অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
ঝড় থামার পর আসতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য, কারও মৃত্যুর খবর মেলেনি।
বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে গত ৮ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধাপে ধাপে শক্তিশালী হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেয়েছে।
গত ১১ মে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পাওয়ার পর এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্রের নাম দেওয়া হয় ‘মোখা’ (Mocha)।
সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়। মোখা নামটি নেওয়া হয়েছে ইয়েমেনের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে।
ধাপে ধাপে আরও শক্তিশালী হয়ে এ ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, রাত ৯টা পর্যন্ত আগের ৬ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছিল।
এর আগে মোখার গতি ছিল এর অর্ধেকে; স্থলভাগের যত কাছাকাছি হবে, এর গতি তত বাড়বে বলে আগেই আভাস দিয়ে আসছিলেন আবহাওয়াবিদরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং উত্তর মিয়ানমার দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, রোববার দুপুর নাগাদ মিয়ানমারের কাইয়ুউ এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে উঠে আসবে এ ঘূর্ণিঝড়।
তবে শনিবার রাত থেকেই চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়া শুরু হবে বলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্তৃত উপকূলে মধ্যরাত থেকে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি দেখা দিতে পারে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সময় রোববার প্রথম প্রহরেই মোখার অগ্রভাগ উপকূলের কাছে পৌঁছে যাবে।
যার অর্থ তখন থেকে ঝড়ের ধাক্কা শুরু হবে, যা প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর পুরো ঝড় উপকূলে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত চলবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শনিবার শেষ রাতের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ উপকূল স্পর্শ করবে; সা্ইক্লোনের মোস্ট অব দ্য পার্ট অতিক্রমের সম্ভাবনা রোববার বিকালে।”
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ মোখাকে ‘চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে উপকূলে আঘাত হানার সময় এর তীব্রতা কিছুটা কমে যাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়ার বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার উপকূলে আঘাত হানার সময় এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮০-১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটারে উঠতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের আভাস, ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছবে সাগরে থাকা অবস্থায় শনিবার মধ্যরাতে। তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ২১০ থেকে ২২০ কিলোমিটার হবে, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২৪০ কিলোমিটারে উঠতে পারে।
তবে রোববার ভোরে ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ কমে আসবে। উপকূলে আঘাত হানার সময় তা আরও কমবে।
তবে জয়েন্ট তাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য বলছে, উপকূলে আঘাত হানার আগে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় ঝড়ে বাতাসের তীব্রতা থাকবে ২৪০ কিলোমিটারের বেশি, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, “অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তীব্রতা হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ দেখছি। ল্যান্ডে উঠার সময় বা উঠলে পরে দ্রুত কমে যায়। তখন হয়ত সিভিয়াল সাইক্লোন থাকতে পারে বা এর কম বেশি হতে পারে। বাতাসের গতি ১০০-১৫০ কিলোমিটার থাকতে পারে।”
এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে শনিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেছিলেন, “এটি (মোখা) সিডরের মতোই শক্তিশালী।
“প্রায় সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে সে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। তবে পার্থক্য হলো সিডর বাংলাদেশের মাঝ বরাবর দিয়ে গিয়েছিল, মোখা পাশ দিয়ে যাচ্ছে।”
২০০৭ সালে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। তাতে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তারপর আরও অনেক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের মানুষ দেখলেও তত ক্ষতি আর হয়নি।
তবে পরে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে এটি সুপার সাইক্লোন হতে পারে, আমরা পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পেরেছি যে এটি সুপার সাইক্লোন হওয়ার শঙ্কা নেই।
“সুপার সাইক্লোন হতে হলে ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ হতে হবে। এর মধ্যে এখন বাতাসের গতিবেগ আছে ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। এখন এটা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বা সিভিয়ার সাইক্লোন।”
