ছুটির দিনে বইমেলায় দর্শনার্থীর চাপ, ভোগান্তি

তৃতীয় দিনেও মেলা পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2023, 03:58 PM
Updated : 3 Feb 2023, 03:58 PM

একুশে বইমেলার প্রথম শিশুপ্রহরে কচিকাঁচাদের যে উচ্ছ্বাস ছড়াল, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই মেলার সেই মেজাজ খানিকটা হারাল উপচেপড়া ভিড়ে। 

এবার স্টল থেকে স্টলের দূরত্ব কম হওয়ায় শুক্রবারের দর্শনার্থীদের চাপ কিছু কিছু জায়গায় রীতিমতো ধাক্কাধাক্কিতে রূপ নেয়। 

মেলা ঘুরে ভিড় সামলাতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যেমন হিমশিম খেতে দেখা গেল, তেমনই অনেক জায়গায় এ দিনও স্টল নির্মাণের কাজ সারতে দেখা গেল। 

দর্শনার্থীদের কেউ জানালেন, মেলায় অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হলেও সেখানে পানি সরবরাহ শুরু হয়নি। কেউ বললেন, অতিরিক্ত লোকসমাগমের সাথে ভোগান্তি বাড়িয়েছে ধুলা। 

তবে তৃতীয় দিন আলোহীন লিটলম্যাগ চত্বরে বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। 

ধানমন্ডি থেকে আসা আব্দুল খালেক ক্ষোভ ঝেরে বললেন, “টয়লেট করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে পানির লাইন নেই। মেলার মাঠে ধুলার ভোগান্তি। তাহলে মেলার আয়োজকেরা কী প্রস্তুতি নিয়েছেন এতদিন? 

“প্রথম শুক্রবারই ভিড় সামলাতে পারছে না মেলা। এরপর পহেলা ফাল্গুন, ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন মেলায় ভিড় সামলাবে কীভাবে? এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজকদের ভাবা উচিত।” 

স্টলের দূরত্ব কমানোকে মেলা শুরুর আগে ইতিবাচক হিসেবেই দেখার কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল।

কিন্তু এ সিদ্ধান্তে ছুটির দিনে মানুষের ভিড় সামলানো কঠিন হবে বলে তখন মত দিয়েছিলেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার।

তিনি বলেছিলেন, “প্রতি বছরই ছুটির দিন, বিশেষ করে ২১শে ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাল্গুনে প্রচুর লোক সমাগম হয়। এবার তো স্টলগুলো কাছাকাছি করা হয়েছে, তাই মানুষের চাপ বেশি হলে কিছুটা বিড়ম্বনা হবে।”

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুয়েকটি স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আমরা তাদের বলেছি, তারা কাল যদি শেষ করতে না পারে, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আগামী মেলায় স্টল না দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। 

Also Read: শিশুদের প্রহরে শিশুদের উৎসব

“এছাড়া অন্যান্য কিছু সমস্যা আছে, যেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ধুলার জন্য আমরা পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করি। সেটা কাল থেকে আরও বেশি করা হবে। সমস্যার সমাধান হবে।” 

এবারের বইমেলায় প্রথম শিশু প্রহর শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল ১১টায়; বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা শিশু চত্বরে শিশু প্রহর উদ্বোধন করেন।

মাসব্যাপী এ মেলায় সপ্তাহের দুদিন শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুদের জন্য, এই সময়টাকে ঘোষণা করা হয় শিশু প্রহর হিসেবে।

যদিও সেই প্রহরে শিশু চত্বরের অন্যতম আকর্ষণ সিসিমপুরের অনুষ্ঠান দেখা যায়নি। তবে বিকাল হতেই মেলায় আসে প্রিয় চরিত্র ইকরি, হালুম, টুকটুকিসহ অন্যরা। এবার সিসিমপুরের নতুন চরিত্র জুলিয়া প্রথমবার এসেছে শিশু চত্বরে। সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। 

সিসিমপুরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বললেন, "সবাইকে বই পড়তে হবে। সবাই বই পড়বে তো?" 

শিশুরাও সমস্বরে জানায়, তারা পড়বে। 

অভিভাবকদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, "এখন অনেক অভিভাবকদের দেখি- তারা শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন। খাওয়ানোর সময় এই কাজ করেন। শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেবেন না, তাদের হাতে বই তুলে দিন।" 

মেলার তৃতীয় দিন নতুন ৯৬টি বই আসার কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ। 

অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে 

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘স্মরণ: আবুল মাল আবদুল মুহিত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। 

এতে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কুতুব আজাদ বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক-পাঠক-ভাবুক-বিশ্লেষক-গবেষক-অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক এক বর্ণিল ও বিচিত্র প্রতিভা। ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ছিল তার আজীবন চলার পাথেয়। 

“তার বিপুল গ্রন্থরাজি, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গবেষণাপত্র দেশব্যাপী পাঠককুলের সাথে তাকে এক মেলবন্ধনে আবদ্ধ করে। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন সংস্কৃতিবান ও রুচিবান আত্মনিবেদিত দেশকর্মী। নানা বিবেচনায় মনস্বী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্মোহ মূল্যায়ন প্রয়োজন।" 

আবুল মাল আবদুল মুহিতকে একাধারে লেখক, গবেষক, রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ হিসেবে বর্ণনা করে কুতুব আজাদ বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে তিনি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন। শিক্ষাদীক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছিলেন বলে আজীবন তিনি ছিলেন বইপ্রেমী। 

“গবেষণা ও লেখালেখির প্রতি তার যেমন আগ্রহ ছিল, তেমনই বাঙালির মূলধারার আন্দোলনের সঙ্গেও ছিলেন ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি যেমন প্রশাসক, কূটনীতিক ও অর্থনীতিবিদ হিসেবে সফল, তেমনই নিষ্ঠাবান গবেষক ও লেখক হিসেবেও অনন্য।”

আওয়ামী লীগের মুখপত্র মাসিক ‘উত্তরণ’ সম্পাদক নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন বিরলপ্রজ বাঙালি। মেধা-মননে, শিক্ষাদীক্ষায় আলোকিত আবদুল মুহিত একজন সার্থক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না; মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, সত্যবাদী এবং দেশপ্রেমিক। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তার জীবন ও কর্ম তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে।" 

আলোচনায় মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, জালাল ফিরোজ ও এম আবদুল আলীম অংশ নেন। 

এ দিন মেলার 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আহমদ বশীর, সুজন বড়ুয়া, রাজীব সরকার ও হারিসুল হক।  

মূলমঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত, কুমার চক্রবর্তী ও সুপ্রিয়া কুণ্ডু। আবৃত্তি করেন শিল্পী রেজিনা ওয়ালী, ঝর্ণা সরকার ও আহসানউল্লাহ তমাল। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টসের (বাফা)’ নৃত্যশিল্পীরা। 

সংগীত পরিবেশন করেন সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, শাহনাজ নাসরিন ইলা, মো. হারুন অর রশীদ ও আব্দুর রশীদ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ) ও নাজমুল আলম খান (মন্দিরা)। 

শনিবার যা থাকছে 

শনিবার বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এ দিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর চলবে।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : ড. আকবর আলি খান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। আলোচনায় অংশ নেবেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মোফাকখারুল ইকবাল ও কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ সাদিক।