অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম অভিযানে সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
Published : 05 Mar 2024, 07:30 PM
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ও অননুমোদিত ভবনে যেসব অভিযান চালাচ্ছে তাতে সমন্বয়হীনতা দেখছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
একই কথা বলেছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম। তিনিও অভিযানে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনের অনির্ধারিত আলোচনায় বেইলি রোডের আগুন এবং তার পরবর্তী অভিযানের বিষয়টি উঠে আসে।
গত বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ যায়। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও সেখানে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না।
ওই ঘটনার পর ধানমণ্ডি, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একই রকম অনিরাপদ পরিবেশে ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে। সমালোচনার মুখে রোববার থেকে রাজধানীতে যে যার মত করে অভিযানে নামে রাজউক, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও র্যাব।
আবাসিক ভবনে নিয়মের বাইরে গিয়ে বানানো রোস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এসব অভিযানে, আবার কোনো কোনো জায়গায় গ্রেপ্তার ও জরিমানাও করা হচ্ছে।
ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সরকারি সংস্থাগুলোর চালানো অভিযানের সমালোচনা করে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি একে ‘হয়রানি’ বলছে।
সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই মুহূর্তে অভিযানের নামে সারা ঢাকা শহরে একটি তাণ্ডব চলছে।
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানি না। কিন্তু দেখলাম বিভিন্ন দপ্তর এত তড়িৎগতিতে...। রাজউক একদিকে যায়, গিয়ে একটি হোটেল বন্ধ করে। আবার দক্ষিণের সিটি করপোরেশন তারা যাচ্ছে এক জায়গায়। ফায়ার সার্ভিস যাচ্ছে (অভিযানে)। একটা প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে গেছে। কে গিয়ে কোনটা ভাংবে, কোনটা আটকাবে, কোনটা ধরবে। মনে হচ্ছে একটা সমন্বয়হীনতার মধ্যে চলছে।
“আমাদের প্রশ্ন হলো রাজউক থেকে এগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত করা হয়েছে, কোন কোন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। কোন কোনগুলোতে আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে, কোন সময়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যারা সংশ্লিষ্ট বিভাগ তারা যদি একটা সমন্বয় করে কমিটি করে একটা একটা করে ধরে তাহলে ভালো হয়। তিন/চারটা বিভাগ এখন তড়িৎ অ্যাকশন নিচ্ছে। তারপর কয়েকদিন পরে দেখা যাবে আর কেউ নেই। একদম নীরব নিস্তব্ধ হয়ে যাবে।”
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, ঢাকা শহরে ১০ হাজার ১০৬টি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে আটটি মার্কেট অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, “এসব ভবনের মালিক ও নির্মাতাদের সাথে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে যেকোনো সময়ে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গাউছিয়া মার্কেটে আমি গিয়েছি, ঈদের সময় হাঁটা যায় না, অটোমেটিক চলে যেতে হয়। সেখানে একটি ঘটনা ঘটলে মারত্মক অবস্থা হয়ে যাবে।”
সময়ন্বহীনতার অভাবে আবারও সমস্যা হবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে চুন্নু বলেন, “রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার ব্রিগেড হোক…সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এক ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে দোকান ভাঙতেছে, আরেকজন গিয়ে বলছেন স্টপ করেন। এতে করে এলোপাতাড়ি হচ্ছে। যারা দায়িত্বশীল তারা সমন্বিতভাবে ধীরেস্থিরভাবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে একটি ব্যবস্থা নেন, যাতে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।”
কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিগুলো সরিয়ে নেওয়ার দাবি
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম বলেন, “পুরান ঢাকায় এ ধরনের একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিগুলো সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু কার্যকরী করতে গিয়ে দেখা যায় বাসিন্দারা এ কাজে সহায়তা করে না। কাজেই বাসিন্দারাদেরও চিন্তা করতে হবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তারাই। কাজেই এই কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিগুলো সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় বাণিজ্যিক জায়গটা যদি সরকার নির্ধারিত জায়গায় হয় তাহলে ফায়ার এক্সিট বাধ্যতামূলকভাবে করা হয়। কিন্তু যত্রতত্র গড়ে ওঠা এবং যেগুলো বাসাবাড়ির জন্য তৈরি করা, সেটা বাণিজ্যিক জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ফায়ার এক্সিট থাকে না।
“তখন এই সমস্যাগুলো হয়। এজন্য আমিও অনুরোধ করতে চাই সমস্ত সরকারি যে ডিপার্টমেন্টগুলো রয়েছে তারা সমন্বিতভাবে এ কাজগুলি করবে এবং জনগণ তাতে সহায়তা করবেন। এতে তাদেরই জীবন রক্ষা পাবে।”
আরও পড়ুন:
সরকারি সংস্থাগুলো ‘হায়েনার মত’ ঝাঁপিয়ে পড়েছে: রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি
বেইলি রোডে বেইজমেন্টে ‘নবাবী ভোজ’, বন্ধ করল রাজউক
ওয়ারীতে দুই রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপকসহ ২২ জন গ্রেপ্তার