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আর উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
ঝড়ের প্রভাবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে বয়ে যাওয়া মাঝারি ধরণের তাপ প্রবাহও প্রশমিত হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. আসাদুর রহমান বলেন, “একটানা আট ঘণ্টার বেশি প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের আশংকা থাকে। সেক্ষেত্রে প্রবল বৃষ্টিপাতের আশংকা বেশি আছে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায়।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ব্যাস ৫০০ কিলোমিটারের বেশি হওয়ায় এর অগ্রভাগের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অনেক এলাকায়।
তবে সিডরের সঙ্গে মোখার তীব্রতার তুলনা করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মোখা দেশের শেষ সীমানা দিয়ে অতিক্রম করছে। এর অর্ধেক থাকবে মিয়নমারের দিকে, অর্ধেক আমাদের দিকে।
“সিডরের পুরো বডিই বাংলাদেশের উপর দিয়ে গেছে। সেটার ক্ষয়ক্ষতি পুরোটাই গেছে বাংলাদেশের উপর আর আর মোখায় বাংলাদেশের এরিয়াটাই কম হবে।”
বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. আসাদুর রহমান বলেন, রোববার সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। দুপুর থেকে তাণ্ডব বাড়বে।
তিনি বলেন, “৫০০-৫৫০ কিলোমিটার ডায়ামিটারের এই সাইক্লোনে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের চরাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
ঝড়ের প্রভাবে সিলেট অঞ্চল পর্যন্তও বৃষ্টিপাত হওয়ার আভাস দিয়ে আসাদুর বলেন, “এটা যখন আছড়ে তীরে পড়ে যাবে, এটার ক্লাউড মাস্ক বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে, যার প্রভাব সিলেট পর্যন্ত চলে যাবে, তাই সেখানেও প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ছয় শিক্ষাবোর্ডের রোববার ও সোমবারের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ফলে রবি ও সোমবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, যশোর শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে কোনো এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না।
সেইসঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রোববার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
তিনি বলেন, “স্কুলগুলোকে সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য আমরা এরই মাঝে নির্দেশ দিয়েছি। তবে যেসব স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র আছে সেগুলো ব্যবহার করা যাবে না। সেখানে তো পরীক্ষার অনেক সরঞ্জাম আছে।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথারীতি চলবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
মোখার কারণে চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের আওতাধীন জেলাসমূহের সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমও রোববার বন্ধ থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে শনিবার সকাল থেকে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ।
অভ্যন্তরীণ নদীপথে শুক্রবার রাত থেকেই সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-ফোর’ জারি করে জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বহির্নোঙ্গরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল শুক্রবারই। শনিবার সকাল থেকে বন্দরের ‘অপারেশনাল কার্যক্রম’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শুক্রবার রাতে মহেশখালীর নিকটবর্তী সাগরে ভাসমান দু’টি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ধাক্কায় ঢাকাসহ সারাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।
শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে রান্নার চুলায় যেমন গ্যাস মিলছে না, তেমনই ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে শহরে। যদিও এতদিন গ্রামাঞ্চলে লোড শেডিং দিয়েও শহরকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের আওতায় রাখা হয়েছিল।
দুপুরের পর থেকেই ঢাকার মিরপুর, ধনিয়া, যাত্রাবাড়ী, কাজলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকটের কথা জানিয়ে মাইকিং করা হয়। ‘সময়ে সময়ে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করবে’ বলে জানিয়ে দেওয়া হয় সেই ঘোষণায়।
বিদ্যুতের পাশাপাশি সকাল থেকে ঢাকার বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাস চলে যাওয়ার খবর এসেছে। আর বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে অনেক বাসায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে।
দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ২৫ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করা হয়। আমদানি করা এসব এলএনজি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার জন্যই মহেশখালীর অদূরে ভাসমান টার্মিনাল দুটি স্থাপন করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় 'মোখা’ ধেয়ে আসতে থাকায় ভাসমান টার্মিনাল দুটি শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নির্ধারিত স্থান থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ওই দুটি টার্মিনাল থেকে এতোদিন দৈনিক গড়ে যে ৭০০ এমএমসিএফ গ্যাস আসত তা বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মে মাসের হিসাব মতে, এখন দেশে দৈনিক ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট থেকে ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এসব বিদ্যুতের প্রায় ৪৯ শতাংশই আসে বিভিন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানার পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবির উৎপাদন বিভাগের সদস্য এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোখার প্রভাবে কয়েকদিন সমস্যা থাকবে। কেবল এলএনজি বন্ধ থাকার কারণে দুই হাজার মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি উৎপাদন কমে যেতে পারে।
“দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেছে। রাতের বেলায় হয়তো সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আগামী ১৬ মে’র আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এলএনজির সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে গেছে। এলএনজি থেকে তিতাস ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত, যা এখন কমে গেছে। এটাই বর্তমান গ্যাস সংকটের কারণ।
“সবমিলিয়ে সাড়ে ১৬০০ থেকে ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত তিতাস। আজকে সেখানে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া গেছে।”
এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সতর্কতা সংকেত।
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে।
বর্তমান ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের বাতাসের গতিবেগ ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর সবকিছুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেই কেবল তখন ১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত ঘোষণা করা হয়।
এর মানে হল, আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস তাদের রাত সাড়ে ১০টার বুলেটিনে জানিয়েছে, মোখা চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ এর আকারে বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল থেকে ৪৫০ কিলোমটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মিয়ানমারের সিত্তে থেকে ৪৬০ কিলোমটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শনিবার সকাল থেকেই উপকূলের নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে। সেজন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ১৬০৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে আগেই।
এসব কেন্দ্রে ১০ লাখ সাত হাজার ১০০ জনকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব। তার মধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৯৯ জনকে রাখা যাবে।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৩ জন এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ।
তিনি বলেন, “এরই মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। যাদের সঙ্গে এসেছে গবাদি পশুও। স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। রাতের মধ্যেই আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা দুই লাখে পৌঁছে যাবে।”
জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও অর্ধশত আবাসিক হোটেল এবং বহুতল ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
শনিবার বিকালে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “উপজেলায় মোট ১০২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সেন্ট মার্টিনেই প্রস্তুত করা হয়েছে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
“সেখানে সরকারি স্থাপনার পাশাপাশি দোতলা-তিনতলা হোটেল ও রিসোর্টকেও আমরা ব্যবহার করছি। এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ শেল্টার সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে।”
ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ ও সেখানে থাকা পর্যটকরা দ্বীপ ছাড়া শুরু করেন। তারা ট্রলার ও স্পিডবোট করে টেকনাফে এসে আশ্রয় নেন। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে সতর্কতা সংকেত বাড়তে থাকলে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনের পথের সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এর ফলে দ্বীপের সঙ্গে স্থলভাগের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে বিভিন্ন সংস্থা।
দুর্যোগকালে এসব নম্বরে ফোন করে যেমন সহায়তা চাওয়া যাবে, তেমনই প্রয়োজনীয় তথ্য জেনেও নেওয়া যাবে।
সারাদেশের পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে সচিবালয়ে খোলা থাকবে জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র। সেখানে ৫৫১০১১১৫ ও ৫৫১০১২১৭ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
