পলিথিন যে নিষিদ্ধ, সেটাই ‘ভুলেছে’ মানুষ

২০০২ সালে নিষিদ্ধ করলেও তার প্রভাব নেই। দেশে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ উৎপাদন হচ্ছে, তবে পুরোটাই রপ্তানি হচ্ছে পশ্চিমা দেশে। পাটের পলি ব্যাগ সোনালি এখনও স্বপ্নই দেখাচ্ছে।

আবুল বাসার সাজ্জাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2024, 07:28 PM
Updated : 25 Feb 2024, 07:28 PM

পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রায় দুই যুগ পর বাজারে গেলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কার্যক্ষমতা আর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক এ কারণে যে, নিষিদ্ধ হওয়ার আগে ও পরের সময়ে আসলে কোনো পার্থক্য নেই।

পলিথিন যে আসলে অবৈধ, সেটি বোঝার কোনো উপায় নেই। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে হাতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ব্যাগটি। পাইকারি আর খুচরা দোকানগুলো প্রকাশ্যেই, কারখানাগুলোও গোপন না।

নিষিদ্ধ করে তাহলে লাভ কাদের হয়েছে? এক কারখানা মালিকের কথায় বোঝা গেল কিছুটা। তিনি বললেন, তার কারখানায় কেউ বাধা দেয় না। মাঝেমধ্যে সরকারি লোকজন সেখানে যায় টাকা নিতে।

পরিস্থিতি এমন যে, বাজারে আসা ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ। এই ব্যাগের বিপত্তির কথা তারা জানেন না এমন নয়, কিন্তু ব্যাগের সংখ্যা কম রাখার ক্ষেত্রেও দেখা যায় না সচেতনতা।

নতুন পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী তার ১০০ দিনের অগ্রাধিকারের যে তালিকা করেছেন, তাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি ২০২৬ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য ঠিক করেছেন। এ জন্য সচেতনতা গড়ার পাশাপাশি বিকল্প পণ্য আনতে চান। আটকে যাওয়া পাটের পলিথিনও বাজারে আনতে চান।

পাটের না হলেও বিকল্প এক ধরনের ব্যাগ কিন্তু দেশে উৎপাদন হচ্ছে। তবে তার দাম সাধারণ পলিথিনের তুলনায় কিছুটা বেশি আর সেগুলোর প্রায় সবই রপ্তানি হচ্ছে পশ্চিমা দেশে।

পলিথিনে নিষেধাজ্ঞা জানেন না ‘তারা’

২০০২ সালে পলিব্যাগ নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়।

এতে বলা হয়, “পলিথিনের শপিং ব্যাগ বা অন্য যে কোনো সামগ্রী, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সেসব উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, পরিবহন ইত্যাদি নিষিদ্ধ।”

তবে ২২ বছর পর বাস্তবতা কী, তা সবাই দেখছে নিত্যদিন। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় যখন ড্রেনের পানি আটকে যায়, তখন পলিথিন নিয়ে কথা উঠে, বর্ষা শেষে আবার সবাই যেন ‘ভুলে যায়’ তা।

রাজধানীর কৃষি মার্কেট বাজার থেকে দেড় কেজি রুই মাছ ও আধা কেজি ছোট মাছ কিনে রাহেলা বেগম দুই জাতের মাছ নিলেন আলাদা পলিথিন ব্যাগে। এরপর মাছসহ সেই দুটি ব্যাগ আবার ভরলেন বড় আরেকটি পলিথিনে।

পরে তিনি কিনলেন পেঁয়াজ, মরিচ, নানা জাতের শাক-সবজি। সব নিলেন আলাদা পলিথিন ব্যাগে। খালি হাতে বাজারে এসে সব মিলিয়ে তিনি ফিরলেন আটটি ব্যাগ নিয়ে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ফ্রিজে মাছ-মাংস রাখতে গেলে পলিথিন ছাড়া কীভাবে সম্ভব? আর বাজার থেকে ভেজা যে কোনো কিছু আনতে পলিথিনের বিকল্প কিছু আছে?”

অপচনশীল পলিথিন ব্যাগের বিপদ রাহেলা জানেন না এমন নয়। তিনি নিজেই বলছিলেন, “অল্প বৃষ্টিতেই ড্রেন আটকে রাস্তায় পানি উঠার মূল কারণ এই পলিথিন। পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি করে।”

তাহলে ব্যাগ তো কিছু কম নিতে পারতেন- এই প্রশ্নে পাল্টে গেল বক্তব্য। তিনি বললেন, “এটা (পলিথিন) এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সহজে ব্যবহারযোগ্য এটাই। সরকারের পলিথিনের বিকল্প কিছু বের করে পলিথিন নিষিদ্ধ করা উচিত।”

