“আমরা জানার চেষ্টা করব, তিনি কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট পুড়িয়ে আনন্দ উল্লাস করেছেন।”
Published : 09 Dec 2023, 11:27 PM
ফেইসবুক লাইভে এসে পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলাসহ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে আলোচনার জন্ম দেওয়া আদম তমিজী হককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রেপ্তারের ঘণ্টা দেড়েক পর সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
উত্তরার দক্ষিণখান থানায় বিস্কুট ও ব্যাটারি কোম্পানি এ টি হক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তমিজী হকের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন এক কাউন্সিলর।
মামলায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা রকম বিরূপ মন্তব্য করেছেন তমিজী। তিনি জনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ, মিথ্যা আক্রমণাত্মক তথ্য-উপাত্ত প্রচারের মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি’ দিয়ে আসছেন।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, “তার কারও সঙ্গেই কোনো শত্রুতা নেই। তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীও অভিযোগ দিয়েছে। সবগুলো মিলিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
“আমরা জানার চেষ্টা করব, তিনি কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট পুড়িয়ে আনন্দ উল্লাস করেছেন।”
তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হলে তাকে রিহ্যাবে (পুনর্বাসন কেন্দ্র) পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গত কয়েক বছরে নানা কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসা তমিজী এবারের আলোচনার সূত্রপাত ঘটান গত সেপ্টেম্বরে।
সে সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তোলেন। এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এটা তার বিরুদ্ধে একটি ‘চক্রান্ত’।
সে সময় ফেইসবুক লাইভে এসে নানা কথায় ক্ষোভ ঝাড়েন তমিজী; এমনকি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টও পুড়িয়ে ফেলেন, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
ফেইসবুক লাইভে অসংলগ্ন কথাবার্তা ও আচরণ, স্ত্রীকে নির্যাতন, একাধিক বিয়েসহ নানা ঘটনায় তাকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা বাড়তেই থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও বিভিন্ন মন্তব্য করে দলে রোষের মুখে পড়েন। আওয়ামী লীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারও করে।
এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম।
গত সেপ্টেম্বরে নিজের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলার সময় এক ফেইসবুক লাইভে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাতজোড় করে ক্ষমা চান আদম তমিজী। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আমার মা।” বাংলাদেশে আর আসবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
তবে তমিজী দেশে ফেরেন নভেম্বরের শুরুতে। এরপর তাকে গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে বেশ গুঞ্জন হয়।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, “আদম তমিজি হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মা ইসরায়েলি বলে সেই সরকারের সহায়তা চান। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন সেনাদের কাছেও সহযোগিতা চেয়ে তাকে উদ্ধারের দাবি জানান।
“আসলে বাংলাদেশ সরকার যদি আটকাতো, বিমানবন্দর দিয়ে যখন দেশে আসে, তখনই তো তাকে আমরা আটকাতে পারতাম। সে দেশে এসে এ ধরনের পাগলামি করছে।”
বাংলাদেশি পাসপোর্ট আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তার।
“এগুলো যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে”, বলেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন।
তমিজীর বিরুদ্ধে স্ত্রী সাইরা সিদ্দিকী তানহা আদালতে একটি মামলা করেন গত অক্টোবরে।
সেখানে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ে হয়। পরে জানতে পারেন তার স্বামীর একাধিক বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর জোর করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ২ অক্টোবর তাকে তালাকের নোটিস পাঠান তমিজী।
এরপর গত ১৬ নভেম্বর তমিজীর বাসায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় র্যাব। সে সময় এ টি হকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেইসবুক লাইভে এসে নানা আপত্তিকর মন্তব্যও করেন। তিনি আত্মহত্যার হুমকিও দেন।
আরও পড়ুন