আবার আগুন, পুড়ল এবার ঢাকার নিউ সুপার মার্কেট; ক্ষতিগ্রস্ত হল কয়েকশ ব্যবসায়ী।
Published : 15 Apr 2023, 01:02 PM
মধ্যবয়সী আব্দুর রব মুন্সীকে টেনে ধরেও শান্ত করতে পারছিলেন না তার দোকানের কর্মচারীরা; প্রচণ্ড গরমে ঘেমে আর পানিতে ভিজে একাকার হয়েছেন, খুলে ফেলতে হয়েছে পরনের জামাটাও।
দোকান কর্মচারীদের একজনকে তিনি বলছিলেন, ‘ওই চল মাল বাইর করুম’; আরেকজনকে বলছিলেন, ‘যা বাইর করছস, সব রোদে দে’।
ঈদ সামনে এই ব্যবসায়ী নতুন পোশাক তুলেছিলেন নিউ সুপার মার্কেটের দক্ষিণ ভবনের দোতালায় নিজের ‘জিহান খাদি ঘর’ নামের দোকানে; কিন্তু শনিবার সকালে লাগা আগুনে সেসব পুড়ে তার চোখের সামনে ছাই হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যেই কয়েকটি বস্তা বের করতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু ঈদ সামনে এভাবে দোকান পুড়ে যাওয়ায় তার আহাজারি থামছিল না।
“আমি কয়টা মাল বাঁচাইতে পারছি। দোতালা পুরোটাই পুইড়া গেছে। চোখের সামনে সব শেষ হয়্যা যাইতেছে, কিচ্ছু করার পারতেছি না।”
সকালে আগুনের খবর পেয়ে আবুল কালাম ছুটে আসেন বাড্ডা থেকে। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে কালামের বোনজামাই ও ভাইদের তিনটি দোকান রয়েছে।
তিনি বলেন, “একটা দোকান থেকেও দুইটা বস্তা বাইর করতে পারছে। বাকিগুলা মনে হয় সব গেছে গা। হ্যারা পাগলের মত করতেছে, ধুমার মধ্যেও বার বার ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করতেছে।”
রোজার ঈদের আগে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নতুন পণ্য তুলেছিলেন দোকানে। আগুন লাগার পর ব্যবসায়ীদের হাহাকার শোনা যায় মার্কেটের সামনে।
আগুনের খবর পেয়েই যেসব দোকানি আসতে পেরেছেন, তাদের মরিয়া হয়ে ঈদের আগে দোকানে তোলা কাপড় সরাতে দেখা গেছে।
নিউ সুপার মার্কেটের দোতালায় ওভার ব্রিজের সঙ্গেই প্যান্টের দোকান ছিল মোহাম্মদ শান্তর। দোকানের ৩০ শতাংশের মত মালামাল বের করতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
দোকান ভাড়া নিয়ে ‘ঝাক্কাস ফ্যাশন’ নামে একটি পাঞ্জাবি ও প্যান্টের দোকান চালিয়ে আসছিলেন মইনুল ইসলাম। আধা বস্তা ভেজা কাপড় হাতে ছোটাছুটি করছিলেন অনেকক্ষণ ধরে।
মইনুল বলেন, “একটা ব্যাগ হাতের কাছে পাইছিলাম, ওইটাও ভিজ্যা গেছে। আর কিচ্ছু বাইর করতে পারি নাই। সব শেষ হয়্যা গেল।
“ঈদের মাল তুলছিলাম, কিচ্ছু বেচতে পারছি না। আমার দোকান থিকা ধোঁয়া বাইর হইতে দেখতেছি, কিন্তু কিছু করতে পারতেছি না। পুলিশ আর ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।”
দোতলায় মা এন্টারপ্রাইজ ও বিসমিল্লা এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি দোকানে নারীদের পোশাক বিক্রি করতেন উদ্যোক্তা নাসিমা চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাতে দুই দোকানে বেচাকেনা শেষে ৬০ হাজার টাকা ক্যাশেই রেখে এসেছিলাম।
“ আগুন লাগার পর টানাটানি করে একটা দোকান খুলে কিছু মালামাল বের করেছে কর্মচারীরা। একটা দোকান খুলতেই পারেনি, দুটি দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে কিছুই বের করতে পারেনি তারা।”
ঢাকা নিউ মার্কেটের সঙ্গে লাগোয়া ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে শনিবার সকাল পৌনে ৬টায় আগুন লাগে, যা তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুড়েছে অনেক পোশাক।
এই বিপণি বিতানের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কেটের দোতলা ও তিন তলায় সবই পোশাকের দোকান।
অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর দোকান মালিক ও কর্মীরা ভেতরে ঢুকে মালামাল বের করা শুরু করলেও ধোঁয়ার কারণে এখন আর ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকে দেওয়া হচ্ছে না। যেসব দোকানকর্মী পোশাক উদ্ধারে ভেতরে ঢুকেছেন, তাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে।
আগুনে পুড়ে কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার পর ভেতরে কারও থাকার কথা না। আর মার্কেট খোলার আগেই ভোরে আগুন লাগে।
কী কারণে আগুন লাগল, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। দোতলা ও তিন তলায় থাকা অধিকাংশ দোকানের পোশাক পুড়েছে বলে ধারণা করা হলেও ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রও এখনও পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মইন বলেন, “আগুন লাগার প্রকৃত কারণ তদন্ত না করে বলা যাবে না।
তবে তিনি বলেন, “এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে, বাতাসে আর্দ্রতা অনেক কম। মার্কেট এবং দোকান সৌন্দর্য করার জন্য অনেক বড় বড় পাওয়ারের লাইট ব্যবহার করে থাকি। এসব কারণে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।”