আগুন-বিস্ফোরণ: ‘সরকারি কর্মকর্তারা কোথায়?’

গ্রিন কোজি কটেজে অনুমোদন ছাড়া রেস্টুরেন্ট ও চুলা ব্যবহারে রাজউকের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ হওয়ার তথ্য দিয়েছেন মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তাদেরকে আসামি করা হয়নি।

লিটন হায়দারও গোলাম মর্তুজা অন্তুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2024, 07:46 PM
Updated : 2 March 2024, 07:46 PM

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে প্রাণঘাতি আগুনে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মীদের দায় নিয়ে জোর প্রশ্ন ওঠার মধ্যে পুলিশের করা মামলায় রাজউক কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ হওয়ার’ তথ্য মিলেছে। তবে সেই কর্মকর্তা কারা, সে বিষয়ে মামলায় কিছু বলা হয়নি, তাদের কাউকে আসামিও করা হয়নি।

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রশ্ন তুলেছেন, রাজউক কর্মকর্তার ‘ম্যানেজ’ হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর কেন তাদের আসামি করা হবে না? সেই ভবনে পানি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বা ট্রেড লাইসেন্স প্রদানকারী ও কর আদায়কারী সংস্থা কেন জবাবদিহিতার মুখে পড়বে না?

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যাদের দেখার দায়িত্ব ছিল, তারা কী করল?

সংসদে প্রশ্ন উঠেছে, রাজউকের কর্মকর্তারা কোথায়?

প্রতিবারই এ ধরনের দুর্ঘটনার পর ভবনের ত্রুটির কথা শোনা যায়, সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধেও অবহেলার অভিযোগ ওঠে।

সংসদেই সাবেক একজন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, অর্ধযুগ আগে আলোড়ন তৈরি করা একটি ঘটনায় তারা যাদের দায় চিহ্নিত করেছিলেন, তাদের সবাইকে আসামিও করা যায়নি।

এবারও জানা গেছে, গ্রিন কোজি কটেজের প্রতিটি ফ্লোরে যেভাবে রেস্তোরাঁ বসানো হয়েছিল, তার কোনো অনুমোদন ছিল না। ভবনটির বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও তা ছিল অফিস হিসেবে ব্যবহারের। তারপরেও আট তলা ভবনটি ঠাসা ছিল রেস্তোরাঁয়।

সেই ভবনটি যে অগ্নি ঝুঁকিতে ছিল, তা জানত ফায়ার সার্ভিস। একবার নয়, তিনবার নোটিস করেছে সংস্থাটি। কিন্তু আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

গত বছরের মার্চে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ২৩ জনের মৃত্যুর পর জানা যায় ভবনটি পাঁচ তলা করার অনুমোদন ছিল রাজউকের।

বিস্ফোরণের পর রাজউক কর্মকর্তারা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সাত তলা ওই মালিকের বাসায় গেলে ১০ তলা পর্যন্ত করার আরেকটি নকশা দেখানো হয়। তবে ওই নকশায় রাজউকের কোনো সিল বা স্বাক্ষর ছিল না।

সেই প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার পর আলোচনা মিইয়ে যায়। রাজউকের কাউকে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আমিন হেলালী ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ব্যবসা করতে অনেক কাগজপত্র লাগে। কেউ যদি আইন না মেনে ব্যবসা করে, তা করার সুযোগ নেই। যারা দেখার দায়িত্ব ছিল, তারা কী করল?

