প্রস্তাব উত্থাপনকারী স্টিভ শ্যাবট বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা কোনোভাবেই ভুলতে দেওয়া যায় না।
Published : 15 Oct 2022, 05:00 PM
একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ স্বীকৃতি দিতে প্রস্তাব উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায়।
শুক্রবার দেশটির কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট প্রতিনিধি পরিষদে এই প্রস্তাব আনেন, যা তিনি টুইটারে জানিয়েছেন।
তার আনা এই প্রস্তাবে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান সদস্য শ্যাবট টুইটে লিখেছেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা কোনোভাবেই ভুলতে দেওয়া যাবে না।
“ওহাইওর ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্টের আমার সহকর্মী রো (রোহিত) খান্নার সহযোগিতায় আমি বাঙালি ও হিন্দুদের উপর চালানো সেই সুনির্দিষ্ট গণ-নৃশংসতার স্বীকৃতি আদায়ে প্রস্তাব পেশ করেছি।”
The Bangladesh Genocide of 1971 must not be forgotten. With help from my Hindu constituents in Ohio’s First District, @RepRoKhanna and I introduced legislation to recognize that the mass atrocities committed against Bengalis and Hindus, in particular, were indeed a genocide.
— Rep. Steve Chabot (@RepSteveChabot) October 14, 2022
রোহিত খান্না টুইটে লিখেছেন, এই ধরনের একটি প্রস্তাব কংগ্রেসে প্রথম আনার ক্ষেত্রে স্টিভ শ্যাবোটের সহযোগী হতে পেরে তিনি গর্বিত।
Proud to join @RepSteveChabot in introducing the first resolution commemorating the 1971 Bengali Genocide in which millions of ethnic Bengalis and Hindus were killed or displaced in one of the most forgotten genocides of our time.
— Rep. Ro Khanna (@RepRoKhanna) October 14, 2022
প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখের বেশি নারীর সম্ভ্রমহানি এবং প্রায় ১ কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের উপর চালানো পাকিস্তানিদের বর্বরতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’।
পাকিস্তানিদের শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, জেনোসাইড ওয়াচ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর যেসব অপরাধ করেছে, তার মধ্যে ছিল ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’।
সেসব অপরাধ ও জেনোসাইডের ঘটনাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ।
তার আগে চলতি বছরের প্রথম দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’ একাত্তরে বাংলাদেশিদের উপরে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান; শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।
নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। তখন থেকেই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।