বছরে তৈরি হচ্ছে ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, পরিবেশে মিশছে ৬০%

নদী ও পরিবেশে মেশা বর্জ্য মাছ ও প্রাণীর শরীরে ঢুকে মানুষের জীবনচক্রে চলে আসছে। সরকার এমন বিধান করতে যাচ্ছে, যাতে যারা বর্জ্য উৎপাদন করবে তারাই উৎস থেকে সেটি ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 09:18 AM
Updated : 4 June 2023, 09:18 AM

করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিচ্ছন্নতা সামগ্রীর কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে বছরে এখন ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ২৮ হাজার টনের মত রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহার হয়। বাকি বর্জ্য পরিবেশে পড়ে থাকে।

সারাদেশের যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার ৩০ শতাংশের বেশি হয় রাজধানী ঢাকায়। দেশের প্রধান শহরটিতে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টন, অর্থাৎ দিনে ৬৮১ টনের মত বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সারা দেশে এর পরিমাণ ২ হাজার ২৫০ টন।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের মানুষ বছরে মাথাপিছু ৯ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন করলেও রাজধানীতে এটি দ্বিগুণ বা ১৮ কেজি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি জানাতে এসে রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ।

তিনি জানান, সরকার এমন একটি বিধান করতে যাচ্ছে, যাতে যারা বর্জ্য উৎপাদন করবে তারাই উৎস থেকে সেটি ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

সচিব বলেন, দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের ৬০ শতাংশ রাস্তাঘাট ও নদীতে যাচ্ছে। মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে ঢুকে সেগুলো মানুষের জীবনচক্র ও শরীরে চলে আসছে।

এ থেকে উত্তরণের উপায় কী, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্লাস্টিকের উৎপাদন নিষিদ্ধ করা আছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকদের চাহিদা থাকবে ও তারা সচেতন না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এটা চলতে থাকবে। নাগরিকদের আমরা বিকল্প ব্যবহার সামগ্রী দিতে সফট লোন ও বিভিন্ন সুবিধা দিতে এনবিআরসহ বিভিন্ন জায়গায় কথা বলছি।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, “পলিথিন বন্ধে আমরা আইন করেছি। একবার ব্যবহৃত হয় এমন পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহৃত হয় এমন পাস্টিক বন্ধের পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করছি ২০২৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহার ৮০ শতাংশ কমাতে পারব।”

ঢাকায়ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের চেষ্টায় পাট থেকে ব্যাগ তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু এখনও সেটি বাজারজাত করা যায়নি। আমরা যখন বাজারজাত করতে পারব তখন ঢাকায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে সক্ষম হব।”

বড় বড় শপিংমলে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার না করে ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম নিয়ে কাগজের ব্যাগ দেওয়ার অনুরোধ জানান পরিবেশমন্ত্রী।

হর্নের অপব্যবহার বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”

তাপমাত্রা কমাতে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, “ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কেন বাড়ছে তা নির্ণয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জলাধার ভরাট, অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল, এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম নাকি গাছপালা কমে যাওয়ায় এমন হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।”

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, বেহাত হয়ে যাওয়া ১৮ হাজার একর বনভূমি গত দুই বছরে উদ্ধার করা হয়েছে। এ বছর ৫০ শতাংশের বেশি গাছ উপকূলীয় এলাকায় লাগানো হচ্ছে।

পূর্বাচলে কীভাবে পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো যায় সেই পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিবেশ দিবসে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর ডাক

‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্য এবং ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’ স্লোগানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে।

সোমবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।

সকালেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে হবে পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠান। এতে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২২, পরিবেশ পদক ২০২২, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে।

শেরেবাংলা নগরে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা এবং ৫ থেকে ২৬ জুন ও ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত বৃক্ষমেলা চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

পরিবেশমন্ত্রী জানান, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে নানা অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। জাতীয় সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়াও স্মরণিকা ও বুকলেট প্রকাশ করা হবে।

সব জেলা-উপজেলা ও ঢাকা মহানগরীর এক শটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দিবসটি উদযাপন করা হবে।

শিশু চিত্রাঙ্গন, বিতর্ক ও স্লোগান প্রতিযোগিতা, পরিবেশ বিষয়ক সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে জানান পরিবেশ মন্ত্রী।