জাতীয় জরুরি সহায়তা নম্বর ৩৩৩ নম্বরে কোনো চার্জ ছাড়াই কল করার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত তথ্য, সতর্কতা সংকেত ও আবহাওয়া বার্তা এবং জরুরি সহায়তা পাওয়া যাবে। শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)।
দুর্যোগকালে ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে যেকোনো সহায়তা ও তথ্য মিলবে কোস্ট গার্ডের জরুরি সহায়তা নম্বরে। সংস্থার সদর দপ্তর ০১৭৬৯৪৪০৯৯৯, ঢাকা জোন- ০১৭৬৯৪৪১৯৯৯, চট্টগ্রাম জোন- ০১৭৬৯৪৪২৯৯৯, বরিশাল জোন- ০১৭৬৯৪৪৩৯৯৯ ও খুলনা জোনের নম্বর- ০১৭৬৯৪৪৪৯৯৯।
যেকোনো জরুরি সেবা নেওয়া যাবে ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন নম্বরে (১৬১৬৩)। দুর্যোগের আগাম বার্তা জানতে তাদের টোল ফ্রি নম্বর ১০৯০ চালু রয়েছে।
আর কক্সবাজারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ০১৮৭-২৬১৫১৩২।
মোখার প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করা যাবে। সেখানকার নম্বর- ০১৮৭২৬১৫১৩২, +৮৮০৩৪১৬২২২২, ফ্যাক্স নম্বর +৮৮০২৩৩৪৪৬২২০৫, +৮৮ ০২৩৩৪৪৬২২০৬, ই মেইল: adcgcox@gmail.com, drrococ@gmail.com।
ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম নগরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চট্টগ্রামবাসীরা ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন ০২৩৩৩৩৬৩০৭৩৯ এই নম্বরে।
মোখা মোকাবিলায় নিয়ন্ত্র কক্ষ খোলার কথা জানিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। তাদের সেবা নেওয়া যাবে ০১৩১৮-২৩৪৫৬০ ও ০১৭৭৫-৪৮০০৭৫ নম্বরে।
‘মোখা' মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরও। ঝড় সংক্রান্ত যেকোনো সেবা গ্রহণের জন্য কাছের থানা অথবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।
ঘূর্ণিঝড়কালে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি)। রামুতে সংস্থাটির সেবা পেতে ০১৬৭৯৬০১১০ নম্বরে, কক্সবাজার ব্যাটেলিয়নে ০১৭৬৯৬০১১১০ এবং টেকনাফে ০১৭৬৯৬০১১৩০ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
মোবাইল ফোন অপারেটর, এনটিটিএন, আইএসপি সেবাদাতারা উপকূলীয় এলাকায় সমস্যার সম্মুখীন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।
গবেষক মোহন কুমার দাশ জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়।
এর পরে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করেছে এমন ঘূর্ণিঝড়গুলো মধ্যে ২২ অক্টোবর ১৯৯২, ৩ মে ১৯৯৪, ২৫ নভেম্বর ১৯৯৫, ৮ মে ১৯৯৬ উল্লেখযোগ্য।
পরে ২০১৭ সালের ৩০ মে ‘মোরা’ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে অতিক্রম করলে এর প্রভাবে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
২০১৫ সালে রয়্যাল মিটিরিওলোজিক্যাল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ইদ্রিস আলমের গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য তুলে ধরে মোহন কুমার দাশ বলেন, ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হেনেছে এমন ১৮৭টি ঘূর্ণিঝড়ের ক্যাটালগ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল এবং খুলনা উপকূল দিয়ে যথাক্রমে ৩০, ৪৬, ১৯, ৪১ এবং ৫১টি ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করেছে।
আবার ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে কক্সবাজার দিয়ে অতিক্রম করেছে এমন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ৫টি ক্যাটাগরি-১ (১১৯-১৫৩ কিমি/ঘ), একটি ক্যাটাগরি-২ (১৫৪-১৭৭ কিমি/ঘ), একটি ক্যাটাগরি-৩ (১৭৮-২০৩ কিমি/ঘ) এবং দুটি ক্যাটাগরি-৪ (২১০-২৪৯ কিমি/ঘ) মাত্রার ছিল। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারটি ক্যাটাগরি-৪ (২১০-২৪৯ কিমি/ঘ) মাত্রার ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করেছে চট্টগ্রাম দিয়ে।
ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দুর্যোগের ঘটনার ডেটাবেস খুবই অগোছালো, অপর্যাপ্ত এবং অসম্পূর্ণ।”
ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলের ৪১০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝগড় মোখা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়ে গেছে।
শনিবার মধ্যরাতে (রাত ১২টায়) মোখা চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা বন্দর থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিপ-পূর্বে এবং মোংলা বন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আরো উত্তর-উত্তপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্য মোখা কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
সে সময় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আর উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার রাত ১২টার তথ্যের ভিত্তিতে যে বুলেটিন দিয়েছে, তাতে ওই সময় ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, রাত ১২টায় ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১০-২২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার পেরিয়ে গেলে তখন তাকে বলে সুপার সাইক্লোন।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্যের ভিত্তিতে জুম আর্থ লাইভ স্যাটেলাইড ফিড যে ম্যাপ দেখাচ্ছে, সেখানেও মোখাকে এখন সুপার সাইক্লোনিক স্টর্ম বলা হচ্ছে, যার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।