“এ এলাকা দেখার জন্য রেগুলেটর প্রতিষ্ঠানের অনেক ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) আছে, তারা কী করেছে? আমি মনে করি, তাদের গাফিলতি আছে।”

রাজউক কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করেই’ গ্রিন কোজিতে সিলিন্ডার ও চুলা

অনুমোদন না থাকলেও রেস্তোরাঁ ব্যবসা কীভাবে চলছিল, সে প্রশ্নের সম্ভাব্য একটি উত্তর রয়েছে প্রাণঘাতি আগুনের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায়।

রমনা মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের করা এজাহারে লেখা হয়েছে, রেস্তোরাঁ মালিক, ব্যবস্থাপক ও আসামিরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের দোকান পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করে।’

তবে এই ঘটনায় যে চার জনকে আসামি করা হয়েছে, সেখানে রাজউকের কাউকে রাখা হয়নি। আবার সেই কর্মকর্তা কারা, সে বিষয়টিও মামলায় নেই।

গত বৃহস্পতিবার রাতের সেই আগুনের ঘটনায় আট তলা ভবনটিতে মারা যায় ৪৬ জন। আরো ১১ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।

পুলিশের করা মামলায় বলা হয়, “আসামিগণ ও অন্যান্য রেস্টুরেন্ট এর মালিক/ম্যানেজারগণ যথাযথ নিয়ম ব্যতিরেকে রাজউক এর দোকান পরিদর্শক অফিসারদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট স্থাপন করে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।”

এজাহারে লেখা হয়, “আসামিসহ ভবন স্বত্ত্বাধিকারীর এইরূপ অবহেলা, অসাবধানতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে ও শ্বাসনালীতে ধোঁয়া প্রবেশ করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৪৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এবং আরো বহু সংখ্যক মানুষ আগুনে পুড়ে এবং ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসনালীসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।”

রাজউকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের দায় চিহ্নিত করলেও তাদের আসামি করা হয়নি কেন- এই প্রশ্নে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে দায়ী সবাইকে আমরা চিহ্নিত করব এবং দায় থাকলে তারা আইনের আওতায় আসবেন। এজন্যই রাজউকের বিষয়টা এসেছে।”

রাজউকসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায় পেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই। এ কথা আমরা আগেই বলেছি। কারও দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”

রাজউকের ‘ম্যানেজড’ কর্মকর্তাদের আসামি না করার বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের নাম কে নেবে? একটা প্রতিষ্ঠান যদি আগাপাশতলা দুর্নীতিগ্রস্ত না হয়, তাহলে এ রকম হত না। তাদের তো কর্মীদের বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। সে যখন তাদের নাম বলে না, নাম লুকোয় তার মানে তারা এই অসাধু চক্রের অংশ।”

কেবল রাজউক না, সব সরকারি সংস্থার নাম আসা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই প্রশ্নগুলো এখন আসা উচিত যে ফায়ার সার্ভিস কী করে, রাজউক কী করে তাদের সনদ দিল এবং কী করে রাজউকের সনদের ভিত্তিতে সেবা সংস্থাগুলো তাদের পানি-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবা দিল?

“সিটি করপোরেশন কী করে তাদের ট্রেড লাইসেন্স দিল? আবার বছর বছর তাদের কাছ থেকে নিশ্চয় ট্যাক্সও আদায় করেছে। নিশ্চয় তারা রেস্তোরাঁ বা কমার্শিয়াল স্পেসের জন্য অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় করেছে। এগুলো সব কী করে ঘটল সেইসব প্রশ্নের জবাব পেতে হবে। সবাই সব কাজ করল, দিনশেষে ওই কর্মচারী ‘কেষ্ট ব্যাটাই চোর’ এটা তো হতে পারে না। “

মন্ত্রী হয়েও ‘পারেননি’ রেজাউল করিম

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের মৃত্যুর পরে এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।

দুদক বলছে, এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা থেকে ২৩ তলা অনিয়মের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। শুরুতে ১৫ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনেও নীতিমালা মানা হয়নি। তদন্তে নেমে ভবনটির দুটি নকশা হাতে পায় দুদক। একটি নকশায় ১৮ তলা ও অন্যটিতে ২৩ তলা দেখানো হয়।

ওই ঘটনায় রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন খাদেমসহ চারজনের বিচার শুরুর আদেশ এসেছে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর। তবে আড়াই বছরেও বিচার শেষ হয়নি।

