ওই ভবনে ব্যবসা করছিল ১৫টি রেস্তোরাঁ, অথচ আইন অনুযায়ী সেখানে রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ নেই।
Published : 04 Mar 2024, 03:47 PM
বেইলি রোডের আগুন সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়ার পর ঢাকার ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে অভিযান চালিয়ে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে রাজউক।
এর মধ্যে একটি রেস্তোরাঁ ভেঙে দেওয়া হয়েছে নিয়ম না মেনে তৈরি করার কারণে। আর ছয়টি রেস্তোরাঁয় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের অথোরাইজড অফিসার এহসান আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজউকের কর্মকর্তারা ওই ভবনে গিয়ে অভিযান শুরু করেন।
শুরুতে ভবনের ছাদে থাকা ‘রেট্রো লাইভ কিচেন’ নামের রেস্তোরাঁটি ভেঙে দেওয়া হয়। ভবনের নকশা অনুযায়ী ওই রেস্তোরাঁ থাকার কথা নয়।
এছাড়া কাভান সিগনেচার, চাপ ঘর, স্পাইস অ্যান্ড হার্বস ও কালচার অ্যান্ড কুইজিন, দ্য প্যান প্যাসিফিক লাউঞ্জ, ম্যারিটেজ ঢাকা, হোয়াইট হল, অ্যারিস্টোক্র্যাট লাউঞ্জ, ইয়াম চা ডিস্ট্রিক্ট, দ্য লবি লাউঞ্জ বুফে, ক্যাফে সাও পাওলো লিমিটেড, আদি কড়াই গোস্ত লিমিটেড, ক্যাফে ডেলোসি এবং গ্যালিতোস রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে নয়টি রেস্তোরাঁয় সিলগালা করা হয়। বাকি ছয়টি রেস্তোরাঁর মালিকরা আগেই সেগুলো বন্ধ করে চলে যায়। এ কারণে সেগুলোর বিদ্যুৎ সসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গাউসিয়া টুইন পিকের দ্বিতীয় এবং ত্রয়োদশ তলায় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। বাকি ফ্লোরগুলোয় দোকান এবং ১৫টি রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ী সেখানে রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ নেই। ভবনটি ১৫০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হলেও অবৈধভাবে ৪০ ফুট বাড়ানো হয়েছে বলে রোববার রাজউকের পরিদর্শনে উঠে আসে।
রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিন সারওয়ার বলেন, “ভবনটি ব্যবহারে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। ভবনটির এফ-১ ক্যাটাগরিতে অনুমোদন করা ছিল। কিন্তু সেটা অনুসরণ করা হচ্ছিল না।
"এফ-১ মানে হল অফিস ভবন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এই ভবনে আমরা ১৫টা রেস্তোঁরা পেয়েছি। রেস্তোঁরা পাওয়ার পর আমরা এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু রেস্তোঁরা সিলগালা করেছি, কিছু কিছু রেস্তোঁরার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। মোট কথা সবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।"
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হওয়ার পর স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের অনিয়মের কথা জানিয়ে যেখানে যেতে ভোক্তাদের নিষেধ করেন।
এই স্থপতি বলেন, তিনি গাউসিয়া টুইন পিকের নকশা করলেও ভবনটি সেভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।
এরপর রোববার ভবনটি পরিদর্শন করে রাজউকের অঞ্চল-৫ এর পরিচালক মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, এক তলা বেইজমেন্টসহ ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির অকুপেন্সি টাইপ এফ-১। অর্থাৎ ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, রেস্তোরাঁ নয়।
বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটিও রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ ছিল না রাজউক আইন অনুযায়ী। কিন্তু আট তলা ভবনে ১৪টি খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ ছিল।
রাজউক অফিস হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সিটি করপোরেশন সেখানে রেস্তোরাঁগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়। নিয়ম ভাঙার বিষয়গুলো সামনে আসে ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের পর।
রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন, গাউসিয়া টুইন পিকেও একই অনিয়ম হয়েছে। সেখানে রাজউক আইন অনুযায়ী রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ না থাকলেও সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, ছাড়পত্র মিলেছে কলকারখানা অধিদপ্তরের এবং ফায়ার সার্ভিস থেকেও।