অবশ্য উপকূলে উঠে আসার সময় এ ঝড়ের শক্তি কিছুটা কমে আসবে। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলছে, রোববার বেলা ১২টা নাগাদ মোখার চোখ বা মধ্যবিন্দু উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে, অর্থাৎ তখন অর্ধেক ঝড় স্থলভাগে এবং বাকি অর্ধেক জলভাগে থাকবে।
ওই সময় মোখা চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপে থাকবে বলে জুম আর্থের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, ওই সময় মোখার বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮০-১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে ‘চোখ’ বলে। আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি দুর্যোগপূর্ণ থাকে ওই ‘চোখ’ এর চারদিকের এলাকায়। ওই এলাকাকে বলে ‘চক্ষুপ্রাচীর’।
যে মেঘবলয় কুণ্ডলী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় তাকে কুণ্ডলীগত বৃষ্টিবলয় বলা হয়। এগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ডান-চতুর্থাংশে অতি ভারি বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং এমনকি কি টর্নেডোও সৃষ্টি করে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের যেখানে কম মেঘ থাকে, সেখানে অনেক সময় ১০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ঝড়ের ‘চোখ’ দেখা যায়। এ ‘চোখ’ অতিক্রমকালে সাময়িকভাবে অতি হালকা বৃষ্টিপাত ও সামান্য বাতাসসহ আবহাওয়া শান্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে।
২৪০ কিলোমিটার গতির দমকা হাওয়ার শক্তি নিয়ে উপকূলের আরও কাছে পৌঁছে গেছে চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। ভারতের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত ৩টায় এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মিয়ানমারের সিত্তে বন্দর থেকে ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সে সময় ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১০-২২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, রোববার দুপুর নাগাদ মিয়ানমারের কাইয়ুউ এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে এ ঘূর্ণিঝড়।
ততক্ষণে ঝড়ের শক্তি কিছুটা কমে আসবে। সে সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮০-১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
উপকূলের কাছাকাছি এসে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রসর হওয়ার গতিও সামান্য কমেছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেখানে ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছিল এ ঝড়, তার পরের ছয় ঘণ্টায় এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলের ওই অংশ।
ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়ার শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রবর্তী অংশ।
সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ সাগর থেকে স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করে।
সকাল ৬টায় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিপ-পূর্বে এবং মোংলা বন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর-উত্তপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার বিকাল নাগাদ মোখা মিয়ানমারের সিত্তের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম শেষ করে পুরাপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আর উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
তাইয়ুব উল্লাহ একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পরিস্থিতি জানিয়ে একটি ভিডিও তিনি পোস্ট করেছেন ফেইসবুকে।
তিনি লিখেছেন: “বাতাস অনেক বাড়ছে। সমুদ্রে এখন ভাটা চলছে, যদিও ভাটা হয়েছে সামান্য। বৃষ্টি আছে।
“সাগরের ঢেউ ও গর্জন শুনে মনে হচ্ছে পানি বাড়বে। অতীত অভিজ্ঞতা সেটাই অনুমান। বাতাস এখনো উত্তর পূর্ব দিক থেকে আসছে। দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে আসলে সমস্যা হবে।
“গতকাল বিকেল ৩ টা থেকে সেন্টমার্টিন বিদ্যুৎ নাই। ঘূর্ণিঝড় শেষ হবার আগে আর আসবে না। ফলে মোবাইলের চার্জ কম, ঘনঘন অনলাইনে আসা হবে না।
“সারা দেশের মানুষ চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় আছে। ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে 'সেন্টমার্টিন' আর দ্বীপের মানুষ নিয়ে পুরো দেশের মানুষ অনেক টেনশনে আছে। এটাই প্রেম! এটাই সেন্টমার্টিন ও মানুষের প্রতি অন্যদের ভালবাসা।”
আবদুল মালেক নামের একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীও সেন্ট মার্টিনের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। তিনিও বাতাসের গতি বাড়তে থাকার কথা জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ভাষায়।
বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে সাগর থেকে স্থলভাগে উঠে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার ভোরে এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে।
