মোখার প্রায় অর্ধেক উঠে এসেছে স্থলভাগে, বিকেলে ‘বাড়বে’ জোয়ার

বিকেল ৪টায় জোয়ারের পূর্ণ সময়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 08:38 AM
Updated : 14 May 2023, 08:38 AM

ঘূর্ণিঝড় মোখার মধ্যে সকালের ভাগে ভাটার কারণে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা না গেলেও দুপুরের পর জোয়ারের মধ্যে এর মাত্রা বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।  

রোববার বেলা ১টার ব্রিফিংয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “তিনটা নাগাদ ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকবে। সন্ধ্যা নাগাদ সাইক্লোনের পূর্ণ অংশ স্থলভাগ অতিক্রম সম্পন্ন হবে। বিকেল ৪টায় জোয়ারের পূর্ণ সময়। ৩টায় ঝড়টির চোখ যখন ল্যান্ড ক্রস করবে তখন সেন্টামার্টিন ও এর আশেপাশের এলাকায় জোয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।”

এর আগে সেন্ট মার্টিনে থাকা আবহাওয়া অফিসের সাথে ফোনে কথা বলেন পরিচালক। কথা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “সেন্ট মার্টিনে এইমাত্র কথা বললাম, আমাদের ইনচার্জ জানিয়েছে প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে, বিল্ডিং কাঁপছে। ১১টা ৫০ মিনিটে সেখানে আমরা ৮০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ পেয়েছিলাম, এখন পেয়েছি ১০০ কিলোমিটারের মত।”

আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বুলেটিন বলছে, রোববার বেলা ১২টায় এ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার বন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা বন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিপ-পূর্বে।

ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

রোববার ভোরে এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

অর্থাৎ, বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থলভাগে উঠে আসার পথে কিছুটা শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা।

জাপানের হিমাওয়ারি ৯ স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোববার বেলা ২টায় উপকূলের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় মোখার মোটামুটি অর্ধেক স্থলভাগে উঠে এসেছে ওই সময়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলছেন, যাত্রাপথে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বা কেন্দ্র থাকবে টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে এলাকায়। ঝড়ের বেশিরভাগ অংশ মিয়ানমারের ওপরই থাকছে। ফলে বাংলাদেশের ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। 

কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

Also Read: বাতাসের গতি কমেছে মোখার

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। তবে সকালে ভাটা থাকায় জলোচ্ছ্বাস সেরকম প্রবল হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলছেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত ভাটা ছিল। এরপর জোয়ারের প্রবণতা শুরু হয়েছে এবং বিকাল ৪টায় তা সর্বোচ্চ দশায় থাকবে। ফলে ওই সময়টায় জলোচ্ছ্বাসও বেশি হবে।

"তবে খুব বড় জোয়ারের আশঙ্কা নেই। এখানে জোয়ারের সময় যেহেতু ৪টায়, সেজন্য জোয়ারের কারণে পানির উচ্চতা কিছুটা বেড়ে যাবে। আমরা যে বলেছি ৮ থেকে ১২ ফুট, এই উঁচু, তাতেই অবস্থান করবে।"

তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের পেছনের যে অংশ আছে, সেটিও (স্থলভাগ) অতিক্রম করে যেতে হবে। সেটি সন্ধ্যা নাগাদ অতিক্রম করে যাবে।… বাতাসের গতি আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই, এখন আস্তে আস্তে স্থলভাগে আসতে থাকবে এবং দুর্বল হতে থাকবে।”