বাণিজ্যিক অফিস করার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ চালানোয় জিগাতলার কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ার বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের তিনটি রেস্তোরাঁকে করা হয়েছে জরিমানা।
সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম এ অভিযান চালান। অভিযান চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী সাত মসজিদ রোডের বিভিন্ন ভবনে থাকা রেস্তোরাঁর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৯টি রেস্তোরাঁর একটি তালিকা আছে আমাদের কাছে। এর মধ্যে পাঁচটি অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। আর দশটি রেস্তোরাঁর ঝুঁকি মধ্যম মানের। সে তালিকা অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে।”
এদিন প্রথমেই কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ারে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “অফিস ভাড়ার জন্য অনুমোদন নেওয়া হলেও পুরো ভবন জুড়ে রেস্তোরাঁ করা হয়েছে। তাদের অগ্নিনির্গমন পথটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
"তাদের দুটো সিঁড়ি আছে। এরমধ্যে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার রেখে দিয়েছে। এ কারণে ওই ভবন সিলগালা করে দিয়েছি।"
এ অভিযানে ওই ভবনে থাকা একটি ভিসা প্রসেসিং এজেন্ট কোম্পানিকে তিন লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "উনারা এখানে দুটি ফ্লোর নিয়ে অফিস করেছেন। কিন্তু রুমগুলো অনেক কনজাস্টেড, আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা নেই। কোনো দুর্ঘটনা হলে মানুষ এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা নেই।"
ওই প্রতিষ্ঠানের তিনজনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযান শেষে ওই ভবনের সামনের ফায়ার সার্ভিস একটি নোটিস টানিয়ে দেয়। সেখানে বলা হয়, ওই ভবনটি অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ।
পরে সাত মসজিদ রোডের রূপায়ণ জেড আর প্লাজায় অভিযানে যান সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে অগ্নিনির্বাপনে ঘাটতি থাকায় দ্য বুয়ে এম্পায়ার, বুফে লাউঞ্জ এবং বুয়েট প্যারাডাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “জরিমানা করার রেস্তোরাঁগুলোর কিচেনে ফায়ার সেইফটি নীতিমালা অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তা নেওয়া হয়নি। একটি প্রতিষ্ঠান ফায়ার লাইসেন্সই নেয়নি। এ ভবনে আমরা এখনও কোনো রেস্তোরাঁ বন্ধ করিনি। আমরা সবগুলো বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
অভিযানের খবর পেয়ে ওই ভবনের বেইজমেন্টে থাকা ধানমন্ডি বিরিয়ানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই রেস্তোরাঁর মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর।
বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও সেখানে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু আট তলা ওই ভবনে ব্যবসা করছিল ১৪টি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান। ভবনে ছিল না কোনো ফায়ার একজিট। একমাত্র সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারসহ রেস্তোরাঁর মালামাল। কাচে ঘেরা ভবনের উপরের ফ্লোরগুলো থেকে নামতে না পেরে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় অধিকাংশের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার পর ধানমণ্ডি, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একই রকম অনিরাপদ পরিবেশে ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে। এই প্রেক্ষাপটে সমালোচনার মুখে সরকারি সংস্থাগুলোও এখন অভিযানে নেমেছে।