সকাল ৯টায় এ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, পায়রা বন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিপ-পূর্বে এবং মোংলা বন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর-উত্তপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার বিকাল নাগাদ মোখা মিয়ানমারের সিত্তের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম শেষ করে পুরাপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আর উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার উপকূল অতিক্রমের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের বক্ষের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, সঙ্গে বইছে প্রচণ্ড বাতাস বইছে।
কক্সবাজার জেলা শহর ও টেকনাফের উপকূলেও বৃষ্টির পরিমাণ ও বাতাসের বেগ বেড়েছে।
কক্সবাজার আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেন্ট মার্টিনে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর টেকনাফসহ কক্সবাজারে একই সময়ে সাত মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আকতার কামাল সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচণ্ড বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইছে। সাগর এখন খুবই উত্তাল অবস্থায় রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন নিরাপদে আছে।”
রোববার সকাল থেকে কক্সবাজার শহর ও টেকনাফে যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছিল সোমবার সকালেও তা অব্যাহত আছে। তবে কখনও কখনও মাঝারি আকারেও বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের বেগ বেড়েছে।
ফলে জেলা শহরের রাস্তাঘাটে যানবাহন ও লোকজনের চলাচল কমে গেছে। দোকানপাট দেরিতে খুলছে, অফিস-আদালতেও উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় তিন লাখ মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করছে জেলা প্রশাসন। এখনও বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সার্বিক) ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ দাশ সকাল ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার মানুষ এসেছে। এর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় তিন লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছে।
“কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। এখনও যারা বাইরে আছে তাদেরকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দুপুরের পর থেকে ঝড়টি উপকূলের স্থলভাগ অতিক্রম করা শুরু করবে। সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি।
বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থলভাগে উঠে আসার পথে কিছুটা শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা।
আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বুলেটিন বলছে, রোববার বেলা ১২টায় এ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার বন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা বন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিপ-পূর্বে।
ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
রোববার ভোরে এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে। সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলছেন, যাত্রাপথে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বা কেন্দ্র থাকবে টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে এলাকায়। ঝড়ের বেশিরভাগ অংশ মিয়ানমারের ওপরই থাকছে। ফলে বাংলাদেশের ঝুঁকি কিছুটা কমেছে।
কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। তবে সকালে ভাটা থাকায় জলোচ্ছ্বাস সেরকম প্রবল হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলছেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত ভাটা ছিল। এরপর জোয়ারের প্রবণতা শুরু হয়েছে এবং বিকাল ৪টায় তা সর্বোচ্চ দশায় থাকবে। ফলে ওই সময়টায় জলোচ্ছ্বাসও বেশি হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বেলা ৩টা নাগাদ এবং পুরো ঘূর্ণিঝড় সন্ধ্যা নাগাদ স্থলভাগে উঠে আসবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের বক্ষে থাকা প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে দুপুর থেকে প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে, কোথাও কোথাও গাছপালা ও কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে; তবে জলোচ্ছ্বাস বা পানির তীব্রতা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সার্বিক) ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে প্রচণ্ড বাতাস সেখানকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন নিরাপদে আছেন। আমাদের কাছে এখনও কোনো খারাপ তথ্য আসেনি।”
ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে শনিবার দুপুরে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে সেন্ট মার্টিন সৈকত সংলগ্ন হোটেল ব্লু মেরিনে উঠেন সেন্ট মার্টিন স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
