এই ধরনের কর্মকাণ্ড পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে, কূটনীতিকদের বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
Published : 26 Jul 2023, 06:03 PM
হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতিদাতা ১৩ জন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সরকার বলছে, তাদের এই কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন হয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের ডেকে সরকারের অসন্তোষের কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই রাষ্ট্রদূতরা বিবৃতি দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে পশ্চিমা এই দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে উপনির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে তাদের এই বিবৃতি এসেছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। ইতালি, সুইডেন ও ডেনমার্ক দূতাবাসের প্রতিনিধি ছিলেন সেখানে।
পরে শাহরিয়ার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব আশরাফুল আলমকে কেন্দ্র করে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকাস্থ যেসকল দূতাবাস গণমাধ্যমে একটি যৌথবিবৃতি দিয়েছিল, আজ দুপুরে তাদের রাষ্ট্রদূতগণকে আমরা ডেকেছিলাম।
“তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি যে, এটি একটি ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।”
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে নিরুত্তাপ উপনির্বাচনে উত্তাপ ছড়িয়েছিল হিরো আলমের উপর হামলা। ভোটারদের অনাগ্রহের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত জয়ী হন।
কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠকের একটা অংশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আরাফাতও ছিলেন।
এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণে কোনো অনিয়ম ছিল না দাবি করে শাহরিয়ার বলেন, “শুধু একটি কেন্দ্রে শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে গুটিকয়েক কূটনীতিকবৃন্দ যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা কখনোই সারাদিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলন করে না।
“দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি। ঘটনার বিষয়টি জানার সাথে সাথে নির্বাচন কমিশন ও সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে।”
১৯ জুলাই কূটনীতিকদের বিবৃতি আসার আগেই ‘হামলাকারী’ দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই কূটনীতিকরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়।
“সত্যি কথা বলতে, যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সাথে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সাথে তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়।”
“আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন,” বলেন শাহরিয়ার।
কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এই রাষ্ট্রদূতদের।
“পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে যে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রদূতদের কারও কোনো প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ সাংবাদিকদের হয়নি।
কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল- এ প্রশ্নে শাহরিয়ার বলেন, “এটার পরিপ্রেক্ষিতে যে চার-পাঁচজন কথা বলেছেন, তারা মূলত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন যে, এটা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হয়নি। তারা আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য করেছেন। তারা মনে করেছেন যে, এটি আমাদের সাথে কন্টিনিউয়াস এঙ্গেজমেন্ট আছে, এটাই ধারাবাহিকতার অংশ।”
তাদের এই যুক্তি খণ্ডন করেছেন জানিয়ে শাহরিয়ার বলেন, “ভিয়েনা কনভেনশনে পরিষ্কার বলা আছে, যে কোনো রাষ্ট্রদূতের প্রথম যোগাযোগের জায়গা হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
“গণমাধ্যমের সাথে তাদের কথা, তাদের যোগাযোগ আমরা সবসময় সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কোনো বিষয়েই প্রথম তাদের উচিৎ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে আমাদেরকে সেটি জানান। সেক্ষেত্রে তারা এই কাজটি যে যথাযথ করেনি।”
আরাফাতের উপস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ব্রিফিংয়ের একটি অংশে আমরা মনে করেছি, তাদের যদি কিছু জানার থাকে, বিজয়ী যিনি প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, তিনি ব্রিফিংয়ের পুরো সময় না, একটু অংশ ছিলেন। কারণ, এই ব্রিফিংটি আপনারা জানেন, এটা সরকারের অবস্থান।
“কিন্তু সেই ঘটনায় বা যেই নির্বাচনটিকে নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মাঠ পর্যায়ের নতুন কোনো তথ্য থাকে, এমনকি বিজয়ী প্রার্থী নিজেও সাথে সাথে ঘটনার নিন্দা করেছেন, সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দ্রুত বিচারের, সেটি তিনি তারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সেটা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং তিনি এই ব্রিফিংয়ে আংশিক সময় উপস্থিত ছিলেন।”