এই রাষ্ট্রদূতদের ডেকে আনাকে তলব বলতে চান না শাহরিয়ার আলম।
Published : 26 Jul 2023, 11:04 PM
এক ঘটনায় একসঙ্গে ১৩ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে অসন্তোষ জানালেও তার প্রভাব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে পড়বে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
হিরো আলমের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় সরকার যে অসন্তুষ্ট হয়েছে, তা জানাতে বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের ডাকা হয়।
তাদের কূটনীতিকদের আচরিত ভিয়েনা কনভেনশনের বিধিগুলো মনে করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ না করে কূটনীতিকদের এমন আচরণ পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে বলেও তাদের সতর্ক করা হয়।
হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি: ১৩ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে অসন্তোষ জানাল সরকার
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই বৈঠকে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। ইতালি, সুইডেন ও ডেনমার্ক দূতাবাসের প্রতিনিধি ছিলেন সেখানে।
পরে শাহরিয়ার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সামনে এলে তাকে প্রশ্ন করা হয়, সরকারের এই পদক্ষেপ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি না?
উত্তরে তিনি বলেন, “না, এটা কোনোভাবে এই রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্কে কোনো ছেদ করবে না।
“কোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কার্যকরী সম্পর্ক থাকলে তার সঙ্গে ‘বার্নিং ইস্যু’ও সামনে আসতে পারে। অনেক সময় স্ব স্ব দেশের রাজধানীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের অবস্থানের ভিন্নতা থাকতে পারে।”
রাষ্ট্রদূতের মতের সঙ্গে তার দেশের সরকারের অবস্থানের ভিন্নতার উদাহরণ দিতে গিয়ে শাহরিয়ার বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন একটি দেশের রাষ্ট্রদূত কমেন্ট করেছিলেন, যেটি তাদের ক্যাপিটালের কমেন্ট ছিল না এবং তাকে আমরা সামন করেছিলাম।
“তারপরে সেই দেশের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময় হয়েছে, অতি সম্প্রতি সফর হয়েছে; আমরা প্রতিনিয়তই ডেলিভারেবলস উপহার দিয়েছি দুদেশের নাগরিকদেরকে।”
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি’ করা নিয়ে মন্তব্য করার পর ২০২২ সালের নভেম্বরে জাপানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে চার দিনের জাপান সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুদেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে কয়েকটি সফর বিনিময় হয়েছে।
জাপান রাষ্ট্রদূতের নাম উল্লেখ না করে আরেক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা রেজাল্ট পেয়েছি। আমি মিডিয়াতে দেশের নাম উল্লেখ করে বলাটা ঠিক কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না, আপনি যদি বিভিন্ন দেশ ধরে কিছুটা বিশ্লেষণ ও গবেষণা করার চেষ্টা করেন, আপনি পাবেন।
“আমরা আশা করি, আজকের এই প্রক্রিয়ার পরে এই রাষ্ট্রগুলোও এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে না।”
রাষ্ট্রদূতদেরকে ডেকে পাঠানোকে ‘তলব’ না বলার পক্ষে মত জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, এটাকে আমরা তলব বলছি না। ১২টি বা ১৩টি দেশকে একসঙ্গে…
“আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের যিনি প্রতিনিধি ঢাকাতে, তাকে আমরা তলব করেছিলাম, যেটা ছিল অবশ্যই তলব। যেটাকে কূটনৈতিক ভাষায় ‘সামন’ বলা হয়। এবং সেটি করার কারণ ছিল, আমরা জাতিসংঘ সদরদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা বা কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য কোনো কাজ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একজন আবাসিক সমন্বয়ক করতে পারেন না, আমরা যতদূর জানি।”
সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রদূতদের যা বলা হয়েছে, তা ওইসব দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরেও পাঠান হবে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের অসন্তুষ্টি জানিয়ে দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে যেন তাদের দূতাবাসের কেউই এ ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত না হন, সেই আহ্বান থাকবে।”
একসঙ্গে এতজন মিশন প্রধানকে ডাকার নজির না থাকার বিষয়টি এক সাংবাদিক তুলে ধরলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একসাথে এতগুলি রাষ্ট্র এর আগে খুব বেশি করেনি। এবং এখানে ফান্ডামেন্টাল কিছু ফ্লজ আছে, তাদের এই মিডিয়া স্টেটমেন্টে, সেগুলি তুলে ধরেছি।
“যখন এই ধরনের ঘটনা আসবে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তখনই করব। এর আগেও করেছি। ধারাবাহিকতা আছে, এটা হুট করে কিছু নয়।”