আওয়ামী লীগ নেতা দুরন্ত বিপ্লবের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান যেখানে শনাক্ত হয়েছে, ঘটনার দিন সেখানেই নদীতে নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার কথা জেনেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
তবে বুড়িগঙ্গায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী নৌ পুলিশ বলছে, ৭ নভেম্বর এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে তা তাদের জানা নেই।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ধারণা, দুরন্ত হত্যাকাণ্ডেরই শিকার হয়েছেন। আর তার পরিবার সেটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে।
কৃষি খামারি দুরন্তকে কারা কেন হত্যা করবে, সেই বিষয়ে কোনো ধারণা কেউ দিতে পারেননি। সবমিলিয়ে তার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
দুই যুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দুরন্ত। রাজনীতিতে এখন আগের মতো সক্রিয় না থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
দুরন্ত কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জের বাস্তা এলাকায় সোনামাটি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি খামার চালাচ্ছিলেন।
গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাড়ি আসার পথে তিনি নিখোঁজ হন। কোথাও খোঁজ না পেয়ে দুদিন পর ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার।
এর মধ্যে গত শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা ঘাট এলাকার বুড়িগঙ্গা থেকে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে স্বজনরা তাকে দুরন্ত বিপ্লব হিসেবে শনাক্ত করেন।
পুলিশ বলছে, ৭ নভেম্বর তারা পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গায় নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার খবর শুনেছেন।
ওই এলাকার অনেকেই ঢাকায় আসতে বুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া পার হন। কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকা থেকে নৌকায় উঠে সোয়ারীঘাটে এলে অনেকটা পথ যানজট এড়ানো যায়। দুরন্তও ওই পথটিও ব্যবহার করতেন।
দুরন্তের ভগ্নিপতি ইমরুল খান বলছেন, “৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ (খামার) থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাসায় যাওয়ার পথে ও নিখোঁজ হয়। ওর মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া যায় কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকায়।”
কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকাটি বুড়িগঙ্গা নদীর জিঞ্জিরা ও সোয়ারীঘাটের মাঝ বরাবর খানিকটা দূরের স্থলভূমি, যে স্থানে নদী ভাগ হয়ে দুই পাশ দিয়ে বয়েছে। বুড়িগঙ্গার এই অংশটা দিয়ে ঘাট পারপারের খেয়া নৌকাগুলো চলাচল করে।
নদীর মাঝখানে দুর্ঘটনা ঘটলে মুসলিমবাগের মোবাইল টাওয়ারই শনাক্ত হওয়ার কথা বলে ধারণা পুলিশের।
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ওসি শাহজামান বলছেন, “উনার (দুরন্ত বিপ্লব) মোবাইল ফোন লোকেশন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেই জায়গায় দুর্ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে, ৭ নভেম্বর দুরন্ত বিপ্লবের সর্বশেষ অবস্থান সেখানে ছিল।”
নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার খবর জানালেও তিনি বলেন, “তবে নৌকা থেকে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিই যে দুরন্ত বিপ্লব, আমরা এখনো সে কথা বলছি না। আমাদের তদন্ত চলছে।”
এদিকে ৭ নভেম্বর কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মানতে নারাজ নৌ-পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের বরিশুর ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ এসআই নকীব ওয়ায়েজুল হক।
তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু এমন কোনো খবর পাইনি। এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে আমাদের কাছে কোনো না কোনোভাবে খবর আসে। তাছাড়া আমরা নদী এলাকায় নিয়মিত টহলও দিই। কিন্তু এমন কোনো খবর পাইনি।”
দুরন্ত বিপ্লবের লাশ উদ্ধারের পর নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত হয়।
চিকিৎসক মফিজ উদ্দিন নিপুণ বলছেন, “নিহতের মাথার পেছনে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এটা ধাতব কোনো বস্তুর আঘাতের চিহ্ন বলে মনে হচ্ছে। লাশটি ৩-৪ দিন আগের, গলে গিয়েছিল। দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
দুরন্তের বোন শাশ্বতী বিপ্লবও বলছেন, তার ভাইকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলেই তারা মনে করেন।
“ভাইয়ার মতো একজন নির্বিবাদী মানুষের প্রতি কে এতটা হিংস্র হতে পারে জানি না,” ফেইসবুকে লিখেছেন তিনি।