সে সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম শনিবার সংসদে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, “তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে আমরা রিপোর্ট দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য, সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তারপর চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় ৫২ জনের প্রাণহানির বিচার শুরু না হওয়ায় খেদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বলেন, “প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে তাদের বিচার করা না হলে শুধু এই অপরাধ নয় অন্যদের কাছে একটা মেসেজ যাবে না।

“আমরা সে সময় ১৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে যে, মন্ত্রণালয়ের প্ল্যান ঠিক নাই। ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে। সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু এক প্রকার দায়মুক্তি দেওয়া।”

একই দিন সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রসঙ্গটি তোলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা এলাকায় রাজউকের কর্মকর্তা থাকেন। সেই কর্মকর্তারা কোথায়?  এক একটা ভবন তৈরি করা হয় একটা উদ্দেশে, কিন্তু যায় আরেকটা উদ্দেশ্যে। এই যে মানুষগুলো মারা গেল জবাব দেবে কে? এর দায়দায়িত্ব সরকারের, সরকারের সংস্থা, সরকারের অফিসের।”

রাজউক কর্মকর্তা দায় দিলেন অন্য সংস্থাকে

গ্রিন কোজির ঘটনায় ওঠা প্রশ্নের জবাব জানতে রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কিন্তু তার ফোন শনিবার দিনভর বন্ধ পাওয়া যায়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে সেই নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাসার বিটিসিএল নম্বরে কল করলে এক নারী বলেন, “উনি বাসায় নেই।”

গণপূর্ত ও গণপূর্ত মন্ত্রী র, আ, ম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি তিনি ফোন না ধরায়।

পরে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই রাজউকের দিকে আঙুল তোলে। ভবনটির নকশা ঠিক আছে কি না এবং ভবন নির্মাণকালীন কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না সে বিষয়গুলো ঠিক আছে। তবে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ভবন মালিক, ভাড়াটিয়াদের আরও সচেতন হতে হবে।”

তিনি বলেন, “রাজউকের দায়িত্ব কনস্ট্রাকশন পিরিয়ডে। একটা ভবন নির্মাণের সময় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, ক্যাজুয়ালটি হয় সেখানে রাজউকের দায় আছে। নির্মাণের পর ভবন হ্যান্ডওভার হয়ে গেছে, এরপর ভবন মালিকদের সঙ্গে রাজউকের কোনো ডিল হয় না। এটা হয় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে।

“প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। বিদ্যুৎ, পানির জন্য প্রতি মাসে সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স করার সময় যখন দেখছে সেখানে রেস্টুরেন্ট করা হচ্ছে তখনই তাদের আটকে দেওয়া যায়।”

আসামি না হয়েও রিমান্ডে

গ্রিন কোজিতে আগুনের ঘটনায় পুলিশ মোট চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলেন ‘চুমুক’ এর মালিক আনোয়ারুল হক, অপর মালিক শফিকুর রহমান রিমন, ভবনের ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল এবং কাচ্চি ভাইয়ের বেইলি রোড শাখার কর্মকর্তা জয়নুদ্দিন জিসান।

তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকার একজন বিচারক। তবে এদের মধ্যে শফিকুর রহমান রিমন ও জয়নুদ্দিন জিসান আসামিই নন।

পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিমন এবং জিসানকে সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে নাম যুক্ত হবে। কার কতটুকু দায় সে ব্যাপারে যাচাই করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ‘স্বত্বাধিকারী’ এবং সোহেল গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।”

পুলিশের মামলায় ভবনটির রেস্টুরেন্টের একাধিক কর্মচারীকে আসামি করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্মচারীরা আর কতটুকু জানেন? ভবনের মালিককে আপনি ধরলেন না, আর পেটের দায়ে যারা এখানে চাকরি করতেন তাদের নিয়ে টানাটানি করছেন। তারা কতটুকুই বা জানেন?”

