ফেইসবুক লাইভে এসে গত সেপ্টেম্বরে নানা কথায় ক্ষোভ ঝাড়েন তমিজী; এমনকি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টও পুড়িয়ে ফেলেন, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
Published : 09 Dec 2023, 08:57 PM
ফেইসবুক লাইভে এসে পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলাসহ অসংলগ্ন নানা আচরণে তুমুল আলোচিত বিস্কুট কোম্পানি এ টি হক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার রাত রাত সড়ে ৮টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ডিএমপির উপকমিশনার (গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগ) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
তাকে কী অভিযোগে ধরা হয়েছে, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।”
গত কয়েক বছরে নানা কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসা তমিজী এবারের আলোচনার সূত্রপাত ঘটান গত সেপ্টেম্বরে।
সে সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তুলেন। এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এটা তার বিরুদ্ধে একটি ‘চক্রান্ত’।
সে সময় ফেইসবুক লাইভে এসে নানা কথায় ক্ষোভ ঝাড়েন তমিজী; এমনকি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টও পুড়িয়ে ফেলেন, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
ফেইসবুক লাইভে অসংলগ্ন কথাবার্তা ও আচরণ, স্ত্রীকে নির্যাতন, একাধিক বিয়েসহ নানা ঘটনায় তাকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা বাড়তেই থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে দলে রোষের মুখে পড়েন। আওয়ামী লীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারও করে।
এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম।
এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা রকম বিরূপ মন্তব্য করেছেন তমিজী। তিনি জনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ, মিথ্যা আক্রমণাত্মক তথ্য-উপাত্ত প্রচারের মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি’ দিয়ে আসছেন।
গত সেপ্টেম্বরে নিজের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলার সময় এক ফেইসবুক লাইভে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাতজোড় করে ক্ষমা চান আদম তমিজী। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আমার মা।” বাংলাদেশে আর আসবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
তবে তমিজী দেশে ফেরেন নভেম্বরের শুরুতে। এরপর তাকে গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে বেশ গুঞ্জন হয়।
তার বিরুদ্ধে স্ত্রী সাইরা সিদ্দিকী তানহাও আদালতে গিয়ে একটি মামলা করেন গত অক্টোবরে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ে হয়। পরে জানতে পারেন তার স্বামীর একাধিক বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর জোর করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ২ অক্টোবর তাকে তালাকের নোটিস পাঠান তমিজী।
গত ১৬ নভেম্বর তমিজীর বাসায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় র্যাব। সে সময় এ টি হকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেইসবুক লাইভে এসে নানা আপত্তিকর মন্তব্যও করেন। তিনি আত্মহত্যার হুমকিও দেন।
কে এই আদম তমিজী
বিস্কুট কোম্পানি এ টি হক লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আদম তমিজীর বাবা ব্যারিস্টার তমিজী হক। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির নাম দেশের মানুষ জানে বিস্কুট ও ব্যাটারির জন্য।
১৯৭৬ সালে জন্ম নেওয়া আদম তমিজী পড়ালেখা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশে ফিরে তিনি পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন এবং বাবার মৃত্যুর পর কোম্পানির দায়িত্ব নেন।
তার রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা শুরু হয় ‘মানবিক বাংলাদেশ’ নামে একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার মধ্য দিয়ে। এক সময় তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের এক কমিটিতে পদ পান।
২০১৭ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সেই মনোনয়ন না পেলেও ২০২০ সালে দলটির ঢাকা উত্তর সিটি কমিটিতে জায়গা পান।