২০ টাকা ও ১০০ টাকায় কেনা যাবে এসব ব্যাগ। সেগুলো ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে বারবার।
Published : 29 Sep 2024, 09:22 PM
পলিথিন ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে দুই দশকেরও বেশি সময় পর অন্তর্বর্তী সরকারের তোড়জোরে বিকল্পের সন্ধানের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজন করল পলিথিনের বিকল্প পণ্য মেলার। সেই মেলায় ২০ টাকা ও ১০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন পাটের ব্যাগ প্রদর্শন করা হয়েছে।
রাজধানীর সুপার শপে ১ অক্টোবর থেকে এবং পরের মাস থেকে কাঁচা বাজারে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এই মেলার আয়োজন করা হয় আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ে।
মেলায় ২৪টি স্টলে পাট, কাগজ ও কাপড়ের মত পচনশীল দ্রব্যের ছোট বড় নানা ধরনের ব্যাগের পাশাপাশি ছিল পাট ও কাপড়ের আরও নানা ধরনের গৃহস্থালি, নিত্য ব্যবহার্য ও ফ্যাশন পণ্য।
হেলদি লিভিং নামের একটি অনলাইন লাইফস্টাইল উদ্যোগের অপারেশনস কর্মকর্তা আবেদ আল আজাদ মেলায় আসেন পরিবেশবান্ধব পণ্য প্যাকেজিংয়ের খোঁজে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পণ্য প্যাকেজিংয়ে জন্য পরিবেশবান্ধব ব্যাগ দেখতেই এখানে এসেছি। এছাড়া ভিন্নধর্মী কোনো ব্যাগ পেলে তাও অনলাইনে বিক্রির ইচ্ছা আছে।”
পানিরোধক ব্যাগ
মেলায় কাগজ, পাট, কাপড় ছাড়াও পলিথিনের মত দেখতে এমন ও পানি রোধ কাজ করবে, এমন পণ্য নিয়ে অংশ নেয় দুইটি প্রতিষ্ঠান।
এমন একটি মেটেরিয়াল ডেভলপার উদ্যোগ শালবৃক্ষ। তারা সবজির উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে একটি ফেব্রিক তৈরি করেছে, যার নাম পলকা। এই উপাদান দিয়ে কাপড়ের মত দেখতে ব্যাগ তৈরি করা যাবে। পাশাপাশি পাটের কাপড় ও ব্রাউন কাগজের উপর আবরণ দেওয়া যাবে যাতে তা পলিথিনের মত পানিরোধক হয়।
সুতার সঙ্গে মিশিয়ে কিছুটা পলিথিনের মত দেখতে পাতলা ব্যাগও তৈরি করা যাবে। এই ব্যাগে চাইলেই মাছ, মুরগি ফ্রিজে রাখা যাবে।
ব্যবহারের ধুয়ে ৪ বার পর্যন্ত ব্যাগগুলো ব্যবহার করা যাবে বলে জানানো হয়েছে।
শালবৃক্ষের পরিচালক ইকরামুন্নেছা চম্পা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো পরিবেশবান্ধব উপাদান ও পলকা মিশিয়ে তৈরি ব্যাগ ২ থেকে ৪ মাসের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।”
আরও পড়ুন:
পলিথিন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন: ডিসি, এসপিদের রিজওয়ানা
পলিথিন যে নিষিদ্ধ, সেটাই 'ভুলেছে' মানুষ
অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ
তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ
বছরে তৈরি হচ্ছে ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, পরিবেশে মিশছে ৬০%
মেলায় ভুট্টা থেকে তৈরি পলিথিন নিয়ে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ হ্যান্ডিক্রাফটস ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের (বাংলা ক্রাফট) সদস্য দ্যা ম্যাগনেট।
তারা জানায়, ভুট্টা পাউডার করে তা থেকে পলিথিনের মতই ব্যাগ তৈরি করা হয়। তবে ভুট্টার উপাদান চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এরপর নিজস্ব কারখানায় ব্যাগ তৈরি হয়।
দ্যা ম্যাগনেটের কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই এবং এটি পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাজারে বিক্রিও করছি।”
বেশিরভাগই পাটের ব্যাগ
মেলায় অংশ নেওয়া জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ব্যাগ বিক্রি করেছে। একটু বাড়তি দাম দিয়ে একটি ব্যাগ ১০০ বারও ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে বলে স্টল থেকে জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং হেড সীমা বোস অধোরা বলেন, তারা কয়েকটি সুপারশপ থেকে এক কোটির বেশি পাটের ব্যাগের অর্ডার পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে প্রযুক্তির অভাবে পাটের ফেব্রিক মাত্র তিন ধরনের। তাই দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।”
ডিজাইন বাই রুবিনার ব্র্যান্ড ম্যানেজার নাজমুল হাসান বলেন, “অনেকেই মনে করেন পাট খুব সস্তা জিনিস, ৫ টাকা ১০ টাকায় পাওয়া যাবে। ক্রেতাদের এমন ভুল ধারণা থেকে বের হতে সাহায্য করবে বিকল্প পণ্য মেলা। তবে চাহিদা বাড়লে পাটের ব্যাগের দামও কমবে।”
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) এর পৃষ্ঠপোষকতায় মেলায় অংশ নিয়েছে বিডি জেপিএমইএ নামে পাট পণ্য উৎপাদনকারীদের সমিতি।
এর সদস্য মেহেদি হাসান বলেন, “হঠাৎ পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধের পর ১২০ টাকা গজের পাটের কাপড়ের একটি ব্যাগের বুননে কিছুটা পরিবর্তন করে তা ৭৫ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এই ব্যাগটির বুনন ঘন হওয়ায় মাছ, মুরগির মতো খাবার বহনে ২ ঘণ্টায় রক্ত বা পানি খুব বেশি ঝরবে না।”
ব্যাগের আকার, লোগো ব্যবহার, বুনন, অর্ডারের সংখ্যা ইত্যাদির উপরেও সামনে দাম নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ডিসেম্বরের মধ্যে সচিবালয় প্লাস্টিক মুক্ত
সকালে বিকল্প পণ্য সামগ্রীর মেলা উদ্বোধন করে স্টল ঘুরে দেখেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সেখানে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্যও দেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “পলিথিন বর্জনের কার্যক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। শপিং সেন্টার ও দোকান মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সচিবালয়কেও প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হবে।”
পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার কোনোভাবেই সরে যাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
সেমিনারে পলিথিনের ক্ষতি এবং বিকল্প পণ্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ, পরিচালক রাজিনারা বেগম, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুর রহমান ভূঁইয়া।