পলিথিন যে নিষিদ্ধ, সেই তথ্যটাই জানা নেই রাহেলার।

আরেক ক্রেতা আনিসুর রহমান একই বাজার থেকে দুটি মুরগি কিনে প্রতিটি মুরগি ভরলেন দুটি করে পলিথিনে, ব্যাগ সংখ্যা দাঁড়াল চারে। সেই চারটি ব্যাগ আবার ঢুকালেন আরো বড় আকারের আরেকটি পলিথিনে।

তিনি পোলাউয়ের চাল কিনলেন দেড় কেজি। দোকানি তা দিলেন দুটি পলিথিনে।

এরপর কাঁচা বাজারে গিয়ে এক কেজি করে শসা, বেগুন ও টমেটো কিনলেন আলাদা ব্যাগে। পরে সেগুলোর জন্য নিলেন আরেকটি বড় পলিথিন। সব মিলিয়ে ব্যাগের সংখ্যা দাঁড়াল ১১তে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আনিসুর বলেন, “আমরা তো চাই না পরিবেশ নষ্ট হয়। কিন্তু বাধ্য হয়েই তো নিতে হয়। সরকারের শুধু নিষিদ্ধ করলেই হবে না, বিকল্প বের করতে হবে।”

অর্থাৎ রাহেলার মতো আনিসুরও জানেন না পলিথিন নিষিদ্ধের কথা।

ব্যবহার কত

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা জসিম বলেন, “আমার একদিনে এক কেজির কাছাকাছি লাগে। কৃষি মার্কেটে প্রায় ৪০০ এর মত দোকান আছে। সে হিসেবে দৈনিক ৪০০ কেজি লাগে।”

এক বাজারেই ঢাকায় দিনে ৪০০ কোজি পলিথিন ব্যবহার হলে গোটা শহরে যে তা টনকে টন, তা বোঝাই যায়। গোটা দেশে কত লাগে, সেই হিসাব কষেনি কেউ।

দুই হাতে বড় বড় পলিথিনের ব্যাগে পণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন রুবেল মিয়া। তিনি নিজেও মুদি দোকানি। দোকানে বিক্রির জন্য পণ্যগুলো কিনেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রুবেল বলেন, “আমাদের কইয়া লাভ নাই। আপনারা রাজনৈতিক লোকদের ধরেন। তারা জড়িত। না হয় পলিথিন ফ্যাক্টরি টিকে কেমনে? পলিথিন আসে কীভাবে বাজারে? আমরা সহজলভ্য হিসেবে ব্যবহার তো করবই।”

এই পলিথিনের সিংহভাগই ফেলা হয় এখানে সেখানে। ম্যানহোল, নালা, খাল, নদীতে পড়ে থাকা ব্যাগগুলো বৃষ্টি হলে বিপত্তি ঘটায়। পানি নামার পথ রুদ্ধ হয়ে থাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতার সমস্যা।

পলিথিন মাটিতে মিশে যেতে সময় লাগে ২০০ থেকে ৪০০ বছর। ফলে এরই মধ্যে মাটিতে বা জলাশয়ে থাকা ব্যাগগুলো পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়েছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদরা বহু বছর ধরেই বলে আসছেন। কিন্তু সরকার কার্যকর কিছুই করছে না।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পলিথিন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। আবার এই পলিথিন পুড়িয়ে দিলে বায়ু দূষণ করে।

“পোড়া অংশ পানি বা মাটিতে মিশলে এখানেও দূষণ করে। ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হলেও এর উপযুক্ত ও বিকল্প কিছু না বের করায় তা আমরা কার্যকর করতে পারি নাই। সেক্ষেত্রে আমাদের আগে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তার চেয়ে সহজলভ্য, সাশ্রয়ী হতে হবে। তাহলে আইন বাস্তবায়ন সম্ভব।”

দোকান, কারখানা প্রকাশ্যেই

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পলিথিনের দোকান মেসার্স মামুন বিজনেস সেন্টারের দোকানি মো. মামুন জানালেন, এই বাজারে আরও ৮টির মত দোকানে পলিথিন বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, “ফ্যাক্টরিওয়ালারা ম্যানেজ করে। তাই তো এত ফ্যাক্টরি চলে। আমরা গরিব ছোট ব্যবসায়ী। আমরা শুধু মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কিনে আনি।”

তিনি চকবাজার থেকে পাইকারিতে পলিথিন কিনে আনেন কেজিপ্রতি ২০০ টাকার কমে, বেচেন ২২০ করে।

কারখানা কোথায়?- কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজারে বিক্রেতাদের বেশিরভাগ বললেন পুরান ঢাকার গুদারাঘাট ও ইসলামবাগের কথা।