রোববার দুপু দেড়টার দিকে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন প্রচণ্ড বাতাস বইছে। আশপাশ থেকে গাছপালা ভেঙে পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আকাশ অন্ধকার, সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আকতার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন মনে হয়, ঝড় শুরু হয়ে গেছে। প্রচণ্ড রকমভাবে আশপাশে তছনছ করছে। ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে বলে মনে হয়। তবে, জলোচ্ছ্বাস নেই।”
সোমবার সব বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষাই স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার রোববার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “মোখার প্রভাবে আমরা এর আগে ছয় বোর্ডের আজকের ও আগামীকালের পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার যে পরীক্ষাটি রয়েছে সেটি অভিন্ন প্রশ্নপত্রে হবে। ফলে ছয় বোর্ডে যেহেতু পরীক্ষা স্থগিত আছে, তাই আগামীকালের পরীক্ষা সব বোর্ডেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে।”
রোববার বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের পদার্থ বিজ্ঞান, মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
মোখার কারণে এ দিন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, যশোর শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে একই সময়ে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা, সঙ্গীত, আরবি, সংস্কৃত,পালি, শারিরীক শিক্ষা ও ক্রীড়া এবং চারু ও কারুকলার পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। স্থগিত হওয়ার পরীক্ষাগুলোর নতুন তারিখ পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে।
ঘুর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবাহ বন্ধ থাকায় মানুষের যে দুর্ভোগ তৈরি হযেছে, তা এ সপ্তাহে কাটার সম্ভাবনা কম।
গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-কেজিডিসিএ জানিয়েছে, ছয় থেকে সাত দিন সময় লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে।
তারা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, “এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ছয়-সাতদিন সময় লাগতে পারে।”
চট্টগ্রামে সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গৃহস্থালী মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিনশমিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে গ্যাস প্রয়োজন। বাসাবাড়িতে চাহিদা ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত। কেজিডিসিএ নিশ্চিত করেছে, চট্টগ্রাম এক প্রকার গ্যাসশূন্য।
সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “চট্টগ্রাম অঞ্চলে মূলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে আসা গ্যাস দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়। এর কারণে সেন্ট্রাল গ্রিড থেকে আমাদের গ্যাস দেওয়া হয় না। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ গ্যাস পাচ্ছে না।”
এলএনজি বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে কিছু গ্যাস চাওয়া হয়েছে। যদি কিছু গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে সোমবার নাগাদ ‘সুখবর’ মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোখার প্রভাবে উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ‘সহনীয়’ ছিল জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, এই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে রোববার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকাল ৬টা থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও মিয়ানমারের সিত্ত উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এখনও সেটি অতিক্রম করছে। বিকালে এটি উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে অগ্রসরমান হবে।
“এখন ঝড় ৫০ থেকে ৬৮ কিলোমিটার গতিতে হচ্ছে। যেহেতু সকাল থেকে ভাটা শুরু হয়েছে তাই জলোচ্ছ্বাসের (বড়) শঙ্কা নাই, মাত্রাটাও সহনীয়।
“সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ঝড়টি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অতিক্রম করছে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে ঝড়ের গতিবেগ এখনও ২০০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার। এ গতিবেগে কেন্দ্রটি উপকূল অতিক্রম করলে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হবে।”
তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ না পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারে ৫৭৬টি কেন্দ্রে ২ লাখের বেশি, চট্টগ্রামে ১ হাজার ২৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, সুবর্ণচরের মানুষকেও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
“এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ আমরা পাইনি। আমরা পাঁচ বছরে যত দুর্যোগ মোকাবেলা করেছি, তার মধ্যে এবারের আয়োজন…ব্যবস্থাপনাটি ছিল সর্বোচ্চ সঠিক।”
