“যেটা দেখেছি- আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি,” বলেছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
Published : 13 Jun 2023, 01:39 AM
সংসদ নির্বাচনের এক বছরের কম সময়ে আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চোখ রয়েছে পর্যবেক্ষকদের, আর তা বুঝে এটাকে পরীক্ষা হিসেবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশনও।
তাই পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে নিজেদের আস্থা অর্জনের সহায় হিসেবে নিয়ে কাজ করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি।
গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি কপোরেশন নির্বাচন গোলযোগহীনভাবে শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনারদের চোখেমুখে ছিল স্বস্তির ভাব।
সেই ভোট শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, “আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। জনগণ ও ভোটাররা সন্তুষ্ট। প্রার্থীরা সন্তুষ্ট। আপনাদের প্রতিনিধিরা (সাংবাদিক) সন্তুষ্ট। গণমাধ্যমেই তারা এ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।”
সোমবার বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় কোনো গণ্ডগোল না হওয়ায় ইসির সন্তুষ্টি আরও বেড়েছে।
ভোট শেষে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “যেটা দেখেছি- আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি। সার্বিকভাবে যে নির্বাচনটা আজকে হয়েছে, তা বেশ সুশৃঙ্খল, আন্দমুখর পরিবেশে হয়েছে।
“গণমাধ্যমসহ সবখানে ইতিবাচক সংবাদ পেয়েছি। দু’চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক।”
বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ‘আনন্দমুখর’ পরিবেশের ভোটে সিইসির সন্তুষ্টি
বিএনপির বর্জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন সিটি নির্বাচনে গাজীপুর অনেকটা জমে উঠেছিল সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায়; সেই রেশ ছিল শেষ অবধি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে সেই নগরীর মেয়র হয়ে যান রাজনীতিতে নবিশ জায়েদা খাতুন।
মোটামুটি জমে ওঠা সেই নির্বাচন ৪৮ শতাংশ ভোটারকে কেন্দ্রে টেনে নিয়েছিল। খুলনা ও বরিশালে তেমন কোনো চমক ছিল না। তবে এখানে ভোটের হারও তারই কাছাকাছি। খুলনায় ৪৮ শতাংশ, আর বরিশালে আরেকটু বেশি, ৫১ শতাংশ।
গাজীপুরের মতো খুলনা ও বরিশালের ৪১৫ ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতেই যন্ত্রে অর্থাৎ ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
গাজীপুরে প্রশ্ন না উঠলেও খুলনায় ইভিএম নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল। ৬০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এই মেয়র প্রার্থী নিজের সন্দেহের ভিত্তি অবশ্য দেখাননি।
সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটে অনিয়ম ও কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ‘ডাকাত’র উপস্থিতির মতো কোনো ঘটনা দেখা যায়নি।
গাজীপুরের ভোটে গোলযোগ অনিয়মের অভিযোগ ছিল না, সোমবার খুলনায়ও তেমনই ছিল। তবে বরিশালে হঠাৎ উত্তাপ ছড়ায় ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতী ফয়জুল করীমের আক্রান্ত হওয়া।
দুপুরে নগরীর ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে হামলার মুখে পড়েন হাতপাখার প্রার্থী।
ফয়জুল করীম বলেন, ৩০-৪০ জন ‘নৌকা সমর্থক’ অতর্কিতভাবে তার উপর হামলা চালায়, তাকে ঘুষি মারে।
চরমোনাই পীরের ছেলে ফয়জুলের উপর এই হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তার মুরিদসহ সমর্থকরা। লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কেও নেমে পড়ে। তবে পুলিশ তাদের আটকায়।
বরিশালে ‘ঘুষিতে’ রক্তাক্ত হাতপাখার প্রার্থী
বরিশালে লাঠি হাতে হাতপাখা কর্মীদের শহরে ঢোকার চেষ্টা, থামাল পুলিশ
ঢাকায় থেকে ইসিও বিষয়টি দেখে পদক্ষেপ নেয়। হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও জানান সিইসি। সন্ধ্যার পর হামলাকারীকে আটকের কথাও জানায় বরিশাল পুলিশ।
এটাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবেই দেখার কথা জানিয়েছেন হাবিবুল আউয়াল। তবে এই ঘটনার রেশ পড়তে যাচ্ছে আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
অন্য সব দলের অনুপস্থিতিতে এই নির্বাচনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা হাত পাখার প্রার্থীদেরও সরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠল।
সোমবার ভোটে প্রার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সন্ধ্যায়ই সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী আন্দোলন।
সেখানে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল করিম বলেন, “সিলেট ও রাজশাহীতে আমাদের যে প্রার্থী রয়েছে, তাদের আমরা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদত্যাগ দাবি করছি।”
চলমান সিটি নির্বাচনের শুরুতেই নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন না হলে তার গ্রহণযোগ্যতা এমনিতেই কমে যায়। এরপরও অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ইসির কঠোর পদেক্ষপ দৃশ্যমান হলে এবং ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারলে আমরা এটা ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক বলতে পারব।
“সামনে জাতীয় নির্বাচন। এখন সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও কমিশন ভালো নির্বাচন হলে এক ধরনের স্বস্তিবোধ থাকবে।”
কিন্তু তিন সিটির নির্বাচনে অর্ধেক ভোটারও টানতে পারেনি কেন্দ্র; এখন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা সরে গেলে সিলেট ও রাজশাহীর নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কতটা থাকবে, সেদিকে তাকিয়ে থাকবেন পর্যবেক্ষকরা।
দুই সিটির ফল প্রত্যাখ্যান হাতপাখার, বাকি দুটিতেও প্রার্থী প্রত্যাহার