আসামি কারা, কী অভিযোগ

চা কফির দোকান ‘চুমুক’ এর মালিক আনোয়ারুল হককে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় দুই নম্বরে রাখা হয়েছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ‘স্বত্বাধিকারী’। তবে কারো নাম নেই।

ভবনের ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলম বিপুলকে ৩ নম্বরে এবং বিরিয়ানির দোকান ‘কাচ্চি ভাইয়ের মালিক মো. মোজেল সিরাজকে ৪ নম্বরে রাখা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, “প্রাথমিকভাগে জানা যয় যে, ভবনটির স্বত্বাধিকারী এবং ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এবং দোকান ভাড়া দেয়। উক্ত রেস্টুরেন্টগুলো যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যতিরেকে রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার এবং চুলা ব্যবহার করে থাকে।

“…রেস্টুরেন্ট মালিকরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে এবং জন নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধানতা, বেপরোয়া এবং তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং বিপজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিল।”

রেস্তোরাঁগুলো হল ‘চুমুক’ ফাস্ট ফুড, কাচ্চি ভাই, মেজবানী, খানাস ফ্ল্যাগশিপ, স্ট্রিট ওভেন, জেস্টি, হাক্কা ঢাক্কা, শেখহলি, ফয়সাল জুসবার (বার্গার), ওয়াফেলবে, তাওয়াজ, পিজাইন, ফোকো, এস্ত্রোশিয়া।

তবে এসব খাবারের দোকানের মধ্যে কেবল চুমুক ও কাচ্চি ভাই সংশ্লিষ্টরা আসামি হয়েছেন বা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এসআই শহিদুল এজাহারে লিখেছেন, “আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে উল্লিখিত আসামিসহ ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থিত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বাণিজ্যিক সনদ সংগ্রহ করেন।”

ভবনটির যে সব ফ্লোরে রেস্তোরাঁ আছে, সেসব রেস্তোরাঁ মালিকরা রান্না করার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার বা চুলা ব্যবহার করতে ফায়ার সার্ভিস অফিস থেকে কোনো অনুমতিপত্র নেননি বলেও জানতে পেরেছেন মামলার বাদী।

তিনি এজাহারে লিখেছেন, অগ্নি নির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ অন্যান্য ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রপাতি ওই ভবনে রাখা হয়নি। এমনকি ভবনে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নেই।

কী বলছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ?

পুলিশের করা মামলায় আসামি করার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জনসংযোগ প্রধান গাজী আহমদ উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ভবনের সাথে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের এখন আর কোনো সম্পর্ক নাই।

“আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ ডেভেলপার হিসাবে ভবনটি নির্মাণ করে ২০১৫ সালে নিয়মানুযায়ী জমির মালিক এবং যারা ক্রেতা ছিলেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন করে বুঝিয়ে দিয়েছে। ফলে এখন ভবনের কোনো মালিকানায় নেই গ্রুপ।”

ভবনের ব্যবস্থাপক হিসাবে মুন্সি হামিমুল আলম বিপুলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক প্রশ্নে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের কর্মকর্তা বলেন, “ভবনটি বর্তমানে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা পরিচালিত হয়। গ্রুপের ‘আমিন মোহাম্মদ প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট’ নামে আলাদা ব্যবসা আছে । এই প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট থেকে বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি সরবরাহ করে থাকে। চাহিদা অনুযায়ী চুক্তি করে অ্যাসোসিয়েশনকে সেভাবেই বিপুলকে সরবরাহ করা হয়েছে।”

মামলা কোন ধারায়, শাস্তি কী

উপ কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০৪-ক/৩০৭/৩৩৮/৪৩৬/৪২৭/১০৯/৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে।

৩০৪ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি খুন নয় এমন অপরাধজনক প্রাণহানি করে, তাহলে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে কিংবা ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে।”