যে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবি হয়েছিল, তার ছয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 20 Nov 2022, 02:44 PM
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও জানালো, বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা থেকে পড়েই আওয়ামী লীগ নেতা দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় মর্নিং সান-৫ নামের ওই লঞ্চের দুইজন মাস্টার, দুইজন ইঞ্জিন মাস্টার, সুকানি ও সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. সাইদুর রহমান (৩৮), মো. আল আমিন (৩৫), মো. মাসুদ রানা (৩৮), মো. ইমন (২৩), মো. সালমান (২১) ও ইব্রাহিম (২৯)।
শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মশিউর রহমান জানান।
রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজ হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে, অটোরিকশার চালক ও নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে, বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌ দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব গত কয়েকবছর ধরে কেরানীগঞ্জের বাস্তা এলাকায় সোনামাটি এগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি খামার চালাচ্ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ কমিটিরও সদস্য ছিলেন।
গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাড়িতে আসার পথে তিনি নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার।
এরপর গত ১২ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা ঘাট এলাকার বুড়িগঙ্গা থেকে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনরা ওই মরদেহ দুরন্ত বিপ্লবের বলে শনাক্ত করেন।
পরদিন তার লাশের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক সাংবাদিকদের বলেন, দুরন্ত বিপ্লব ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার’ হয়েছেন। বিপ্লবের ছোটবোন শাশ্বতী বিপ্লব তখন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
চিকিৎসক ও পরিবার হত্যার সন্দেহের কথা বললেও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ দুর্ঘটনার কথা বলে আসছিল। ওই ঘটনার ছায়া তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (পিবিআই) শনিবার একই কথা জানায়।
পিবিআইর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাফিন মাহমুদ জানান, কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে আসার পথে বুড়িগঙ্গার যে অংশ নিখোঁজ হন দুরন্ত বিপ্লব, সেখানে একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ছোট নৌকার মাঝি শামসুকে খুঁজে পাওয়ার পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ওই ঘটনা হত্যাকাণ্ড নয়, দুর্ঘটনা।
রোববার গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের তথ্য জানাতে এসে উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, “ইতোমধ্যে পিবিআইও আপনাদের মৃত্যুর কারণ জানিয়েছে। আমরাও তার নিখোঁজের পর থেকেই সবকিছু তদন্ত করে আসছি। তদন্ত তার কোনো শত্রু পাওয়া যায়নি।”
দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু 'দুর্ঘটনায়': পিবিআই
দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা
নিখোঁজ দুরন্ত বিপ্লবের লাশ মিললো বুড়িগঙ্গায়
দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে: ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক যে হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মশিউর রহমান বলেন, “একটি ঘটনা তদন্ত করতে অনেক সময় লাগে। শরীরের অবস্থা, ক্ষত, ক্ষতের গভীরতা, আঘাতের ধরন এগুলো বলতে পারেন চিকিৎসক, কিন্তু হত্যা না আত্মহত্যা– হুট করে বলা যায়না। ঘটনার সময় পারিপার্শ্বিক অনেক কিছু থাকে।”
পিআইবির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান শনিবার বলেছিলেন, ডুবে যাওয়া পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন সাঁতরে দুই ঘাটতে উঠতে পারলেও একজন পারেননি। ডুবে যাওয়া ওই ব্যক্তি দুরন্ত বিপ্লব বলে শামসু মাঝি জানিয়েছেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, যে নৌকার যাত্রী ছিলেন দুরন্ত বিপ্লব, সেখানে দুই যাত্রীর একপাটি করে জুতা পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুরন্তের খামারের ব্যবস্থাপক ও তার স্বজনরা জুতা দেখে একটি তার বলে চিহ্নিত করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমানও পিবিআইয়ের মত একই বর্ণনা দেন সংবাদ সম্মেলনে।