চকবাজারের পূর্ব ইসলামবাগের মাওড়ার টেকে (৪৭/ডি) গেলে অসংখ্য ছোট ছোট গলি চোখে পড়ে। যে কোনো গলি দিয়ে ঢুকলেই দেখা যায় বিভিন্ন বাসার নিচ তলায় পলিথিনের কারখানা। কেউ রাখঢাকও রাখছে না। তবে কোনো কারখানার সামনে সাইনবোর্ড নেই।

ক্রেতা সেজে একটি কারখানায় ঢোকার পর এর মালিক সবুজ মিয়া পুরান ঢাকার টানে বললেন, “পলিথিন বেচা হয় গিয়া বস্তা হিসাবে। এক বস্তায় ২৫ কেজি, দাম বত্রিশশো টাকা। মান আরেকটু ভালো হইলে ছত্রিশশো।”

কারখানা থেকে ফিরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিচয়ে সবুজ মিয়ার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, “আপনি যে কারখানা চালান, সরকারের কেউ বাধা দেয় না?”

জবাব আসে, “বাধা দিব কে? সরকারি লোক আহে, টাকা নিয়া যায় গা।”

কারা টাকা নেয়, এসব বিষয়ে প্রশ্ন শেষ করার আগেই ফোন কেটে দেন সবুজ।

এই এলাকায় ব্রাদার্স মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী মো. আনিসুর রহমান বলেন, “আমরা দেখি মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট আসে, জরিমানা করে, সিলগালা করে আবার সব পলিথিন নিয়ে চলেও যায়। তবুও তাদের থেমে থাকে না পলিথিন উৎপাদন।”

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। সারা দেশেই এই অভিযান চলছে।”

ব্যবহার বেড়েছে মানছেন মন্ত্রীও

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের দোকানি মেসার্স সততা স্টোরের দোকানি জসিম জামাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাগজের ঠোঙা আছে, কিন্তু এটাতে চাল দিলে তো ছিড়ে পড়ে যাবে। আর পানিতে ভিলেই সব নষ্ট হয়ে যাবে। আর ক্রেতারাও পলিথিন ছাড়া নিতে চায় না।”

পাশের দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, “পলিথিন নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের খুব বেশি আগ্রহ নাই। যদি থাকত তবে অবশ্যই এর বিকল্প কিছু বাজারে আনা হত।

“৭ থেকে ৮ বছর আগে ম্যাজিস্ট্রেট আসতে দেখতাম বাজারে পলিথিন বন্ধ করতে। এখন আসে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য।”

গাজীপুরের জয়দেবপুরের হাবিব টি স্টোরের দোকানি জাকির হোসেন বলেন, “আমি নিজেও জিনিসপত্র পলিথিনে দিতে পছন্দ করি না। কিন্তু পাবলিকের চাহিদার কারণে দিতে বাধ্য হই।

“আমি একবার নেট আনছিলাম, কিন্তু মানুষ দেখি খালি পলিথিন খুঁজে। যদি বিকল্প কিছু বের হয় আমি সেটা ছাড়া এই পলিথিন আনব না। আর এ ব্যাপারে মানুষ এত সচেতন না, প্রশাসনও অভিযান করে না। তাই যার যার ইচ্ছে মত বেচাকেনা ও ব্যবহার করে, এটা সত্য।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “এটা (পলিথিন) অবশ্যই একটা সমস্যা। আইন আছে, তারপরেও এটার ব্যবহার তো আরও বেড়ে গেছে। আমাদের এখন প্রায়োরিটি হচ্ছে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক। ২০২৬ সালের মধ্যে এটার ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার।”

কারখানায় বন্ধে নতুন কী পদক্ষেপ নেবেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “শুধু ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিলেই হবে না। সেটা আমরা করব। তার পাশাপাশি বিকল্পও নিশ্চিত করব। মানুষকে সচেতন করার বিষয়ও আছে। একটা সময় তো প্লাস্টিক ছাড়াও আমাদের জীবন চলেছে। কাজেই এখন চলবে না, এটা হয়ত অনেকের ধারণা নাই। সুতরাং এটার জন্য প্রচার দরকার। এবং সেটা আমরা করব। এটা আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে।”

বিকল্প ব্যাগ উৎপাদন হলেও পুরোটাই রপ্তানি

পলিথিনের বিকল্প এক ধরনের ব্যাগের উৎপাদন চলছে বাংলাদেশে। কিন্তু তা দেশের বাজারে নয়, রপ্তানি করা হচ্ছে পশ্চিমা দেশে।

পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কাসাভা নামের এক ধরনের ফসলের খোসা ব্যবহার করে ব্যাগ তৈরি শুরু হয়।

পরের বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি যন্ত্র এনে চট্টগ্রামের হালিশহরে কারখানা স্থাপন করে ইকোস্পিয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

