Published : 02 May 2025, 03:06 PM
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) প্রাথমিক প্রতিবেদনে পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার যোগসাজশের ইঙ্গিত আছে বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।
এনআইএর ওই সূত্রগুলো বলছে, পেহেলগামে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সন্ত্রাসী হামলার ছক লস্কর-ই-তৈয়বাই করেছে, এটি আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন চরদের নির্দেশনায় হয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। ছকটি পাকিস্তানে লস্করের সদরদপ্তরে চূড়ান্ত হয়েছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
বেসামরিক পর্যটকদের ওপর হওয়া ওই নৃশংস হামলার কেন্দ্রে থাকা হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই উভয়েই পাকিস্তানি নাগরিক; তারা তাদের পাকিস্তানভিত্তিক ‘হ্যান্ডলারদের’ সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং সময়, লজিস্টিকস ও হামলা কার্যকরের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নিতেন, আটক একাধিক চর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন।
হাশমি ও আলি ভাই হামলার সপ্তাহখানেক আগে ভারতে ঢোকেন; গোপন সহায়তাকর্মীদের (ওজিডব্লিউ) একটি নেটওয়ার্ক তাদের আশ্রয়, ঘোরাফেরা ও হামলার স্থান নির্ধারণসহ স্থানীয় লজিস্টিকাল সরবরাহ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তের জন্য এনআইএ বিপুল পরিমাণ ফরেনসিক ও ইলেকট্রনিক তথ্য জড়ো করে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ৪০টির বেশি কার্তুজ ব্যালিস্টিক ও রাসায়নিক পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়।
তদন্তকারীরা হামলার স্থানটির থ্রিডি ম্যাপিং করেছেন এবং উপত্যকার আশপাশের মোবাইল টাওয়ার থেকে ডাম্প ডেটাও সংগ্রহ করেছেন।
হামলার কয়েক দিন আগে ওই এলাকায় হুট করে স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল। তদন্তকারীরা বৈসরন ও এর আশপাশে অন্তত তিনটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের বিষয় নিশ্চিত হয়েছেন, যার মধ্যে দুটির সঙ্কেত শনাক্ত ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এনআইএ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮০০র বেশি লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; এখনও নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও দেড়শর ওপরে, তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদের মধ্যে গোপন সহযোগী (ওজিডব্লিউ) যেমন আছে, তেমনি জামাত-ই-ইসলামি ও হুরিয়াত কনফারেন্সের বিভিন্ন উপদলসহ নিষিদ্ধঘোষিত অনেক সংগঠনের সঙ্গে জড়িতরাও আছেন।
বারামুল্লা, অনন্তনাগ, সোপোরে, পুলওয়ামা ও কুপওয়ারাসহ একাধিক জেলায় অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীদের সহায়তাকারী সন্দেহে অনেকের বাড়িঘরেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
তল্লাশি হয়েছে ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ হাইজ্যাকের ঘটনার অন্যতম মূল চরিত্র মুশতাক আহমেদ জারগার ওরফে লাত্রুমের বাড়িতেও; মুশতাক এখন পাকিস্তান থেকেই কার্যক্রম চালান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামলাকারীদের গতিবিধি শনাক্ত করতে এনআইএ পেহেলগাম ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট ও জনবহুল স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের চলাচলের ধরন চিহ্নিত করার কাজও চলছে।
হতাহতদের পরিবারের সদস্য, ঘোড়াচালক, খাবার বিক্রেতাসহ ডজনের বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, হামলাকারীদের শরীরে ক্যামেরা লাগানো ছিল; প্রচারের উদ্দেশ্যে পুরো ঘটনাটি রেকর্ড করতেই সম্ভবত শরীরে ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন তারা।
২০২৪ সালের সোনামার্গে হামলায়ও ‘লস্করের একই ইউনিট’
এনআইএ পেহেলগামে হামলার সঙ্গে ২০২৪ সালে সোনামার্গে জেড-মোড় টানেলের কাছে হওয়া সন্ত্রাসী হামলার যোগসূত্রও পেয়েছে।
গত বছরের ওই হামলায় ছয় শ্রমিক ও এক চিকিৎসক মারা পড়েছিল।
লস্কর-সমর্থিত একই ইউনিটই এ দুটি হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সোনামার্গে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত হওয়া জুনায়েদ আহমেদ ভাট ২০২৪ সালে এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সোনমার্গে হামলাকারীদের মধ্যে হাশিম মুসাও ছিল বলে সন্দেহ তদন্ত কর্মকর্তাদের। তাদের ধারণা, হাশিম দুই হামলাতেই অংশ নিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পেহেলগামে হামলায় জড়িতরা সপ্তাহখানেক আগে, ১৫ এপ্রিলের দিকে পেহেলগাম যান। এরপর তারা বৈসরন, অরু ও বেতাব উপত্যকা ও স্থানীয় একটি পার্ক ভালোভাবে রেকি করেন এবং তুলনামূলক কম নিরাপত্তা উপস্থিতি দেখে বৈসনকে হামলার স্থান হিসেবে বেছে নেন।
হামলার আগে অন্তত দুইদিন তারা বৈসরনে পর্যটকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, এ কাজে ৪ গোপন সহযোগী (ওজিডব্লিউ) তাদের সহযোগিতাও করেন, বলছে সূত্রগুলো।