ষষ্ঠ-সপ্তমের ৪০ বইয়ে ৪২৮ সংশোধনী

দুই শ্রেণির সব বইয়ে সংশোধন আনার কথা জানানো হয়েছিল এপ্রিলের শুরুতে; বৌদ্ধধর্মসহ ৮টি বইয়ে কোনো সংশোধনের দরকার পড়েনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2023, 11:58 AM
Updated : 30 April 2023, 11:58 AM

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রম শুরুর চার মাস পর দুই শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের বইয়ে ৪২৮ ভুল চিহ্নিত করে এর সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড -এনসিটিবি।

এই দুই শ্রেণিতে বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে মোট ৪৮টি বই পড়ানো হয়; এর মধ্যে ৪০টি বইয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে।

এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান মনে করেন, প্রায় চার মাস পর এসব বইয়ের সংশোধনী এলেও শিক্ষার্থীরা এতদিন ‘ভুল কিছু’ শেখেনি।

পহেলা জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীকে ১০টি বিষয় পড়তে হচ্ছে। তবে কয়েকটি ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ১৩টি।

সম্প্রতি এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চার বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাংলা ভার্সনের ১৩ বিষয়ের মধ্যে যথাক্রমে ১১টি ও ১২টি বইয়ের সংশোধন এসেছে।

এছাড়া বাংলা ও ইংরেজি বই দুই ভার্সনে একই থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের অন্য ১১ বিষয়ের মধ্যে সাত বিষয়ের বই এবং সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের ১১ বিষয়ের মধ্যে ১০ বইয়ের নানা পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের ভুলের এসব সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকের ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার এবং তিনটি বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধনের কথা জানিয়েছিল এনসিটিবি।

তখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পরে এপ্রিলের শুরুতে এই দুই শ্রেণির সব বইয়ে সংশোধন আনার কথা জানানো হয়।

ওই সময় এই দুই শ্রেণির সব বইয়েই ভুল ও তথ্যগত অসঙ্গতিগুলোতে সংশোধনী এনে ঈদের পর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও আসে। শিক্ষাক্রম শুরুর চার মাস পর এবার সেই সংশোধনী এল।

এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব বই মিলিয়ে হিসাব করলে ৪৮ বইয়ের বেশিরভাগ বইয়েই সংশোধনী এসেছে।… কিছু বইয়ে সংশোধনী এসেছে, দুয়েকটা ছাড়া, যেমন বৌদ্ধধর্মের বইয়ে কোনো ভুল পাওয়া যায়নি।”

দুই শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ের সংশোধনীতে দেখা যায়, কোথাও কোথাও বাক্য শেষ করা হয়নি। এছাড়া কোথাও লাইন না থাকা, ভুল শব্দ, ভুল বানান, ব্যাকরণ ও ক্রম ভুল থাকা, নতুন লাইন যুক্ত করা, এক পৃষ্ঠা থেকে ছক অন্য পৃষ্ঠায় নেওয়া, ছবির ব্যবহার, পুনরাবৃত্তি থাকায় লাইন বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি বাদ পড়ার মত বিষয়ের সংশোধনী যেমন এসেছে, তেমনি এই শ্রেণির আলোচিত বিষয় ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ের ‘ভালুক’ গল্পে ‘দাড়ি কাটা’ নিয়ে থাকা উক্তি সংশোধন করে ‘দাঁড়ির’ স্থলে ‘চুল’ শব্দটি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। দাড়ি নিয়ে থাকা কয়েকটি উক্তিও বাদ গেছে।

বইটির ১৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ১৬ ও ১৭ নম্বর লাইনে ছিল- ‘তুই মোটেও ভালুক না। একটা বোকা হাঁদারাম মানুষ, যার দরকার দাড়ি চাছা আর উদ্ভট পশমের কোট খোলা।’

সংশোধনে দেওয়া হয়েছে- ‘তুই মোটেও ভালুক না বরং এমন বোকা মানুষ যার পোশাকের ঠিক নেই, চুলও ছাঁটেনি অনেক দিন।’

একই পৃষ্ঠার ১৮ ও ১৯ নম্বর লাইনে ছিল- ‘ভালুকটা একটা গবেট, যার দরকার ভালো করে শেভ করা আর সে পরে আছে একটা পশমের কোট’, এর স্থলে ‘ভালুকটা একটা গবেট, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে পোশাক পাল্টে আসো’ করা হয়েছে।

এছাড়া ২০, ২৮ ও ২৯ পৃষ্ঠায় একাধিকবার দাড়ি চাঁছা ও শেভ করার কথা উল্লেখ ছিল, সেগুলোও বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের এক জিজ্ঞাসায় অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “অনেক স্কুলে জানুয়ারি মাসে খেলাধুলাই হয়েছে বেশি, ক্লাস হয়নি। এর মাঝে রমজান ও ঈদুল ফিতরের জন্য দেড় মাস বন্ধ ছিল। খুব ক্লাস যে হয়েছে তা কিন্তু না। আর যেসব ভুল ধরা পড়েছে সেগুলো মূলত বানান ভুল, গ্রাফিক ডিজাইনের ভুল। এগুলো থেকে যদি মনে হয় বাচ্চাদের খুব ক্ষতি হয়েছে, তাহলে বিষয়টি এমন না।”

এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংশোধনে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির দুই সংস্করণের বিভিন্ন বইয়ে শব্দ, বানানগত ভুলসহ নানা কারণে মোট ২০২টি পরিবর্তন আনা হয়েছে। একইভাবে সপ্তম শ্রেণিতে মোট ২২৬টি সংশোধন এসেছে।

এর মধ্যে দুই শ্রেণির ইংরেজি সংস্করণের বিভিন্ন বইয়ে ৮৫টি ভুলের সংশোধন এসেছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির বই সংশোধনের বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৭১টি সংশোধন এসেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে ৩৬টি, ইংরেজি বইয়ে ৩৫টি, জীবন ও জীবিকা বইয়ে ১৫টি, বিজ্ঞান বইয়ে সাতটি, গণিতে পাঁচটি, বাংলা বইয়ে চারটি, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে পাঁচটি, ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে সাতটি ও হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ে ১৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে।

একইভাবে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৬৫টি, জীবন ও জীবিকা বইয়ে ২৮টি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে ২৪টি, বাংলা বইয়ে ২১টি, ইংরেজি বইয়ে ১১টি, গণিত বইয়ে ২২টি, বিজ্ঞান বইয়ে চারটি, ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ে পাঁচটি, শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ে ১৮টি, ইসলাম শিক্ষা বইয়ে নয়টি, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ে ১২টি ও খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা বইয়ে সাতটি সংশোধনী আনা হয়েছে।

এদিকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার হওয়ায় নতুন সংশোধনীতে এই বিষয়ের অনুশীলন বইয়ের যে যে স্থানে অনুসন্ধানী পাঠ অথবা রিসোর্স বই দেখতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সে সে স্থানে শিক্ষকের সহায়তায় বা উপযুক্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পড়তে আলাদা করে বলা হয়েছে।

পুরনো খবর

Also Read: ষষ্ঠ-সপ্তমের পাঠ্যবইয়ে কী সংশোধন আসছে

Also Read: ষষ্ঠ-সপ্তমের সব বইয়ে সংশোধনী আসছে

Also Read: বইয়ে অধিকাংশ ভুল ১০ বছর আগের: শিক্ষামন্ত্রী 

Also Read: ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই বই প্রত্যাহার

Also Read: পাঠ্যপুস্তকে ভুল: সংশোধন ও তদন্তে দুই কমিটি