের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে যাচ্ছে বলে সর্বশেষ জনমত জরিপেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
শনিবার তাসমানিয়া সাগর তীরবর্তী অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে; যাতে অংশ নেওয়া ভোটারদের চিন্তায় ট্রাম্পজমানার অস্থিরতা মোকাবেলার পাশাপাশি জীবনযাপনের ব্যয়, ভেঙে পড়া জনস্বাস্থ্যসেবা ও সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়া আবাসনও প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে এক কোটি ৮০ লাখের মতো ভোটার তাদের রায় জানানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ফল পেতে কয়েক দিন বা সপ্তাহও লেগে যেতে পারে, তবে নির্বাচন কমিশন থেকে আসা অনানুষ্ঠানিক ফলেই কে পরের সরকার গড়তে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত মিলবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
শুক্রবার খবরের কাগজ দ্য অস্ট্রেলিয়ানে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে আলবানিজের লেবার পার্টিকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী লিবারেল-ন্যাশনালদের চেয়ে ৫ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
বেশ কিছু জনমত জরিপ বলছে, ভোটে লেবাররা জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না তারা, সেক্ষেত্রে তাদেরকে বাম ঘরানার গ্রিন পার্টিসহ অন্যান্য ছোট দল এবং স্বতন্ত্র সাংসদদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
যেভাবেই হোক, ফের সরকার গড়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ। মেলবোর্ন থেকে টেলিভিশনে দেওয়া এক মন্তব্যে তিনি বলেছেন, তার মধ্য-বামপন্থি সরকার ‘সত্যিকারের শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে’।
“আমাদের প্রকৃত মজুরি বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি কমছে,” ভোট দিতে নিজ শহর সিডনিতে রওনা হওয়ার আগে এমনটাই বলেছেন তিনি।
পাঁচ সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারে এই লেবার নেতা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় গেলে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনা, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতি এবং আবাসনে খরচ জনগণের সাধ্যের মধ্যে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিরোধীদলের নেতা পিটার ডাটনেরও শনিবার শুরু হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ মেলবোর্ন থেকে, সেখানে তিনি ‘দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে’ লিবারেল-ন্যাশনাল জোটকে বেছে নিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পরে তিনি সেখান থেকে নিজ রাজ্য কুইন্সল্যান্ডের প্রতি রওনা হন।
“আমাদের জোটকে সমর্থনে আজ চুপচাপ অনেক অস্ট্রেলিয়ান ভোট দিতে আসবেন বলেই মনে করছি আমি,” ব্রিসবেনে ভোট দেওয়ার পর এমনটাই বলেছেন ডাটন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান দুই দলই নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ মোকাবেলায় নানা আশ্বাস দিলেও ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে ভোটারদের মধ্যে তার প্রভাবই বেশি মনে হচ্ছে।
অভিবাসন কমানো এবং সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি আছে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডাটনের। এসব প্রতিশ্রুতির কারণে লেবার রাজনীতিকরা তাকে ‘ছোটখাট ট্রাম্প’ হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতাসীনদের আশা, ডাটনের ট্রাম্প-সদৃশ ভাবমূর্তি কিছু ভোটারকে লিবারেলদের থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।
অন্যদিকে ডাটন তার সঙ্গে ট্রাম্প কিংবা তার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার প্রশাসনের কর্মসূচির তুলনায় নারাজ। ফেব্রুয়ারিতে জনমত জরিপে আলবানিজের চেয়ে তার অবস্থান শক্তিশালী দেখা গেলেও ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর লেবারদের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে।
অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক, সেখানে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
১ কোটি ৮০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ভোটদানে যোগ্য হলেও এরই মধ্যে রেকর্ড ৮০ লাখ ভোটার শনিবারের আগেই তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন।