“কমিউনিটি পুলিশিং দরকার। শুধু পুলিশ না, স্থানীয় আদিবাসী জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের দ্বারা আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম করতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 19 Dec 2023, 09:35 PM
অবিলম্বে পথনকশা প্রণয়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারসহ প্রতিটি দলের পথনকশার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে তা এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার ঢাকার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর: পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়ন, সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন তাগিদ দেন তিনি।
কাপেং ফাউন্ডেশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এএলআরডি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
অধ্যাপক মিজানুর বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নিবার্চনি ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কথার উল্লেখ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত শুধু উল্লেখ থাকা নয়, প্রথম ৩৬৫ দিনের মধ্যে শান্তি চুক্তি যেন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয় তার একটি পথনকশা এ নির্বাচনি ইশতেহারে দিতে হবে। তৃতীয়ত কমিউনিটি পুলশিং অবিলম্বে কার্যকর করা দরকার।
“শুধু পুলিশ না, স্থানীয় আদিবাসী জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের দ্বারা আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে করতে হবে।”
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের গণতন্ত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকতে পারে না, লোক দেখানো অর্ন্তভুক্তিমূলক হলে হবে না, গণতন্ত্র হতে হবে একটি অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং কার্যকর। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে কোনো রকম আলোচনা না করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৭০ কিলোমিটার পিচ ঢালা পথ তৈরি করে দিব আমি কার জন্য?
“আদিবাসীদের চাওয়া পাওয়া আশা আকাঙ্খা সেটার প্রতিফলন ঘটতে হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড শুধু কাঠামোগত উন্নয়ন হলে হবে না, উন্নয়ন হতে হবে মানবিকগত এবং উন্নয়ন যাদের জন্য করা হবে ও যে অঞ্চলে হবে তাদের মতামতের ভিত্তিতে করতে হবে।”
‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক’ সংসদীয় ককাসের সমন্বয়কারী অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, আমরা কি বাংলাদেশের মধ্যে উপনিবেশ তৈরি করেছি, পাকিস্তানের মতো! দেশকে তো বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে রাষ্ট্রই ঠেলে দিচ্ছে।
“গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের চোখ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে দেখতে হবে। কোনো জাতিকে প্রমোশন দেওয়া যায় না, সমমর্যাদাও দেওয়া যায়। বাঙালি বানানো, মুসলমান বানানো একটি ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যাকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২৬ বছরেও এ চুক্তি এখনও অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
“কথা ছিল এটি আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হবে যা চুক্তিতে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল। বিপরীতে এখনও পর্যন্ত সেখানকার আদিবাসীরা ভূমি বেদখলের শিকার হয়ে উচ্ছেদ হচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক যারা চুক্তি করেছিল বা যারা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সক্রিয় তাদের সরকার মিথ্যা মামলা, নানা রকম নিপীড়ণ নির্যাতন হয়রানির ও এলাকাছাড়া করে রেখেছে।”
সভাপতির বক্তব্যে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ভূমি কমিশন গঠন হলেও এখন পর্যন্ত একটি ভূমি সমস্যার সমাধান হয়নি। ভূমি কমিশনে আইন হয়েছে কিন্তু আজও পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।”
চুক্তি বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষের মধ্যে আবারও আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ব্লাস্টের অ্যাডভোকেসি সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক’ সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য জান্নাত-ই ফেরদৌসি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার রক্ষা আন্দোলনের জুয়ামলিয়ান আমলাই, ডা. অজয় চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরমের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ সিং, সুবর্ণভূমি ফাউন্ডেশনের পরিচালক জাহেদ হাসান, আইপিনিউজের প্রতিনিধি সতেজ চাকমা বক্তব্য দেন।