এর প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রায়হান জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার একটি কারখানা রয়েছে। যেখানে কাসাভা, ভুট্টা ও পিবিএটি (বায়োম্যাটেরিয়াল) ব্যবহার করে প্রতিমাসে ৩৫ থেকে ৪০ টনের বেশি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরি করার সক্ষমতা আছে।

কাসাভার ব্যাগের দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা। তবে এটির উৎপাদন বন্ধ আছে। ভুট্টা থেকে তৈরি ব্যাগ চার থেকে ৫ টাকা। এটির উৎপাদন চলছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও কানাডায় পরিবেশবান্ধব ব্যাগ রপ্তানি করছে ইকোস্পিয়ার।

মোহাম্মদ রায়হান বলেন, “অতি দ্রুত দেশের বাজারেও আমরা এ ব্যাগ বিক্রি করতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি।”

তিনি বলেন, “সাধারণ প্লাস্টিক যেখানে ২০০ থেকে ৪০০ বছরেও পচে না। সেখানে আমাদের কাসাভা ও ভুট্টা থেকে তৈরি ৩০ মাইক্রনের ব্যাগ ৯০ দিন এবং ৫৫ মাইক্রনের ব্যাগ প্রাকৃতিকভাবে সম্পূর্ণ মাটিতে মিশে যেতে ১৪৭ দিন লাগে।”

তার তথ্য বলছে, আরও চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরিতে কাজ করছে। তবে সরকারের লিখিত অনুমতির জন্য বাজারে পণ্য ছাড়তে পারছে না তারা।

কবে আসবে পাটের সোনালি ব্যাগ

২০১৫ সালে পাটের পলিথিন ব্যাগ উদ্ধাবনের কথা জানিয়ে আলোড়ন তোলেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মোবারক আহমেদ। তাকে স্বর্ণপদকও দেয় সরকার।

পাট থেকে সেলুলোজ সংগ্রহ করে তা দিয়ে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়। এটি দেখতে সাধারণ পলিথিনের মতই, তবে তা পচনশীল।

ব্যাগটি বাজারজাত করতে ২০১৮ সালে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। তবে সেই ব্যাগ এখনো বাজারে আনা যায়নি।

ঢাকার ডেমরার শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে সরকারি পাটকল লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছুদিন উৎপাদন চলেছে। ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এই ব্যাগ উৎপাদনের জন্য। ওই টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য কেনা হয়। সেই ব্যাগ শুধু মতিঝিলে বিজেএমসির কার্যালয় থেকে কেনা যায়। এছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসে নমুনা হিসেবে পাঠানো হয়।

বছর দুয়েক আগে মোবারক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে তার ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই ব্যাগ বাজারে আসেনি। 

এই ব্যাগ বাজারে আসতে আর কত সময় লাগবে, এই প্রশ্নে মোবারক আহমাদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারজাতের আগে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সামনে ১০০ কোটি টাকার প্রাক-বাণিজ্যিকীকরণ প্রকল্প নেওয়া হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে একটা উপায় বের করা হবে।

“এখন মিনিটে ৬২টি ব্যাগ বানাতে পারি। প্রোডাকশন লাইনটা আরও বড় করা দরকার। ঢাকা শহরের প্রতিদিন লাগে পাঁচশ টন।”

পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোনালি ব্যাগের বিষয়টা নিয়ে আগে থেকেই অবগত আছি। আমি যখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ছিলাম, তখনই বলেছিলাম, এটাকে আরও সাপোর্ট দেওয়া উচিত। তবে এটার সর্বশেষ কী আছে আমরা দেখব।”

এই ব্যাগের দাম কেমন হবে -এই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “বিকল্পটাকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য দাম তো একটা বড় বিষয়। সে বিষয়টাও আমাদের দেখতে হবে। দামটা বর্তমানে ব্যবহার করা প্লাস্টিক ব্যাগের চেয়ে যদি একটু কম রাখা যায়, তাহলে ভালো হয়। তবে এখনো আমরা বিস্তারিত হিসাবটা করিনি।

আরো পড়ুন

Also Read: দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ১০০ দিনে যা যা করতে চায়

Also Read: বছরে তৈরি হচ্ছে ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, পরিবেশে মিশছে ৬০%

Also Read: রাজধানীতে ৬ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, জরিমানা লক্ষাধিক টাকা

Also Read: নিষিদ্ধ হল মার্কিন ফার্মেসি চেইনের নজরদারি ব্যবস্থা

Also Read: নিষিদ্ধ হল মার্কিন ফার্মেসি চেইনের নজরদারি ব্যবস্থা

Also Read: হাতিরঝিলে এখন দম নেওয়া দায়

Also Read: পরিচ্ছন্ন নগরী এখনও যেন স্বপ্ন