“প্রথমে ডাম্পার দিয়ে মোটরসাইকেলটাকে ধাক্কা দেয়, তারপর তার মাথার ওপর দিয়ে তারা ডাম্প ট্রাক চালিয়ে চলে যায়। এটাতে আর কী বলার আছে? তারা তো মানুষের মধ্যেই পড়ে না।”
Published : 03 Apr 2024, 11:24 PM
কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি পাচারকারীদের ডাম্প ট্রাকের চাপায় বন কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।”
গত ৫ বছরে বনে কর্মরত প্রায় ১৪০ জন নানান হামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সুন্দরবনে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য একটা ঝুঁকি ভাতা আছে। তবে এই ভাতা অন্যদের চেয়ে আলাদ কিনা আমরা সেটাও দেখব।
“তবে এই ধরনের একটি কাজ যে করল এবং যেভাবে সে হত্যা করল, প্রথমে ডাম্পার দিয়ে মোটরসাইকেলটাকে ধাক্কা দেয়, তারপর তার মাথার ওপর দিয়ে তারা ডাম্প ট্রাক চালিয়ে চলে যায়। এটাতে আর কী বলার আছে? তারা তো মানুষের মধ্যেই পড়ে না।”
সাবের হোসেন বলেন, “যারাই এর সাথে জড়িত, তদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।”
গত ৩০ মার্চ গভীর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল বনদস্যুরা। খবর পেয়ে তা ঠেকাতে গিয়ে পাচারকারীদের ডাম্প ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম।
খবর পেয়ে ভোরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারোয়ার আলম।
তিনি বলেন, “বন রক্ষা করতে গিয়ে সাজ্জাদ নিজের জীবন দিয়েছেন। তার নির্মম মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী বন কর্মকর্তাকে হারালাম।”
সীসা দূষণ
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা- এসডো আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং দ্যা চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্টাল হেলথ উইথ এ পার্টিকুলার ফোকাস অন লেড পয়জনিং ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নেন পরিবেশমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সংবিধানের ১৮ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক দায়িত্ব। আমরা যে পরিকল্পনা করি না কেন, তাতেই আমাদের আর্টিকেল ১৮ মানতে হবে।
“এটি আমাদের সরকারকেই ভাবতে হবে। আমি একদিকে জনস্বাস্থ্যের কথা বলছি, আবার ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, সেটা তো হয় না।”
মন্ত্রী বলেন, “কোভিডের পর আমরা যেটা ভাবতাম, সেটা হচ্ছে একটি হাসপাতালে কয়টি ভেন্টিলেটর আছে, কয়টি আইসিইউ আছে, কয়জন ডাক্তার আছে, কয়জন নার্স আছে? এটি হল ব্যক্তি স্বাস্থ্যের দিক। আরেকটি হল, আমার বায়ুমানের উন্নয়ন। আমার দূষণের মাত্রা কী? আমি সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পানি পাচ্ছি কিনা। পরিবেশগত স্বাস্থ্য রক্ষা আমোদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।”
সীসা দূষণের যে কোনো মাত্রাই যে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “রান্নার হলুদ থেকে শুরু করে রঙ, খেলনা- সবকিছুর মধ্যেই সীসা চলে এসেছে। এটাকে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করব, সেটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।
“আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি, স্বাস্থ্য খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি, আবার অন্যদিকে স্বাস্থ্য যেন আমরা সুরক্ষা করতে না পারি, সে বিষয়েও কাজ করে যাচ্ছি। এই সাংঘর্ষিক বিষয় থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”
সীসাদূষণ রোধে প্রথমেই এর উৎসগুলো খুঁজে বের করার তাগিদ দেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষাক্রম- সবকিছুতেই বিষয়টি রাখতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা এটাকে কীভাবে নিয়ে আসব, সেটাও দেখার বিষয়। আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশ কোন জায়গায় থাকবে, সেটা অনেকটা নির্ভর করছে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা করছি।”
সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল হামিদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজির লিটন, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট বক্তব্য দেন।
পুরনো খবর