সভায় ‘বাধা দিচ্ছে’ ঢাকা ওয়াসা প্রশাসন, অভিযোগ বোর্ডের

বাধার বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রেখে জরুরি সভা ডেকেছে ওয়াসা বোর্ড।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 05:08 PM
Updated : 13 Oct 2022, 05:08 PM

নিয়মিত সভা করতে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রশাসনের বাধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে ‘বাধা’র বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে আগামী ১৬ অক্টোবর ‘বিশেষ জরুরি’ সভা আহ্বান করেছে পর্ষদ।

গত মঙ্গলবার ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের নিয়মিত সভা আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা সেই সভা করতে সহযোগিতা করেননি বলে বোর্ড সদস্যদের অভিযোগ।

তারা বলছেন, বিদেশে থাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না অজুহাত তুলে সভা আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

তবে অসহযোগিতার অভিযোগ নাকচ করেছেন ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে) এ কে এম সহিদ উদ্দিন।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আগামী ১৬ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ১০৭তম সভা (বিশেষ জরুরি) সভা ডেকেছেন। ওইদিন বেলা ২টায় ঢাকা ওয়াসার বোর্ড রুমে সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে বলা হয়েছে, “ঢাকা ওয়াসা প্রশাসন স্বাভাবিক বোর্ড সভা করতে অসহযোগিতা করার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।”

গোলাম মোস্তফা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা ওয়াসা প্রশাসন বোর্ড মিটিংয়ে অসহযোগিতা করতে পারে না। কিন্তু তারা তা করেছে। আমরা আজকের (বৃহস্পতিবারের) মিটিংটা ১৬ তারিখে নিয়ে গেছি।”

অসহযোগিতার বিষয়টি কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আর আলোচনা করতে চাই না। জটিলতা তৈরি করে লাভ কী? আপনারা তো চিঠিতে দেখেছেনই অসহযোগিতা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা যেহেতু দেখেছেন, তখন আমরা আর কিছু বলার নাই।”

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা ওয়াসা বোর্ড বৈঠক করতে চাইলেও ওয়াসার কর্মকর্তারা তা হতে দেননি। নানা ধরনের অসহযোগিতা করেছেন। ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মাধ্যমে বাধা দিয়েছেন।

“আমরা তো মিটিং করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিটিং না করতে অনুরোধ করেছেন। কয়েকজন প্রকৌশলী তাকে গিয়ে নিষেধ করেছেন। ভারপ্রাপ্ত এমডি তাকে গিয়ে বলেছেন মন্ত্রণালয় থেকে মিটিং করতে নিষেধ করা হয়েছে। আসলে তারা চেয়েছেন, তাকসিম এ খানের অনুপস্থিতিতে মিটিং করা যাবে না। উনি (তাকসিম এ খান) মিটিং করতে দিতে চান না বলে মনে হচ্ছে। এটা আইন বিরোধী এবং তার এখতিয়ারবহির্ভূত। তবে এটা হয়েছে।”

১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী, প্রতি দুই মাসে অন্তত একবার বোর্ড সভা হতে হবে। চেয়ারম্যান অথবা তার অবর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়োজন মনে করলে সভা আহ্বান করবেন।

ওই আইনের ১১(৯) ধারা অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ডের যে কোনো সভায় যোগ দিতে পারবেন এবং এর কার্যধারায় অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু কোনো ভোট দিতে পারবেন না।

ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে) এ কে এম সহিদ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সভা করতে কোনো ধরনের অসহযোগিতা করছে না।”

তার দাবি, সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উপস্থিত থাকতে হয়। তাকসিম খান যুক্তরাষ্ট্রে, আর তিনি পারিবারিক কারণে ঢাকার বাইরে থাকায় সভা পিছিয়েছে।

“ব্যবস্থাপনা পরিচালককে থাকা লাগে, তিনি ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে থাকায় আমি দায়িত্বে আছি। কিন্তু আমার দুলাভাই মারা যাওয়ায় আমিও ঢাকার বাইরে। আজকে মিটিং হওয়ার কথা ছিল। আমার পারিবারিক সমস্যার কারণেই পিছিয়েছে সভাটি। এখানে অন্য কোনো ইস্যু নাই।”

পরিবারের সঙ্গে দেখা এবং নিজের চিকিৎসা করাতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তাকসিম। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ছুটিতে থাকার সময় ভার্চুয়ালি অফিস করার জন্য বোর্ডের কাছে আবেদন করেন তিনি। বোর্ড আবেদন নাকচ করলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয়ও তাকে বিদেশে বসে অফিস করার অনুমতি দেয়নি।

২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত দুই মাস যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তাকসিম। তখন সেখান থেকেই দাপ্তরিক কাজ সারেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সেসময় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

তাকসিম ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে রয়েছেন। প্রথম নিয়োগের পর থেকে মোট ছয়বার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।