Published : 20 Dec 2023, 05:33 PM
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফার্মাসি চেইন ‘রাইট এইড’-এর যে কোনো ধরনের ‘ফেইশল রিকগনিশন’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহারের ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)’।
এর আগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ‘চেহারা নজরদারি ব্যবস্থার বেপরোয়া ব্যবহার’ চালানোর অভিযোগ তোলে সংস্থাটি। আর এ অভিযোগ নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত এল।
ওই অভিযোগে এফটিসি বলেছে, ফার্মাসি চেইনটি ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ‘শপলিফট’ (দোকান থেকে চুরি) ও অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত গ্রাহকদের শনাক্ত করতে এআই চালিত ফেইশল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে।
এর মাধ্যমে কোম্পানিটি লাখ লাখ গ্রাহকের ‘ছবি, নাম, জন্ম তারিখ, সম্ভাব্য অপরাধের’ ডেটাবেজ বানিয়েছে। তবে, বিভিন্ন সিকিউরিটি ক্যামেরা, কর্মীদের ফোন ও সংবাদ নিবন্ধ থেকে ছবিগুলো নেওয়ায় সেগুলোর মান খুবই বাজে। এর ফলে, বেশ কয়েক হাজারবার ভুল সতর্কবার্তাও দিয়েছে সিস্টেমটি।
এফটিসি’র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ব্যুরো অফ কনসিউমার প্রোটেকশন’-এর পরিচালক স্যামুয়েল লিভাইন বলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করায় রাইট এইডের গ্রাহকরা হয়রানির পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতির মুখেও পড়েছেন। এ ছাড়া, স্টোরে ‘ফ্ল্যাগ করা’ গ্রাহকদের পিছু নিতেও দেখা গেছে কোম্পানির কর্মীদের। এমনকি গ্রাহকদের পরিবার ও বন্ধুদের সামনে ভুল অভিযোগ তোলার পাশপাশি কখনও কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেও তাদের হয়রানি করার কথা উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে।
এদিকে, কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় কমিউনিটিকে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এ সিস্টেম। ২০২০ সালে রয়টার্সের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিংহভাগ ঘটনাই ‘স্বল্প আয়ের, অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিদের’ লক্ষ্য করে।
এফটিসি অভিযোগে বলেছে, এ প্রযুক্তি ও রাইট এইডের এমন ব্যর্থতার জন্য গ্রাহকদের গুরুতর আহত হতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে, কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়, লাতিন ও নারী গ্রাহকদের।
নতুন আদেশে চেহারা নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি রাইট এইডের সংগৃহিত ছবি মুছে ফেলার, ডেটাবেজে নিবন্ধিত গ্রাহকদের বিষয়টি অবগত করার ও ফেইশল রিকগনিশন ও বায়োমেট্রিক নজরদারির মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে নোটিশ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া, সংগৃহিত তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি সঠিক ডেটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালুর শর্তও দেওয়া হয়েছে কোম্পানিটিকে, যেটির মূল্যায়ন করবে থার্ড পার্টি।
প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি যেহেতু এখন দেউলিয়াত্বের সঙ্গে লড়ছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া আদালতের অনুমোদন পাওয়ার পরই আদেশটি কার্যকর হবে।
অন্যদিকে, রাইট এইড বলেছে, তারা এফটিসি’র অভিযোগের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত নয়। আর তারা বেশ কয়েক বছর আগেই এ নজরদারি প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করেছে।
“এফটিসি’র সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আর এ বিষয়টি ভুলে সামনের দিকে এগোতে চাই আমরা।” --এক বিবৃতিতে বলেছে রাইট এইড।
“এফটিসি’র তদন্তকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তাদের গ্রাহক প্রাইভেসি সুরক্ষা নিশ্চিত করার মিশনের সঙ্গেও আমরা একমত। তবে, সংস্থাটির ফেইশল রিকগনিশন সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলোর সঙ্গে আমরা নীতিগতভাবে একমত নয়। কারণ, সেগুলো হাতে গোনা কয়েকটি স্টোরেই বসানো হয়েছিল। তবে, সেটিও তিন বছর আগে এফটিসি’র তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই বন্ধ করেছে রাইট এইড।”
“বিভিন্ন কমিউনিটিকে নিরাপদে ও সঠিকভাবে সেবা দেওয়া দীর্ঘদিন ধরেই রাইট এইডের মিশন ছিল। আর ভবিষতেও থাকবে। আমাদের সহযোগী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এফটিসি’র সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি এর নীতিমালা নিয়েও পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করব।”