প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগে ঢাকার ধানমণ্ডি থানায় জিডি করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক।
Published : 16 Aug 2023, 11:13 PM
যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক নারীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার পুলিশের দুটি বিশেষ ইউনিট তাদের ঢাকার উত্তরা ও ঝিনাইদহ থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছে।
র্যাব তফসিরুল ইসলাম (২৩) নামের এক ব্যক্তিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে গ্রেপ্তার করে।
অপরদিকে উত্তরা থেকে একই অভিযোগে হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টি (৩২) নামে এক নারীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি।
যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাঈদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে মারা যান।
এরপর প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে ধানমণ্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান।
জিডির পরদিন বুধরাত রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক জ্যেষ্ঠ এএসপি মো. আল আমিন সরকার ঝিনাইদহে তফসিরুলের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পরে পুলিশের বিশেষ এ ইউনিটের বার্তায় জানানো হয়, অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
আর ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কে এন রায় নিয়তি এর পাঠানো বার্তায় বলা হয়, উত্তরা থেকে আটক নারীর বিরুদ্ধে জিডিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
সাঈদীর চিকিৎসায় থাকা বিশেষজ্ঞ দলের চিকিৎসক অধ্যাপক মোস্তফা জিডিতে বলেছেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি’ সামাজিক মাধ্যম এবং ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ করছে। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপে এবং ফেইসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে ‘ভয়-ভীতি’ দেখাচ্ছে এবং ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দিচ্ছে। তাতে তিনি ‘ভীত, শঙ্কিত’।
ফেইসবুক ও ইউটিউব ব্যবহারকারীদের কয়েকটি লিংক জিডিতে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেছেন, “তারা এবং তাদের অনুসারী ব্যক্তিরা যে কোনো সময় আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের খুন, জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।”
থানায় জিডি করার পর অধ্যাপক মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে যে রোগীই আসুক, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষ তারা সবাইকে সমান চিকিৎসা দেন। চিকিৎসা পেশার যে মূল আদর্শ, সেটাকে সমুন্নত রেখেই সেবা করেন।
“এখানেও (সাঈদীর ক্ষেত্রে) সেইমত কাজ করা হয়েছে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এবং আমরা রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছি, কোনো ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার যেরকম প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে, সেরকম হয়নি।”
ডা. মোস্তফা বলছেন, মঙ্গলবার সারাদিন তাকে উদ্দেশ্য করে ‘মিথ্যা গুজব’ ছড়ানো হয়েছে, তাকে ‘হত্যাকারী’ বলা হয়েছে, যা ‘সত্য নয়’।
জিডির পর ধানমণ্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।"
গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান যুদ্ধাপরাধী সাঈদী। আগের দিন রোববার কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে বিএসএমএমইউতে আনা হয়।
সেখানে হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ অগাস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মৃত্যু হয় সাঈদীর। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলে ছিলেন মোস্তফা জামান।
আরও পড়ুন:
সাঈদীর মৃত্যু: চিকিৎসককে প্রাণনাশের হুমকি, থানায় জিডি
সাঈদীর চিকিৎসা সঠিক নিয়মে হয়েছে: বিএসএমএমইউ
শাহবাগে জামায়াতি ‘তাণ্ডব’: সাঈদীর ছেলেসহ আসামি ৫ হাজার