দুর্যোগকালীন লাখ লাখ মানুষের ব্যবস্থাপনা সহজ নয় জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, “হাজার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র, লক্ষ লক্ষ মানুষ। এদের ব্যবস্থাপনা বাস্তবিক অর্থে এত সহজ না। আমরা দেখেছি এর আগেও সক্ষমতা ১০০ জনের হলেও ২০০ মানুষ আসে। তাদের খাওয়া-দাওয়া, স্যানিটেশনের ব্যবস্থা খুব সহজ নয়।”
তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাজের প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী।
“এবার আমাদের ব্যবস্থাপনা খুবই সুন্দর হয়েছে। কোথাও কোনো লুপহোল ছিল না।”
বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থলভাগে উঠে এসেছে মোখার কেন্দ্রসহ বেশির ভাগ, কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা নাগাদ আরও দুর্বল হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে মোখার পুরো অংশ উপকূলে উঠে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বুলেটিন বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে এলাকার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে রোববার বিকাল ৩টায় মিয়ানমারের স্থলভাগে অবস্থান করছিল। সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে।
ওই সময় ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
রোববার ভোরে এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে। সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
অর্থাৎ, উপকূল অতিক্রম করার পথে এ ঝড়ের বাতাসের শক্তি কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
জাপানের হিমাওয়ারি ৯ স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোববার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড় মোখার বেশিরভাগ অংশ স্থলভাগে উঠে এসেছে।
ঝড় দুর্বল হলেও সংকেত এখনও নামায়নি আবহাওয়া অফিস। কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গাছপালা উপড়ে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পৌনে ৫টার দিকে শাহ পরীর দ্বীপের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ির উপর এসব গাছ পড়ে ক্ষতি হয়েছে। বাজারে দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোথাও কোথাও টিনের চাল উড়ে যেতে দেখা গেছে। শাহ পরীর দ্বীপের তিন রাস্তার মাথার বাজার এবং শাহ পরীর দ্বীপ ফুটবল মাঠের পাশের সড়কে গাছ পড়ে থাকায় যান চালাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষই ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফলে বাড়িঘর ও এলাকা প্রায় জনশূন্য।
বিকাল ৫টার পর থেকে লোকজনকে শাহ পরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ির দিকে যেতে দেখা গেছে।
সেসময় আকাশ অনেকটাই মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। লোকজন সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ঘরবাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করেছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের বক্ষে থাকা প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের গাছপালা ও বাড়িঘরের বেশ ক্ষতি হয়েছে; গাছচাপায় একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করে কক্সবাজার জেলার এ দ্বীপে। দুপুরের দিকে বৃষ্টি ও বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। বিকাল ৪টার পর তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
টানা এক ঘণ্টার বেশি প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টির পর আবহাওয়া ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে। বিকাল ৫টার পর বেরিয়ে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে গাছপালা উপড়ে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টিনের ও কাঁচা ঘরবাড়ি।
সন্ধ্যার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, সেন্ট মার্টিনে ১২০০ মত ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলাজুড়ে হতাহতের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই।”
এ সময় তিনি আরও জানান, আবহাওয়া একটু ভাল হলেই জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তৎপরতা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু হবে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্থানীয় মেম্বার ও লোকজনের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিচ্ছি। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তবে এখনি প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি জানা সম্ভব না উল্লেখ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, “এখন অন্ধকার হয়ে গেছে। আকাশ বেশ মেঘাচ্ছন্ন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে।”
উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা; বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে পরিণত হয়েছে স্থল গভীর নিম্নচাপে।
ঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ায় কক্সবাজার বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আর মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।